বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক প্রস্তুতি


নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব “বৈসাবি”-কে ঘিরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড়ি গ্রামগুলো এখন সাজ-সাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণকে সামনে রেখে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম।

এদিকে বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে। আগামী ১২ এপ্রিল নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১লা এপ্রিল থেকে উৎসব শুরু হয়েছে। গ্রামে-গ্রামে চলছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী নানা খেলা-ধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান পর্যাক্রমে আনন্দ র‌্যালি, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টটি বল বা পানি উৎসব ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় গড়িয়া নৃত্য’র আয়োজন করেছে।
বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেলগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে। আয়োজক ও জনপ্রতিনিধিদের মতে খাগড়াছড়িতে এবার উৎসব মখুর পরিবেশে বৈসাবী পালিত হবে।

১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসুক, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।

ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে।

মঙ্গলবার(৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব। উপজাতীয় শরনার্থী ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন।

এ দিকে বাংলা নববর্ষ এবং পাহাড়ের ১১টি জাতিসত্ত্বার প্রাণের উৎসব ‘বিজু-সাংগ্রাই-বিসু (বৈসাবি) উপলক্ষে বুধবার(১০ এপ্রিল) বিকালে শুরু হবে প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়ি শহরে সপ্তাহব্যাপী ত্রিপুরা সংস্কৃতি মেলা।

বিকালে খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর মাঠে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় মেলার উদ্বোধন করবেন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হক।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও ত্রিপুরা সংস্কৃতি মেলার অন্যতম সংগঠক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল জানান, জাতি-ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত এই মেলায় প্রতিদিনই সৃজনশীলতার ভিন্নতায় পরিপূর্ন থাকবে।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, ১০ এপ্রিল শুরু প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়ি শহরে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী ত্রিপুরা সংস্কৃতি মেলা ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের খ্যাতনামা ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক দলের মনোজ্ঞ পরিবেশনা হবে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, জেলা পরিষদেরে উদ্যোগে ১১ এপ্রিল বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মধ্য দিয়ে পুরাতন বছর বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হবে। কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন উপজাতীয় শরনার্থী ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উৎসবকে, ঘিরে খাগড়াছড়িতে, বৈসাবি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন