ভূমি বিরোধ চাঙ্গা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে

22

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

২০৮ নং মানিকছড়ি মৌজার মৃত জুল হোসেনের ৫ একর তৃতীয় শ্রেনীর কবলিয়তভুক্ত ভুমি দীর্ঘ ৩২ বছর ভোগদখল করছেন তার ছেলে মো. আবুল হোসেন। সম্প্রতি বক্রীপাড়ার মৃত-সরঞ্জয় চাকমার ছেলে ইতুক্কা চাকমা এই ভুমি নিজের বলে দাবি করেন। বিষয়টি মানিকছড়ি সাব-জোনকে অবহিত করা হলে গত ১ জুলাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, কাবারী ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন সেনাবাহিনী। বৈঠকে ইতুক্কা চাকমা উক্ত ভুমির বৈধ কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারেননি। ভবিষ্যতে তিনি এই ভুমিতে অনাধিকার প্রবেশ করিবেন না মর্মে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অঙ্গিকার প্রদান করেন।

শুধু একা আবুল হোসেন নয় এমন অভিযোগ গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী দু’ শতাধিক পরিবারের। যারা বিরাজমান পরিস্থিতির জন্য যুগের পর যুগ গুচ্ছগ্রামে বন্দী দশায় দিনাতিপাত করছেন। সম্প্রতি মানিকছড়ির বক্রিপাড়া, মনাধন পাড়া, গবামারা, ওয়াকছড়ি, হাফছড়িতে বাঙ্গালীদের পরিত্যক্ত ভূমি জবরদখলকে কেন্দ্র করে কতিপয় ধর্মীয় ভান্তে মন্দির নির্মাণের নামে শত শত একর ভূমিতে ঘর তৈরি ও বাগান সৃজন অব্যাহত রেখেছেন। যার ফলে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশংকা দেখা দিয়েছে।

44

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ির দূর্গম এলাকা বক্রিপাড়া, মনাধন পাড়া, গবামারা, ওয়াকছড়ি, হাফছড়ি এলাকা ১৯৮৩-৮৪ সালে বসবাসরত প্রায় ২শ বাঙ্গালী পরিবারের বসত ভূমি রয়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার তাদের গচ্ছাবিল, হাতিমুড়া ও মানিকছড়ি গুচ্ছগ্রামে সরিয়ে নিলে বাঙালীদের এসব জমি উপজাতীয়রা দখর করে নেয়। ফলে বাঙালীদের কাছে ওসব ভূমি এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু উপজাতীয়রা কোনো প্রকার দলিল ছাড়াই এসব জমি বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করেছে। তেমিনি একজন ক্রেতা ভান্তে বোধি রত্ন ভিক্ষু। কোনো প্রকার দলিল ছাড়াই উপজাতীয়দের নিকট থেকে জমি ক্রয় করে তাতে ধর্মীয় কিয়াং নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ভান্তে বোধি রত্ন ভিক্ষু স্থানীয় কোনো ভিক্ষু নয়। রাউজান থেকে তিনি এসেছেন। তিনি কোন কিয়াঙের ভান্তে নিরাপত্তাবাহিনীর এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি স্থানীয় ভান্তেরা। কিন্তু ভূমি দখলের জন্য তিনি বেছে নেন সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির অবরোধের দিনটিকে। অবরোধ উপলক্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর নজর ও ব্যস্ততা অবরোধ প্রতিহতের দিকে ছিল। এই সুযোগে সকালে দুই শতাধিক উপজাতীয় সমর্থক নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং দ্রুত একটি অস্থায়ী কিয়াং নির্মাণের চেষ্টা করেন।

 

33

সম্প্রতি একটি বিশেষ মহলের ইন্দনে কিছু উপজাতী ব্যক্তি ভূমিগুলো তাদের দাবী করে তাতে মন্দির নির্মাণের নামে ধর্মীয় পতাকা টাংগিয়ে বাগান সৃজন ও ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী একাধিকবার সরজমিনে গিয়ে এসব জায়গা কেউ দখল মুক্ত রাখতে নির্দেশ দেন। এসব এলাকায় কোন বাঙ্গালী বসবাস না করার সুযোগে প্রতিনিয়ত উপজাতিরা নতুন নতুন ঘর নির্মানের পাশা-পাশি বাগান সৃজন অব্যাহত রাখে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বাগান সৃজন অব্যাহত রাখায় বাঙ্গালীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৪ জুলাই শনিবার হঠাৎ একই ভুমি বাঙ্গালী কর্তৃক জবর দখলের অভিযোগে প্রশাসনের অনুমিত ছাড়া মানিকছড়ির ময়ুরখীল (ধর্মঘর) এলাকায় উপজাতিরা মানববন্ধন করতে চাইলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ তা পন্ড হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে রবিবার মানিকছড়িতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের ডাক দেয় উপজাতি সংগঠন মানিকছড়ি ভুমি রক্ষা কমিটি। এ ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ পালনের পাশাপাশি গতকাল ৫ মে রবিবার সকাল থেকে বিরোধপূর্ণ এলাকায় আবারো শতাধিক উপজাতি সশস্ত্র প্রহড়ায় জঙ্গল কেটে তাতে ঘর তৈরি করতে দেখা গেছে।

খবর পেয়ে বাঙ্গালীরা সকাল ১১টায় মনাধন পাড়া ও বক্রিপাড়ায় প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পাশের জঙ্গল থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে আতংক সৃষ্টি করছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বোধিরত্ন ভিক্ষু জানান, মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনি এখানে জায়গা ক্রয় করেছেন এবং জঙ্গল কেটে তাতে ঘর তৈরির কাজ করছেন। দূর্গম এ জনপদে র্ধমীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

মানিকছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও গচ্ছাবিল গুচ্ছগ্রামের অধিবাসী মো. আবুল কালাম জানান, বাঙ্গালীরা গুচ্ছগ্রামে বসবাস করায় তাদের নিজস্ব ভূমি পরিত্যক্ত রয়েছে। এ সুযোগে উপজাতীরা জায়গাগুলো বাগান সৃজনের মাধ্যমে দখল করার চেষ্টা করছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠ তদন্তের দাবী করেন।

এদিকে রবিবার সকালে বিরোধপূর্ণ ভুমি পরিদর্শন করেন খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান, রামগড় সার্কেল এ.এস.পি মো. ইউনুছ আলী মিয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, ইউএনও যুথিকা সরকার, মানিকছড়ি সাবজোন কমান্ডার মেজর ইশতিয়াক আহাম্মেদ, সাংবাদিক মো. মাঈন উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় তারা সকলকে দ্রুত বিরোধ মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানান।

দৃষ্টি আকর্ষণ মানিকছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার যুথিকা সরকার বলেন, বিরোধপূর্ণ ভূমির রেকর্ডপত্র যাচাই-বাচাই পূর্বক মালিকানা নির্ধারণ করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন। অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে এসব ভূমিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহলের মত, সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা হয়ে থেকে অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়ে সংগঠনটি। সেখান থেকে সংগঠনটিকে বের করে আনার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে জটিল ভূমি ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে সংগঠনটি। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিতর্কিত, নিষ্ক্রিয় করা; দৃষ্টি ও প্রাধিকার পাল্টে দেয়া ও নিজ দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছে সংগঠনটি।

কাজেই উপজেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে কোনো শৈথিল্য না দেখিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটি প্রত্যাশা সচেতন মহলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment
আরও পড়ুন