‘বৈসাবি’ শব্দের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই: দীপংকর
নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:
কেন্দ্রীয় আ’লীগের সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেছেন, ‘বৈসাবি’ শব্দের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
বৃহস্পতিবার (৫এপ্রিল) বিকেলে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ইন্সটিটিউট মাঠে তিন দিনব্যাপী বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু মেলা উদ্বোধন পরবর্তী বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা তাদের স্ব-স্ব গোষ্ঠির ঐতিহ্য হারানোর ভয় নেই। বিজু, বিহু, বৈসুক এবং বিষু মিলে বৈসাবি হয়েছে। স্ব-স্ব গোষ্ঠি তাদের স্ব-স্ব ভাষায় তাদের মতো করে এই উৎসব পালন করবে।
এদিকে উদ্বোধন পরবর্তী পাহাড়ের বিভিন্ন জাতি স্বত্তা গোষ্ঠির সদস্যরা নানা ঢঙে ঐতিহ্যর পাহাড়ি নৃত্য দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন এবং নতুন বছরকে অগ্রীম স্বাগত জানায়।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর, রাঙামাটি জোন কমান্ডার কর্ণেল মো. রিদওয়ান, জেলা পরিষদের সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, অংসু সাইন চৌধুরী, চানমুণি তঞ্চঙ্গ্যা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ইন্সটিটিউট’র ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক রনেল চাকমা।
এর আগে মেলা উপলক্ষে রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা বের করা হয়। শোভা যাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
তিন দিনব্যাপী এবারের মেলায় পাহাড়ি পোশাক-পরিচ্ছেদ এবং পাহাড়ি খাবার নিয়ে প্রায় ২০টি স্টল অংশ নিয়েছে।
প্রসঙ্গত: পাহাড়ি জনপথ রাঙামাটিতে ১৩টি জনগোষ্ঠির ১১টি ভাষা-ভাষির মানুষের বসবাস। প্রতিবছর বৈশাখের শুরুতে পাহাড়ি এ অঞ্চল এসব জনগোষ্ঠির কৃষ্টি-কালচারে নতুন রূপে সেজে উঠে। যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও এমন বৈটিত্রময় চিত্র দেখা যায় না।
এদিনটাকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মধ্যে চাকমারা বলে বিজু, মারমারা বলে সাংগ্রাই, ত্রিপুরা বলে বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বলে বিষু, এবং অহমিয়রা বলে বিহু। ওইদিন পাহাড়ি প্রতিটি পরিবারের ঘরে ঘরে পাজন নামের একটি বিখ্যাত খাবার তৈরি করা হয়। অতিথিদের এ পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ১৩টি পদের সবজি দিয়ে পাজন নামের এই খাবারটি তৈরি করা হয়। পাহাড়ি সমাজে বিশ্বাস করা হয় পাজন শুধু খাবার হিসেবে নয় বরং এটি খেলে সারা জীবন সকল ধরণের রোগ-বালাই থেকে মুক্তি লাভ করে।
এছাড়া মারমা জনগোষ্ঠি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে জলকেলির আয়োজন করে। এ উৎসবে মেতে উঠে মারমা যুবক-যুবতীরা।
তবে যে যাই বলুক, এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে পাহাড় সাজে বৈচিত্রের নতুন রূপে। সকল সম্প্রদায় ওইদিন মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায়। যা এক নতুন সম্প্রতির বন্ধন সৃষ্টি করে।