ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে দ্রুত পাশ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ খান মেনন
স্টাফ রিপোর্টার:
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন-২০১৬ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে দ্রুত পাশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র ব্যোধিপ্রিয় লারমা বলেছেন, ‘আদিবাসীরা হারিয়ে যাচ্ছে, আর আদিবাসীদের এই করুণ অবস্থার জন্য শাসক গোষ্ঠী দায়ী’।
আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ‘উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী সংলাপ’ অনুষ্ঠানের দুই অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা এ কথা বলেন।
আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার দিনব্যাপী এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপটিকে দু‘টি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা। দ্বিতীয় পর্বের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বেসাময়িক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।
সংলাপের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘৯৭ সাল থেকে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় পার হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ এর সংশোধনী আইন-২০১৬ গত ৭ বছর ধরে অনেক টানা পোড়েনের মধ্য দিয়ে চলে আসছিল। গত ১ আগস্ট মন্ত্রী সভায় অনুমোদন হয়েছে। এই সংশোধনী রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হিসেবে দ্রুত তৈরী করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমান সরকার আদিবাসীদের ভূমি আইনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ’।
তিনি বলেন, ‘আদিবাসীদের মাতৃভাষা প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তকে স্থান পাচ্ছে। যা আগামী বছর থেকে প্রাইমারী সকল শিক্ষার্থীরা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্লাশেও এই ভাষার ব্যবহার চালু হবে’ বলে তিনি জানান।
সমতল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিষয় রাশেদ খান বলেন, ‘আদিবাসীরা শুধু ভূমি দস্যুদের মাধ্যমেই নয় তাদেরকে রাষ্ট্রিয়ভাবেও নানা কারণে আমরা তাদের ভূমি কেড়ে নিচ্ছি। অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য অনেক জমি আছে, তা বাদ দিয়ে আমাদেরকে কেন আদিবাসীদের জমি নিতে হবে তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। আদিবাসীদের জমির উপর যে অধিকার সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে’। তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সবার অংশ গ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ফজলে হোসেন বাদশা এমপি‘র সভাপতিত্বে সংলাপে আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককায়ের টেকনোক্র্যাট সদস্য রবীন্দ্রনাথ সরেন, রনজিৎ সিং, নিরোলা তিনসং, ইউজিন নকরেক ও ফিলিমান বাস্কে স্বপন সাঁওতাল।
প্রথম পর্বের প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। আজ আদিবাসী হারিয়ে যাচ্ছে না, হারিয়ে গেছে। আর আদিবাসীদের এই করুণ অবস্থার জন্য শাসক গোষ্ঠী দায়ী। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক কি না তা সন্দেহের উদ্রেক করে। যদি সরকার সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক হতো তা হলে, দেশের সমাজ ব্যবস্থা, জাতি বিভাজন, অর্থনৈতিক বৈষম্যতা থাকতো না। সরকার গণতান্ত্রিক হলে আজ আদিবাসীরা নির্যাতিত কেন?’ পাহাড়ীদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের দিকে লক্ষ্য রেখে সন্তু লারমা বলেন, দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশের আমলের ৪৫ বছর পার হলেও আমি নিজেকে কখনো এদেশের নাগরিক ভাবতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও আমাদের পরাধীনতার মধ্যে রাখা হয়েছে। এখনো পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর শাসন চলছে। এই সেনাবাহিনীর শাসন চললেও সংসদে এক দিনের জন্য হলেও কোন ধরণের আলোচনা হলো না। কেন সংসদে সেনা শাসন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না তা আমরা জানতে চাই’।
জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষৎ অন্ধকার। এই সরকার আমাদের মানুষ হিসেবে দেখে না। আমরা আজ সবকিছু থেকে বঞ্চিত। এমন ভাব ধারার সরকারের কাছে আদিবাসীরা কোন কিছুর আশা করতে পারে না’।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘আমরা বাঁচতে চাই। আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়’।
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, দি ডেইলি অবজারভারের সহযোগী সম্পাদক বদরুল আহসান, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. ঈশাণী চক্রবর্তী। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এবং অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যোট সদস্য সঞ্জীব দ্রং।