ভালবাসা দিবসে ভরে উঠবে পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলো

10994821_771817552912534_297918239_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

ভালোবাসা কখনো বলে-কয়ে আসেনা। ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয় আস্থা বিশ্বাস আর আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে। আর তাই ভালোবাসার এ বিশেষ দিনটিও ভিন্ন মেজাজের। এ দিন সবাই তার ভালোবাসার মানুষকে সবচেয়ে কাছে পেতে চায়। এ চাওয়ার মধ্যে নেই কোন পাপ বা অপরাধ। শুধু একটু কাছে পাওয়ার আবেগ ভালোবাসাকে আরো আবেগময় করে তুলতে পারে। সম্পর্ককে গভীর থেকে গভীরতায় পৌছে দিতে পারে।

বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ। সর্বত্র যখন বিশ্ব ভালোবাসার জ্বরে কাপছে তখন পিছিয়ে নেই পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়িও। এখানেও ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কিছু করার তাগিদ উঁকি দেয় মানুষের মনে। ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যারা এ দিন নিজেরদের মতো করে সময় পার করতে চান, তারা যেতে পারেন আপনার শহরের কাছাকাছি কোন জায়গায়। সুন্দর জায়গায় প্রিয়জনের সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো আপনার জীবনের ফ্রেমে বন্দি একদিন আপনার ভালোবাসার স্বার্থকতা আসবে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র

পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ি শহরের কোলাহলকে ছাড়িয়ে দেশের অগনিত পর্যটকদের নিজের সৌন্দর্য্য বিলিয়ে যাচ্ছে জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। প্রায় হাজার ফুট উঁচু এ ভূ-নন্দন বিন্দুটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নবোর্ড‘র উদ্যোগে করা হয়েছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, বিশ্রােেমর জন্য পাকা ছাউনি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এখান থেকেই উপভোগ করা যায় ছোট্ট এ জেলা শহরের ছোটখাট ভবন, চেঙ্গী নদীর প্রবাহ ও আকাশের আল্পনা মনকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে তোলে। চোখে পড়ে ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে সর্পিল রাস্তা।

নানা প্রজাতির গাছ আর গা ছমছম করা রহস্যময় সুরঙ্গ এখানকার মানুষের প্রিয় ঠিকানা। পাহাড়ের চূঁড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেঁয়ে নীচে নামলেই সেই স্বপ্নীল গুহামুখ। প্রায় ২৮২ ফুট দীর্ঘ এ রহস্যময় সুরঙ্গ আপনার ভালোবাসাকে স্মরনীয় করে রাখবে। নানা দিকে প্রসারিত হওয়া এ পর্যটন স্পটটির ভেতর আঁকাবাকা-উচনিচু পথ ধরে প্রিয় মানুষের সঙ্গে হেঁটে চলার অনুভুতি হতে পারে অন্যরকম। ছোট ছোট পাখির কলতান ও বৃক্ষরাজির সুনিবিড় ছায়াতলে প্রেমিক জুগলের নিদারুন সময় কাটবে। ভালোবাসা দিবসের এ দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে আপনার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।

পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক হতে পারে আপনার প্রিয়জনের সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নেয়ার এক অন্যতম স্পট। দিনটি স্মরনীয় করে রাখতে সেখানেই আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তত রয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজসহ নানা স্তাপনা। পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কের অপার সৌন্দর্য্য আপনার ভালোবাসাকে আরো বেশীসৌন্দর্য্যমন্ডিত করবে। সাড়ি সাড়ি বৃক্ষারাজির সুনিবিড় ছায়াতলে প্রিয়মানুষের সাথে পাশাপাশি হাটার এক অনিন্দ্য সুন্দর জায়গা হতে পারে পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক।

রিছাং ঝর্ণা 

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ও রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দুরেই রয়েছে রিছাং নামক পাহাড়ি ঝর্ণা। শিরশির ছন্দে হিম শীতল ঝরণার বহমান স্বচ্ছ পানি যে কাউকেই কাছে টানবে খুব সহজেই। মুল সড়ক থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে স্বপ্নের রিছাং ঝর্নায়। মনের মানুষের সাথে ভালোবাসাময় সময় কাটাতে রিছাং ঝর্ণা হতে পারে অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বিশেষ এ দিনে ঘুরে আসতে পারেন সেই মনোরম রিছাং ঝর্ণা।

দেবতা পুকুর 

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেঁষে মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজায় অবস্থিত সমতল ভুমি হতে প্রায় সাত’শ ফুট উপরে পাহাড়ের চূঁড়ায় দেবতা পুকুর রূপকথার দেবতার আর্শিবাদের মতোই সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার। পুকুরের চারিদিকে ঘন সবুজ বনরাজি যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেবতার নিজ হাতে গড়া দেবতা পুকুর।

হেরিটেজ পার্ক 

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খুব কাছাকাছি চেঙ্গী নদীর কোলে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত হেরিটেজ পার্ক হতে পারে বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। সেখানকার স্বর্পিল সড়কে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানোর অনুভুতি হতে পারে আপনার ভালোবাসার জীবনে বড় পাওয়া। প্রকৃতি যেন ক্ষনে ক্ষনে রং বদলায় তেমনি আপনিও ভালোবাসার মানুষের সাথে হতে পারেন রঙ্গীন।

রামগড় চা বাগান

জেলাশহর থেকে অনেক দুরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের জন্মস্থান খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশ দ্বার খাগড়াছড়ি-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে নয়নাভিরাম বিশাল চা বাগান। যা ভালোবাসা দিবসে আপনার বাড়তি আনন্দের সুযোগ তৈরী করে দিতে পারে। চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে আপনারা হয়ে উঠতে পারেন দেশ সেরা প্রেমিকযুগল।

রামগড় চা বাগানের অনতিদুরে উপজেলা পরিষদের সম্মুখভাগে প্রায় ২৫০ মিটার লম্বা হ্রদ আর হ্রদের উপর নয়নজুড়ানো ঝুলন্ত সেতু আপনার ভালোবাসা দিবসকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারে। লেকের দু‘পাশের ধীর্ঘ ওয়াকওয়ে আপনার ভালোাবাসার স্বপ্নকেও দীর্ঘায়িত করবে। সেতুর বন্ধনে বাধার সুযোগ করে দেবে নয়নাভিরাম রামগড় লেক।

শতায়ু বর্ষী বটগাছ 

ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের খুব কাছাকাছি বটতলী এলাকায় শতায়ু বর্ষী বটবৃক্ষ। মূল বটগাছটি থেকে মাটিতে নেমে আসা ঢালপালা আপনার প্রিয়জনকে অনেক বেশী বিমোহিত করবে। আর ঢালাপালা থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূলগাছের সাথে যেভাবে সন্তানের মতো আপন মমতায় জড়িয়ে আছে ঠিক তেমনি আপনি অন্যরকম এক ভালোবাসার আবহ সৃষ্টি করতে পারবেন।

সবমিলিয়ে ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের সাথে ভালোবাসা ভাগাভাগি করতে আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়ির সৌর্ন্দয্য। পাহাড়ী জনপদ খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে আরো বেশী সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করবে আপনার ভালোবাসার দুনিয়ায়। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে এ মাটির গন্ধ আপনার ভালোবাসাজুড়ে সৃষ্টি করবে সম্ভাবনা। যার মাধ্যমে সুচিত হবে দুটি হৃদয়ের স্বপ্নমাখা আগামী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন