বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল জুরাছড়ির শত একর ধান ক্ষেত

Rangamati 1

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
সম্প্রতি থেমে থেমে বৃষ্টি পানি নেমে পাহাড়ি ঢলে জুরাছড়ি উপজেলার কৃষকগণ প্রায় নিঃস্ব। তিন সপ্তাহ আগে যে সবুজ ধানি জমি দেখে কৃষকের বুক আশায় ভরে উঠেছিল। পাহাড়ি ঢল নেমে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন কেবলই হাহাকার বিরাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর ইউনিয়নের বালুখালীর কৃষক ভুবন জয় চাকমা উঠানে বসে দেড়-দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকা ধানখেতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাঁর কাছে অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম, সব শেষ। দেখেন না, পানিতে ডুবে আছে। কেমন করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও দিন চালাব ভগবান জানে।

একই ইউনিয়নের ঘিলাতুলী গ্রামের কৃষ্ণ কুমার চাকমা বলেন, দশ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল আমন লাগিয়ে ছিলাম। সম্প্রতি বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে সব শেষ করে দিল। তিনি বলেন, আমরা চাষী মানুষ, জমি ছাড়া অন্য কোনো আয়ের পথ নেই আমার। সংসারে ১১ জন মানুষ খায়। দিনে দুই-তিন কেজি চাউল লাগে। অন্যান্য খরচ তো আছে। কিনে খেতে গেলে জমি বেচা ছাড়া উপায় নেই।

উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি ধানি জমির উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢল স্রোতে বেয়ে নামছে, উপজেলার চার ইউনিয়নে ধানি জমি গুলো পাহাড়ি ঢলের স্রোতে নষ্ট করে দিচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ফসল গুলো এক থেকে তিন ফুট পানির নিচে আছে।

দুমদুম্যা ইউনিয়নের বরকলক গ্রামের কৃষক জীবন শান্তি চাকমা বলেন, বৃষ্টির পানিতে পুরো ফসল শেষ। পানির স্রোতে নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল বাঁচবে না। মাঝখানে কোন আবাদ নেই। বোরো মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বৃষ্টির পানিতে যে ক্ষতি হলো, বোরো মৌসুমে টাকার জন্য আবাদ করতে পারব না।

জানা গেছে, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে সদর ইউনিয়নের কুসুমছড়ি, লুলাংছড়ি, ঘিলাতুলী, শিলছড়ি গ্রামের ৬০ একর প্রায়, বনযোগীছড়া ইউনিয়নের ছোট পানছড়ি, বহেড়াছড়ি, চুমাচুমি গ্রামের ৪০একর, মৈদং ইউনিয়নের বারাবান্যা, ফকিরাছড়ি গ্রামের ৪০একর, দুমদুম্যা ইউনিয়নের বরকলক, বড় কড়াইদিয়া, বগাখালী গ্রামের ৬০একর বর্ষার চাষ জমির ফসল পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হয়েছে বলে স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানরা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকতা বিরো কুমার চাকমা জানান, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির ফলে বোরো ধান্য জমির উপর পাহাড়ী ঢল নামে। এতে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে ২৫ হেক্টর মত ধান্য জমি ক্ষতি হয়েছে। তবে আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপ চুড়ান্ত রির্পোট পেলে বলা যেতে পারে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা কৃষকদের ধানি জমি তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সরকারী সহযোগীতার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ চালাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কার কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তালিকা করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন