বিলাইছড়িতে দু’কিশোরীকে নির্যাতনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত নয় জানালেন নির্যাতিতদের স্বজনেরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় দু’কিশোরীর কথিত ধর্ষণের ঘটনাকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার চালিয়ে চক্রটি নিজেদের প্রপাগান্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। চক্রটির রাজনৈতিক কঠিন খেলায় দু’কিশোরীর মান-ইজ্জত ক্ষুণ্ণ হচ্ছে । বুধবার (২৪জানুয়ারী) দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সন্মেলনে এমন অভিযোগ করেন, দু’কিশোরীর পরিবার ও তার স্বজনরা।

সংবাদ সন্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, নির্যাতিত কিশোরীর বাবা উ সুই শিং মারমাা, মা সুই ক্রা চিং মারমা ও ভাই অংসিং থোয়াই মারমাসহ তাদের অভিভাবক রাসেল মারমা।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটি জানায়, একটি চক্র রাজনৈতিক স্বার্থে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তারা। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পরিবারটি জানায়, ওইদিন রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি টহল দল ওই এলাকায় সরকারি কাজে গিয়েছিলো। তারা তাদের কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়ার বেশ কিছু সময় পর আমরা ( কিশোরীর মা-বাবা) ওই দু’কিশোরীকে বাড়িতে সুস্থ রেখে সাংসারিক কাজে বের হই। এ সময় স্থানীয় কিছু যুবক কে বা কারা ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক তাদের তুলে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন চালায়। দূর থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখলেও প্রাণভয়ে কিশোরীদের উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে কিশোরীর মা-বাবা জানান।

তারা আরও বলেন, এ ঘটনার সময় কোন সরকারি পোশাকধারী লোকজনকে সেখানে দেখা যায়নি। কিন্তু ওই কিশোরীদের চিকিৎসার জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর এ ঘটনা নিয়ে পানি ঘোলা করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টায় প্রপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা করছে একটি চক্র। এ চক্রটির সাথে তাদের পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই এবং এ বিষয়ে গত কয়েকদিনের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকল পক্ষকে অনুরোধ জানান পরিবারটি।

পরিবারটি বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনে একটিই উদ্দেশ্য- বিষয়টি নিয়ে সকল ভুল বুঝাবুঝির দূর হবে এবং অযাচিত প্রপাগান্ডা বন্ধ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কিশোরীদের স্বজন এবং মারমা সাংস্কৃতিক সংগঠনের (মাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা রাসেল মারমা জানান, এ ঘটনার পর উক্ত এলাকায় আমাদের সংগঠনের একটি টিমকে পাঠিয়েছিল। তারা সরেজমিনে ঘুরে আমাদের জানায়, উক্ত ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সদস্য জড়িত নয়। তিনি এ আরও জানান, এ ঘটনায় বিলাইছড়ির দূর্গম ফারোয়া ইউনিয়ন থেকে আমাদের কিশোরীদের কে বা কারা রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়েছে আমরা তা জানি না।

এদিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিশোরীর মা-বাবা জানান, আমরা চাই এ ঘটনাকে নিয়ে কোন চক্র রাজনৈতিক খেলায় মেতে না উঠুক। কোন অপ্রচার চালিয়ে ঘোলা করে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা না করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত: চলতি বছরের ২১ জানুয়ারী রাতে নিরাপত্তা বাহিনী বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নতুন বাবু তঞ্চাঙ্গ্যা (৩৫) এবং ভন্দ তঞ্চাঙ্গ্যা নামের দু’ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করে।

আর এ ঘটনার পরের দিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দু’কিশোরী ধর্ষণ হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এরপর অন্যান্য পাহাড়ী সংগঠনগুলো এ বিষয়টিকে ইস্যু করে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন