Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ভয়ঙ্কর গণধর্ষণের শিকার এক নারীর বর্ণনা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজার, ২৬ অক্টোবর- বেগম (ছদ্মনাম) মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা। ৪ সন্তান ও স্বামী নিয়ে জীবনটা মন্দ কাটছিলো না তার। আচমকা একদিন ওলটপালট হয়ে যায় সুখের সংসার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো জাতি নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন এই রোহিঙ্গা নারী। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে কিভাবে বেঁচে আছেন তা নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্কস টাইমস। মানবাধিকার সংস্থা কেয়ার-এর জেনিফার বোসের কাছে এই সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় সেই ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন বেগম।

তার চোখেমুখে ভেসে ওঠে সীমাহীন আতঙ্ক আর ক্রোধের ছাপ। কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন তাঁবুতে বসে সাক্ষাৎকারটি দেয়ার সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার আগের তিনটি দিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম দিন। হঠাৎ করে এক রাতে তারা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর আমার চোখ বেঁধে ফেলে। ফলে আমি কিছুই দেখতে পারছিলাম না। এরপর তারা আমাকে অপহরণ করে। নিয়ে যেতে থাকে এক অজানা গন্তব্যে।

এ সময় আমি চিৎকার করতে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। জীবন বাঁচাতে আমি চুপ হয়ে যাই। আমি এখনো জানি না তারা আমার স্বামীকে কি করেছে। জানি না তিনি আদৌ জীবিত আছেন নাকি মৃত! চোখ বাঁধা থাকার কারণে আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা বুঝতে পারি নি। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে, আমার সঙ্গে আরো অনেক মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

দু’ঘণ্টা ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবার সময়ে সামনে-পেছনে আরো অনেক নারীকণ্ঠের কান্না শুনতে পাই আমি। তারপর একটি ঘরে নিয়ে আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। আমি দেখতে পাই, সেখানে আমি ছাড়া আরো ৩০জন নারীকে ধরে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫জনই ছিলো অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকা। এরপর ৩০জনের মতো সেনাসদস্য আমাদের ঘিরে ধরে। নগ্ন করে ফেলা হয় প্রতিটি নারীকে। এসময় তারা আমাদের দেখে হাসতে থাকে।

১০-১৫জনের একেকটি দল মিলে আমাদের প্রত্যেককে পালাক্রমে গণধর্ষণ করতে থাকে। প্রথমে তারা বাচ্চা মেয়েগুলোকে ধর্ষণ করে। এ সময় কেউ চিৎকার বা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলেই তাকে মেরে নিস্তেজ করে দেয়া হচ্ছিল। ভয়ঙ্কর এই পাশবিক নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে আমাদের অনেকেই মারা যান। যখন সেনারা আমার ওপর চড়াও হতে আসে, আমি তখন হাঁটু গেড়ে বসে তাদের কাছে করজোড়ে মিনতি করতে থাকি আমাকে ছেড়ে দিতে।

উল্টো তারা আমাকে প্রহার শুরু করে। প্রচণ্ড মারের কারণে আমি অচেতন হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে সারা শরীরে বিশেষ করে, শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে প্রচণ্ড ব্যথা টের পাই। বুঝতে পারি আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ব্যথার ভয়াবহতায় আমি বুঝতে পারি যে, একজন দুজন নয়, আমার শরীরটা দলবেঁধে খুবলে খেয়েছে পুরো হায়েনার দল।

দ্বিতীয় দিন তারা আবার আমাদের মাঝে যারা বেঁচে ছিলেন সবাইকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় আমার মাঝে মাঝে মনে হতে থাকে আমি বুঝি মরে যাবো। কিন্তু ফেলে আসা চারটি বাচ্চার নিষপাপ অসহায় মুখের কথা ভাবতেই আমার মনে হয়, যে করেই হোক আমাকে বাঁচতে হবে। শুধু মনের জোরের ওপর ভর করেই সম্ভবত বেঁচে ছিলাম আমি।

তৃতীয় দিন আমরা হঠাৎ খেয়াল করি যে, সৈন্যরা সবাই ঘুমে অচেতন হয়ে আছে। সেই সুযোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ভেতরের ১০জন পালানোর সিদ্ধান্ত নিই। কোনোমতে তাদের নজর এড়িয়ে বের হয়ে আমরা রাস্তা ধরে ছুটতে থাকি। ছুটতে থাকি জীবন হাতে নিয়ে। ছুটতে থাকি আমার বাচ্চাদের কথা ভেবে।

একসময় চেনা রাস্তা ধরে একটি গ্রামে পৌঁছাই, সেখানে আমার কিছু আত্মীয়ের বসবাস। আমি তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাতযাপন করি। আমার দুরবস্থা আর অত্যাচারে জর্জরিত শরীর দেখে আমার স্বজনেরা কাঁদতে থাকেন। আমার তখন নিজের কথা ভাবার সময় ছিল না। আমি তাদের কাছে আমার বাচ্চাদের খোঁজ জানতে চাই। আমার এক আত্মীয় পরদিন সকালে আমার চারটি বাচ্চাকেই খুঁজে নিয়ে আসেন। তাদেরকে জীবিত দেখতে পেয়ে দেহে প্রাণ ফিরে পাই। আমার হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে।

শরীরের বেহাল অবস্থা দেখে আমার বড় সন্তান আমাকে অনুরোধ করে হাসপাতালে যেতে। তার অনুরোধে আমি আমার এক পুরুষ আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে লজ্জায় আমি চিকিৎসকের কাছে ধর্ষণের কথা চেপে যাই। শুধু ব্যথানাশক ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে আবার কিছু অস্ত্রধারী আততায়ী আমাদের ঘিরে ধরে। তারা ঘটনাস্থলেই আমার চোখের সামনে আমার আত্মীয়কে গুলি করে হত্যা করে। তখন আমি বুদ্ধি খাটিয়ে অচেতন হয়ে যাবার ভান করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।

ঈশ্বরের কৃপায় তারা আমাকে এ যাত্রায় ফেলে যায়। তখন বুঝতে পারি যে, এখানে (মিয়ানমারে) আর থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমি বুঝতে পারি পালাতে হবে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। এ যাত্রায় আমার সঙ্গে যুক্ত হয় ওই গ্রামের আরো ৯টি পরিবার। আমরা হাঁটতে থাকি।

পথিমধ্যে দেখতে পাই, এ যাত্রায় শুধু আমরাই নই, যোগ হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ৮ দিন পায়ে হেঁটে অবশেষে আমরা পৌঁছাই বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে। এই দুর্গম যাত্রায় গায়ের কাপড়চোপড় ছাড়া আর কিছুই ছিল না আমাদের কাছে। কখনো কখনো পথের পাশের গ্রামবাসীরা আমাদের দয়া করে একটু খেতে দিলে খাবার জুটতো কপালে। বেশির ভাগ সময় অভুক্ত থাকতে হতো।

দেড় মাস ধরে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে আরো একটি পরিবারের সঙ্গে একত্রে এক তাঁবুতে বসবাস করছি। এখানে আমি নিরাপদ বোধ করছি। বাংলাদেশের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং মানবতাবোধের কাছে আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। যদিও, এখনো আমাদের খাবারের চাহিদা পূর্ণমাত্রায় পূরণ হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই চাল ফুরিয়ে যাচ্ছে, তখন বাচ্চাদেরকে কিছু খেতে দিতে পারছি না। এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো- বাচ্চাদের প্রতিবেলা পেটপুরে খেতে দেয়া। আমি চাই তারা আবার স্কুলে যাক। আমাদের নতুন জীবন শুরু হোক।

মিয়ানমারের পরিকল্পিত জাতিগত নিধনের নৃশংসতায় এমন হতভাগ্যের শিকার শুধু বেগম একা নন, জানা গেছে আরো ৪ লাখ নারী কোনো না কোনোভাবে ধর্ষণ কিংবা শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তথ্যসূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন