নাইক্ষ্যংছড়ির ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী মহলের কাছের লোক

 

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়িতে সহজলভ্য হয়ে পড়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। টেকনাফের পর ইয়াবা কারবারীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ রুট। কিন্তু টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে পতন ঘটতে চললেও নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তত দেড় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। যাদের চুড়ান্ত কোন তালিকার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

শুক্রবার (১৫ফেব্রুয়ারি) নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির স্মরণীয় অভিযানে একটি গোয়াল ঘর থেকে ৪ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের পর এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নাম আবারও আলোচনায় উঠে আসলো। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি-কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়ার একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত চাকঢালা-আশারতলী-ফুলতলী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা এনে তা পাচার করে আসছিল। এই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। যারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনেছেন। এই বিষয়ে বিজিবি অধিনায়ক উদ্ধারকৃত ইয়াবার সাথে জনৈক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে রয়েছে বলে জানান। যদিওবা তদন্ত ও মামলার স্বার্থে কারো নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মাদক পাচারের অন্যতম রুট রয়েছে অন্তত ৯টি। বিশেষ করে আশারতলী, চেরারকূল, কম্বনিয়া, প্রধানঝিরি, ফুলতলী, দৌছড়ি পাইনছড়ি, কোলাচি, বাইশফাড়ি, তুমব্রু, সোনাইছড়ি, নিকুছড়ি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করে আনছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোপূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ির ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ে পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা, জাতীয় গোয়েন্দা শাখাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে। যেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের বিশেষ প্রতিবেদনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২১জনের নাম রয়েছে। এরপর ২০১৬ সনে ৭১ জনের আরও একটি তালিকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৈরি করে।

যদিওবা ২০১৩ সালের পর নাইক্ষ্যংছড়িতে আরও বেশি ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে। এখানকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী মহলের কাছের লোক হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান শুক্রবার এক প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী ও বিজিবি’র ডিজি মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। শুধু মাদক নয়, সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র পাচার, অবৈধ কাঠ পাচার ও পরিবহন, অন্যান্য অবৈধ পন্য সামগ্রীসহ যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মুলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, সীমান্তে ইয়াবা ব্যবসা বিস্তারের পর নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ আটক হলেও স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তারা ছিলেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ির ইয়াবা ব্যবসায়ী ও তাদের আশ্রয়দা তাদের চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন