বেড়েছে চাউল ও নিত্যপণ্যের দাম, বিপর্যস্ত  জনজীবন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে চালের দাম বেড়েছে। বছরের শুরুতে চালের দাম বাড়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ। পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকদের অতি মুনাফার প্রবণতাই দাম বাড়ার কারণ।

পাইকারী চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটন শহরে চালের দাম পাইকারী বাজারে প্রতি বস্তা ১০০/১৪০ টাকা করে বাড়লেও খুচরা বাজারে দ্বিগুণ বেড়েছে। যার ফলে চালের মুল্য নিয়ে অস্বস্থিতে পড়েছে খেটে খাওয়া লোকজন। নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানালেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শহরের বড় বাজারের পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকরা জানান, নির্বাচনের আগের সপ্তাহ থেকে চালের সরবরাহ কম থাকায় চালের (৫০) কেজি বস্তা প্রতি ১২০/১৫০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট (২৮) ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে বস্তা ১৯৫০ টাকা, বেতী (২৯) বস্তা ১৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭৫০ টাকা, কাটারি বস্তা প্রতি ২৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮৫০ টাকা, চিনিগুড়া ৩৭০০ টাকা থেকে ৩৯০০ টাকা ও সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ১৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। চালের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পায়নি, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আর কমে আসেনি।

পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ কেন সরবরাহ কমে গেল তা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও জানেন না। নির্বাচনের আগে পরিবহন সংকটের জন্য চাল সরবরাহ কমেছে এমন দাবি করছেন চট্টগ্রামের আড়তদারেরা। এখন কোন সংকট না থাকলেও কেন দাম কমে নাই তা কারো জানা নেই। পাইকারী বাজারে চাল কেজিতে ২ টাকা বাড়লে খুচরা বাজারে ৩/৪ টাকা করে বৃদ্ধি পায়।

শহরের কানাইয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আরমান জানিয়েছেন, আমরা পাইকার থেকে চাল এনে কিছু বাড়তি দরে বিক্রি করি, না হয় পোশায় না। চালের মুল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের জানা থাকার কথা নয়। পাইকারী বাজারে বাড়লে আমাদেরও বাড়াতে হয়।

দিনমজুর ক্রেতা আরফাত জানান, বছরের শুরু থেকে কোন কারণ ছাড়াই চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়িরা পাইকারদের কথা বলেন আর পাইকাররা আড়াতদাদের কথা বলেন। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।

এদিকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, তেল সব ধরনের তরিতরকারীসহ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন বিপাকে পড়েছেন। বিক্রেতাদের দাবি হঠাৎ করে সব ধরনের জিনিসের চাহিদা বেড়ে গেছে কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ অনেক কম তাই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। আর উখিয়া-টেকনাফের অবস্থা আরো খারাপ। এখানে সব ধরনের পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে সাধারণ মানুষের দাবি কক্সবাজারে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা আসায় একটি বড় চাপ তৈরি হয়েছে। তাই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এই অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া বাজারে নিত্যপণ্য সামগ্রী কিনতে আসা এডভোকেট নুর মোহাম্মদ জানান, মোটামুটি খাওয়ার উপযুক্ত চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৩ টাকা। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ডালের দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ১৩০ টাকা। এভাবে হলে তো সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে পড়বে।  চালের দামের সাথে সাথে বেড়েছে ডালের দামও। এতে আমাদের চরম অবস্থা বিরাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব ক্ষতি হবে। কারণ আমাদেরতো আর আয় বাড়েনি। এভাবে যদি দৈনিক খরচ বাড়তে থাকে তাহলে কিভাবে চলবে।

তিনি বলেন আমাদের ধারণা দাম আরও বাড়তে পারে, কারণ বাজারে সব পণ্যের একটু ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

বিক্রেতা সেলিম বলেন, তরিতরকারী হচ্ছে দ্রুত পচনশীল। যে কোনো তরকারী ১/২ দিনের মধ্যে বিক্রি করে ফেলতে হয়। আর বর্তমানে সব জিনিসের চাহিদা বেশি থাকায় আগে চকরিয়া বা চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে যেখানে ১টি গাড়ি করে আনলে হতো বর্তমানে সপ্তাহে ২ বার গাড়ি করে আনতে হয়। তারপরও সংকট হয়। কারণ অধিকাংশ তরকারি চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেই কারণে মূলত দাম বৃদ্ধি হচ্ছে।

ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমি ছোটখাট চাকরি করি। আমাদের আয় সীমাবদ্ধ, এখন যদি প্রতি সপ্তাহে জিনিস পত্রের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের জন্য খুবই অসুবিধা হয়। তিনি আরও বলেন, শহরে বিপুল সংখ্যক মানুষ নতুন করে আসছে যাদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা। জিনিস পত্রের সংকট দেখা দিয়েছে আর তাই দামও বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, মানবিকতার কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তাদের কারণে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে এটি তার মধ্যে অন্যতম কারণ।

এদিকে শহরের সবচেয়ে বড় বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানেও সব জিনিসের দাম বাড়তি। ডাল, তেল, পান, কাঁচা মরিচ, শাকসবজিসহ সব ধরনের তরিতরকারির দাম বেড়েছে। মাছের দামও বেড়েছে অনেক। বর্তমানে উখিয়া টেকনাফের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে জানান স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে উখিয়ার সাংবাদিক সরওয়ার আলম শাহিন বলেন, এখানে মাছ তরকারী পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। মাছ ও শাকসবজির দাম বেড়েছে অনেক।

তিনি আরও বলেন-মূলত এখানে বাজারে যা আনে তাই খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। বিক্রেতারাও উচ্চমূল্য ছাড়া বিক্রি করছে না। কারণ কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভারে অনেকটা বিপর্যস্ত এখন পুরো এলাকা। এই কয়েক লাখ লোকের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে আমাদের পণ্যের উপর প্রভাব পড়েছে। তাই সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দামও বেড়েছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন-গাড়ি ভাড়া এখন দ্বিগুণ। যেখানে ভাড়া ছিল ১০/১৫ টাকা, সেখানে এখন ৩০/৪০ টাকা দিলেও যাচ্ছে না। রিক্সা বা টমটম সিএনজি সব কিছুতে গাড়ি ভাড়া অনেক বেড়েছে। আর তীব্র যানযটের কারণে মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছে। রাস্তা তো ভাঙ্গা-চোরা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

মানুষ এখন নিত্য প্রয়োজনে টেকনাফ থেকে উখিয়া-কক্সবাজার আসতে খুব বেশি হলে ঘণ্টা থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগার কথা সেখানে এখন ৩ ঘণ্টায়ও গাড়ি আসতে পারছে না। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। এছাড়া অনেকে ত্রাণ দিতে এসে বাজারের সব জিনিস একাই নিয়ে নিচ্ছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট হচ্ছে। ফলে দামও বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয়দের মাঝে নেমে আসবে চরম দুর্ভোগ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন