Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বিশেষ সাক্ষাৎকারে এআরএসএ কমান্ডার: আমরা সন্ত্রাসী নই  

 

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) -এর এক কমান্ডার দাবি করেছেন, তাদের সংগঠনটি কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়। সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের ও সংগঠনের ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন। মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তি এই এআরএসএ  নেতার ব্যাপারে জানান, তার নাম আব্দুস শাকুর। রাখাইনের মংডু জেলায় আরাকান আর্মির কমান্ডার তিনি।

দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত ও দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আব্দুস শাকুরের ঠিকানায় যাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয় প্রতিবেদকদের। এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধানের পরও কয়েকবার ভুল পথে চলে গিয়েছিলেন তারা। পরে বহু কষ্টে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী দুর্গম স্থানে শাকুরের ঠিকানায় পৌঁছাতে সক্ষম হন তারা। শেষ বিকালে তার ‘আস্তানায়’ গিয়ে দেখা যায়, একটি কুঁড়েঘরের মধ্যে চেয়ারে বসে আছেন তিনি। তবে ওই কুঁড়েঘর কিংবা সামনের কাদামাটিতে বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে,এখানে কোনও বিদ্রোহী আছেন। যাকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে আস্তানায় চোখে পড়েনি কোনও বন্দুক, শাকুরের বর্ণনার সঙ্গেও বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডের কিছুই ঠিক মিলছিল না।

নীল-সাদা লুঙির সঙ্গে সুতি শার্ট পড়া এই যুবককে আসলে বিদ্রোহী বলেই মনে হচ্ছিলো না। কথা বলা শুরু করতেই সাঁঝের পড়ন্ত আলোর ছায়ায় ঢেকে যায় তার মুখ। লম্বা ও একহারা গড়নের এই যুবকের বয়স ২৫ এর কাছাকাছি, কথাবার্তায়ও তারুণ্যের বিষয়টি স্পষ্ট।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের বিভিন্ন সেনা চৌকি ও ক্যাম্পে তার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী বাহিনীর হামলার ঘটনা এবং পরবর্তীতে রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে শক্ত হয়ে বসেন তিনি। কঠিন হয়ে যায় তার কণ্ঠস্বর। হামলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ হামলায় ২০০ রোহিঙ্গা অংশ নিয়েছিল।’

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)-এর হামলা ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছি। কিন্তু তারা হামলা করেছে আমাদের নারী ও শিশুদের ওপর। তাদের সেনাবাহিনী আসলে কাপুরুষ।’

অভিযোগ আছে, অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। তবে ইয়াংঙ্গুন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে,‘সন্ত্রাসীদের দমন করার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী।’ সরকারের এ বক্তব্য শুনে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ শাকুর। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসী নই। আমরা অধিকার আদায়ের লড়াই করছি। আমরা আর কিছুই চাই না।’

কেন, কিভাবে তার সংগঠনটি ২৫ আগস্ট সীমান্ত চৌকি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পরিকল্পনা সাজায় এবং হামলা করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন শাকুর। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা ও মুরুব্বিরা বলেছেন, আমাদের অবশ্যই পাল্টা আঘাত হানতে হবে। কারণ মিয়ানমার সরকার খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে আমাদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের লোকদের গলা কেটে হত্যা ও নারীদের অসম্মান করেছে। তারা আমাদের পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লোকদের, মা-বোনদের রক্ষায় এবং অধিকার ফিরে পেতে আমরা অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লাঠি, কুড়াল ও ছোরা তুলে নিয়েছি।’

২৪ আগস্টের হামলার ব্যাপারে আরাকান আর্মির এ কমান্ডার জানান, হামলার কয়েক রাত আগে থেকে তার লোকেরা সেনা ক্যাম্পের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। সেনাদের সক্ষমতা, অস্ত্র ও টহলের সময় সম্পর্কে তথ্য নিয়েছে। রাখাইনের অন্য রাজ্যগুলোতেও একই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরে রাত ১টার দিকে একযোগে হামলা শুরু হয়।

রাখাইনের অন্য অঞ্চলে অবস্থান করা শাকুরের অনুগত যোদ্ধাদের কাছে অল্প পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও তাদের কাছে বন্দুক ছিল না বলেও দাবি করেছেন তিনি। আফসোসের ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে শুধু ছোরা ও কুড়াল এবং হাতে তৈরি কিছু বোমা ছিল। যেগুলোর বিস্ফোরণ হয়নি।’

বিদ্রোহী কমান্ডার শাকুরের বর্ণনার সঙ্গে হামলার পরদিন (২৫ আগস্ট) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেওয়া অফিসিয়াল বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘২৪ আগস্ট রাত ১টার দিকে, বাঙালি উগ্রপন্থী বিদ্রোহীরা হাতে তৈরি বোমা ও ছোটখাট অস্ত্র দিয়ে পুলিশ পোস্টে হামলা শুরু করে।’

এ প্রসঙ্গে শাকুর বলেন, ‘আমাদের কাছে অস্ত্র থাকলে আমরা তাদের পরাজিত করতে পারতাম। আমরা জানতাম, আমরা বন্দুক ও মর্টারের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি। নিজেদের গোষ্ঠীর লোকদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা সেদিন মরার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম।’

সেদিনের হামলার সময় শাকুর কাঠ কাটার একটি কুড়াল ও হাতে বানানো কিছু ককটেল নিয়ে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন। শাকুর জানান, সেসময় মিয়ানমারের সেনারা ঘুমিয়ে থাকবে বলে তার বাহিনীর সদস্যরা আশা করেছিল। কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন, ‘হামলার সময় আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল ছিল, কিন্তু তারা (মিয়ানমারের সেনারা) সম্ভবত আগে থেকে তথ্য পেয়ে সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমরা হামলা শুরু করতে না করতেই তারা গুলি করতে শুরু করে।’

এ ঘটনার পাল্টা জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। যার ফলে চার লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনাকে শাকুর ভুল মনে করেন কিনা তা জানতে চাইলে- প্রথমে থমকে যান তিনি। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে আমাদের নেতা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা আমরা প্রয়োজনীয় মনে করেছি।’

এ বিদ্রোহী কমান্ডার আরও বলেন,‘আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের সমর্থন করেছে। তারা জানে, আমরা কী চাই। মিয়ানমারের শান ও কারেন সম্প্রদায়ের লোকজন যদি তাদের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে পারে, তাহলে আমরাও পারি।’

তবে সাধারণ নাগরিকদের ওপর তার অনুগত বাহিনী হামলা করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘রাখাইন বা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। শাসকরাই নিপীড়নের জন্য দায়ী।’

এআরএসএ -এর ব্যাপারে শাকুর জানান, ২০১৬ সালে মিয়ানমারের পুলিশ পোস্টে হামলা করে ৯ পুলিশকে হত্যা করে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এরপরেই তিনি এআরএসএ-তে যোগ দিয়েছেন। মাত্র এক বছর আগে তিনি এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর আগে মংডুর একটি মাদ্রাসায় পড়তেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেখানকার (মংডুর) স্কুল ও মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার ফলে শিক্ষার অধিকার হতে বঞ্চিত হয়েছে রোহিঙ্গারা। গোপনে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয় আমাদের।’

এআরএসএ সংগঠনটি আতা উল্লাহ নামের একজনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। তবে শাকুর কখনও আতা উল্লাহকে দেখেননি জানিয়ে বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা। তিনি অডিও-ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নির্দেশনা দেন।’ এআরএসএ আগে হারাকা আল ইয়াকিন নামে পরিচিত ছিল বলে জানা গেছে। যার মানে হচ্ছে ‘বিশ্বাসের আন্দোলন’।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুটা শিক্ষিত হওয়ায় দ্রুত সুপারভাইজার ও পরে কমান্ডার পদে নিয়োগ পেয়েছেন শাকুর। কিন্তু এখন ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন তিনি। তাদের বর্তমান মনোভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো আমাদের সাহায্য করুক। আমরা মানুষ হিসেবে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চাই, এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমাদের।’

কথা বলতে বলতে ক্রমেই সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসে। তখন উঠানে জ্বলে ওঠে সৌর বিদ্যুৎচালিত লাইট। প্রকৃতির এমন এক আলো আঁধারির সময়ে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাকুর বলেন, ‘চার লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসেবে নেওয়ার জন্য আমার লোকজন বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের নারী ও শিশুদের সাহায্য করে বাংলাদেশ একটি মহৎ কাজ করেছে।’ বাংলাদেশ খুবই মানবিক আচরণ করেছে বলে আলাপ শেষ করেন তিনি।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন