Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বিলাইছড়িতে কথিত নির্যাতিত দুই কিশোরীর নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত বিশেষ মহল

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:
রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় কথিত নির্যাতিত দুই মারমা কিশোরী ২৩দিন পর এখন মাতা-পিতার আশ্রয়ে ফিরে গেছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাদের মাতা-পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।

জেলা প্রশাসক জানান, উচ্চ আদালতে রায়ের আদেশের ভিত্তিতে ওই কিশোরীকে তাদের মাতা-পিতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আদালতের আদেশে তাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগ এনে কে বা কারা ওই দুই কিশোরীকে দূর্গম বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে তাদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করায়। এরপর একটি গোষ্ঠী এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো ওই দুই কিশোরীকে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়। আর অন্য দিকে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়েন ইয়েন ওই কিশোরীকে নিজ জিম্মায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টা চালায় এবং প্রশাসনের সাথে রূঢ় আচরণ করে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

দেবাশীষ রায়ের স্ত্রীর এমন হস্তক্ষেপে ওই দুই কিশোরী হাসপাতালে আটকে পড়ে। দীর্ঘ ২৩দিন তারা হাসপাতালে বন্দি ছিলো। ওই কিশোরীদের এসময় তাদের মা-বাবার সাথে দেখা করতে দেয়নি তারা।

আর এমন দুর্বিসহ জীবন থেকে তাদের কন্যাকে ফিরে পেতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করেন দুই কিশোরীর পিতা উসেসিং মারমা। উচ্চ আদালতের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও জাফর আহমেদ এর বেঞ্চ শুনানী শেষে গত ১৩ফেব্রুয়ারী দুই কিশোরীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার আদেশ দেন।

নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন বৃহষ্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) দুই কিশোরীকে আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১জানুয়ারী রাতে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছড়ি গ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ওই উপজেলায় আ’লীগ নেতাদের উপর জেএসএস’র হামলায় পুরো উপজেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ওই রাতে ওই এলাকায় সেনা টহলের পরের দিন জেএসএস’র পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় যে ওই এলাকায় দু’কিশোরীকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

হাসপতালে রাণীর অবস্থান নেয়া
এ ঘটনার তৃতীয় দিন থেকে তথা ২৩ জানুয়ারী থেকে ওই কিশোরীদের নিজের জিম্মায় নেয়ার জন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাণী ইয়েন ইয়েন হাসপতালে অবস্থান নেন। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে কিশোরীদের হাসপাতালে ঘিরে রাখে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। এদিকে হাসপাতালে গিয়ে দুই কিশোরীর সাথে কথা বলেন, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা, এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমাসহ আরো বেশ কয়েকজন।
পরিদর্শন শেষে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও রানী ইয়েন ইয়েন সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে কিশোরী দুটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তাই তাদেরকে রাণীর জিম্মায় নিতে চান তারা।

২৪ জানুয়ারীর সংবাদ সম্মেলন
দুই কিশোরীকে কে বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করার পরের দিন ২৪ জানুয়ারি রাঙামাটি আসেন মেয়েটির পিতা উসুইচিং মারমা। ওই দিন দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের দুই মেয়ের কথিত ধর্ষণ নিয়ে কথা বলেন কৃষক উসুইচিং। তার দুই মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা বলে দাবী করেছেন তিনি। পাহাড়ের একটি আঞ্চলিক দল বরং ধর্ষণের মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সুইক্রাচিং মারমা(৩৬) ও ছেলে অংচিং থোয়াই মারমা(৮)।

উসুইচিং অভিযোগ করে বলেন, ‘২১ জানুয়ারি রাতে জোড় করে তাঁর দুই কিশোরি মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় একদল অজ্ঞাত যুবক। কিন্তু প্রাণহানীর ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। ধর্ষণ করা হয়েছে এমন অভিযোগে দুই বোনকে মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশিরাই এমন খবর দিয়েছে। অথচ আমি ও আমার স্ত্রী কিছুই জানিনা। কারা ভর্তি করিয়ে দিয়েছে তাও জানিনা। আমার মেয়েরা ধর্ষিত হয়নি’।

কিশোরীদের জিম্মায় নেওয়ার জন্য রাণীর রহস্যজনক ভূমিকা  

ঘটনার পর থেকে জেএসএস সরাসরি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে। ফেসবুকেও এমন ইঙ্গিত দিয়ে স্ট্যাটাস দেন রাণী য়েন য়েন। কিন্তু রাণী য়েন য়েন এ ঘটনার তথা ধর্ষনের তদন্ত বা দোষীদের বিচার দাবি না করে দুই কিশোরীকে নিজের জিম্মায় নেয়ার বারবার চেষ্টা চালাতে থাকেন। তার এ ধরণের ভূমিকা রহস্যর জন্ম দিতে থাকে। রাণী এবার দুই কিশোরীকে নিজের জিম্মায় নিতে রাঙামাটি আদালতের দ্বারস্ত হন । আদালত কিশোরী দুটির ডাক্তারি পরীক্ষা ও বয়স নির্ধারনী পরীক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুই কিশোরীকে হাসপাতালে রাখার নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ দুই কিশোরীকে রাণীর জিম্মায় দিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারী সুলতানা কামালের নেতৃত্বে উচ্চ আদালতে একটি রীট পিটিশন দাখিল করা হয়। বিষয়টি এখনো আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রানী য়েন য়েন নিজের জিম্মায় নেয়ার চেষ্টাকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন জেলার বিভিন্ন বিজ্ঞ মহল।

রাঙামাটির একটি সূত্র জানিয়েছে, চাকমা রাণী রাখাইন সম্প্রদায়ের মেয়ে হওয়ায় চাকমা সম্প্রদায়ে এখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারেননি। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে চাকমা সমাজে জনপ্রিয় হয়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সূত্র আরো জানিয়েছে, মূলত বিলাইছড়িতে জেএসএস কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা ও কুপিয়ে আহত করা এবং ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের গণ পদত্যাগের পর উপজেলা ব্যাপী প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। এই অভিযান থামিয়ে দিতেই পরিকল্পিতভাবে এই ধর্ষণ নাটক সাজানো হয়েছে।

তবে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) রাঙামাটি শহরে সাবরাং রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহবায়ক গৌতম দেওয়ান বলেন, পাহাড়িদের প্রথাগত নিয়মে নির্যাতিত দুই কিশোরীকে রাণী নিজের জিম্মায় নিতে চেয়েছেন।

হাসপাতালে ২৩ দিনের গল্প 
রাঙামাটিতে আদালতের নির্দেশের পর হাসপাতালে অনেকটা বন্দী হয়ে পড়েন বিলাইছড়ির দুই মারমা কিশোরী। একদিকে তাদের ঘিরে রাখে পিসিপির নেতাকমীরা, অপরদিকে আইন শঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী। হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের সাধারণ সিটে দিন রাত পার করেছে গ্রামের সহজ সরল দুই মারমা কিশোরী। দেখা নেই মা বাবা এবং স্বজনদের। তাদের নিয়ে হাসপাতালে বাইরে কি হচ্ছে তা জানে না দুই কিশোরী।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাাচার
এ ঘটনাটি শুরু হওয়া থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালানো হয়েছে। প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিলাইছড়িতে দুই মারমা কিশোরীকে সেনাবাহিনীর টহলদল ধর্ষণ করেছে বলে অপপ্রচার শুরু করে কতিপয় পাহাড়ি ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে। এরপর কোন প্রকার ডাক্তারি পরীক্ষা বা অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ঘটনার একদিন পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে পাহাড়িদের বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ ঘটনার জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে জেএসএস।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, জেএসএস, ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন নামের কয়েকটি সংগঠন সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে। এ ছাড়াও এ ঘটনা নিয়ে ঢাকায় সুলতানা কামালের নেতৃত্বে সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের ব্যানারে একটি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেনা বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন।

ছবি- কল্পিত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন