Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ভাতৃঘাতী নয়, পাহাড়ে চাঁদাবাজীর জন্য আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে- কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

খাগড়াছড়িতে হেডম্যান-কারবারী সম্প্রীতি সম্মেলনে সন্ত্রাসীদের রুখতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
পাহাড় জুড়ে চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে শনিবার খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত হলো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তৃণমুলের নেতৃত্ব হেডম্যান-কারবারী সম্প্রীতি সম্মেলন। এ সম্প্রীতি সম্মেলনে উঠে আসে পাহাড়ে চারটি সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের নিপীড়ন-নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি রক্ষায় এ সব সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে রুখে দাঁড়াতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

“গোষ্ঠী-ধর্ম-বর্ণ খাগড়াছড়ি- নির্বিশেষে দেশ গড়ি, সম্প্রীতির খাগড়াছড়ি” এ শ্লোগানে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় আজ শনিবার স্থানীয় টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয় কাঙ্ক্ষিত সম্প্রীতির সম্মেলন।

সম্মেলনে যোগ দেন পাহাড়িদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারী ৫৯৮ জন হেডম্যান ও ৪৫ জন কারবারী। বর্তমান পরিস্থিতিতে হেডম্যান-কারবারীরা এ সম্মেলনকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় কয়েকটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে প্রতিকার দাবী জানান।

খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান।
বক্তব্য রাখেন, কারবারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রণিক ত্রিপুরা ও হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ প্রীতি চাকমা, হেডম্যান দিকু তালুকদার ও সমাপ্তি চাকমাসহ তৃণমুলের নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অরক্ষিত, অনিয়ন্ত্রিত। সাধারণ পাহাড়িরা ভালো নেই। আপনারা যারা এখানে এসেছেন, চেহারা দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। কারণ আমি নিজেও একজন পাহাড়ি।

তিনি পাহাড়ে কোন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত হচ্ছে না দাবী করে বলেন, যা হচ্ছে তা এলাকা নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। কে কোন এলাকা দখল করে চাঁদাবাজি করবে এ লড়াই চলছে। এ অরাজকতা আর চলতে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পাহাড়ের মানুষের সম্পর্ক অনেক গভীরে। তিনি বার বার পাহাড়ে ছুটে এসেছেন। পাহাড়িদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাহাড়ের সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জন্য চুক্তি করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। তারপর কোন সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার সুযোগ আছে। কিন্তু সন্ত্রাস তার বিকল্প হতে পারে না।

সভাপতির বক্তব্যে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, পাহাড়ে একটি অশুভ শক্তি সাধারণ পাহাড়িদের উপর অবৈধ শাসন চালাচ্ছে। সাধারণ পাহাড়িদের মাথার উপর লবণ রেখে বরই খাচ্ছে। জুম চাষ থেকে শুরু করে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি থেকে পর্যন্ত চাঁদা খাচ্ছে।
তিনি সাধারণ পাহাড়িদের সন্ত্রাসীদের রুখে দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী আপনাদের পাশে আছে। যেখানে ঘটনা ঘটছে নিরাপত্তা বাহিনী ছুটে যাচ্ছে আপনাদের নিরাপত্তা দিতে। ফলে সন্ত্রাসীদের আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে আসছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, আমরা যদি উগ্র পাহাড়ি জাতীয়বাদ ও উগ্র বাঙালি জাতীয়বাদ বর্জন না করি এ অঞ্চলে কখনো সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বজায় রাখা যাবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তি চুক্তি করেছেন। কিন্তু চুক্তির পরপরই এ চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যায়িত দিয়ে একটি গ্রুপ দল গঠন করেছে। এভাবে একের পর এক চারটি গ্রুপের জন্ম হয়েছে। তাদের কারণে হেডম্যান-কারবারীসহ সাধারণ মানুষ কেউ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম পর্যটন সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের শান্তি স্থাপনে তৃণমূল পাহাড়ি নেতাদের সহযোগিতা চান।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান, কমিউনিটি পুলিশকে সন্ত্রাসী ও সমাজ বিরোধীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য পাহাড়িদের তৃণমুলের নেতৃত্বকে আহবান জানান।

স্বদেশ প্রীতি চাকমা ব্যক্তি-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বলেন, মনে শান্তি নেই, উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।
রণিক ত্রিপুরা এ সম্প্রীতি সম্মেলনের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি ফিরে আসবে বলে আশা করেন।
হেডম্যান দিকু তালুকদার বলেন, কারা এলাকায় চাঁদাবাজি করছে, সন্ত্রাস করছে সবারই জানা আছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

সম্প্রতি পাহাড়িদের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে একজন উপজেলার চেয়ারম্যান ও একটি আঞ্চলিক সংগঠনের প্রধানসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন