বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড়

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

রবিবার(১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের ছুটি এবং শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় কক্সবাজার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠেছে।

বৃহস্পতিবার প্রায় ১ লক্ষ পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। শনিবার আরও লাখো পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্র সৈকত, বিপণন কেন্দ্রসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠেছে। রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক যানজট।

তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরিবেশ অস্থিতিশীল থাকার কারণে ওই সময়ের ভরা মৌসুমেও পর্যটকের দেখা মেলেনি। ফলে মারাত্বক ক্ষতি হয়েছিল কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে। পাশাপাশি ভ্রমণ পিপাসুরা উপভোগ করতে পারেনি কক্সবাজারের সৌন্দর্য। কিন্তু এইবারের চিত্র ভিন্ন। এখনো নির্বাচনীর অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েনি পর্যটন খাতে। মৌসুম অনুযায়ী যথারীতি আশানুরূপ পর্যটক এসে নিরাপদে ভ্রমন করছে। পর্যটকেরা নিরাপদে ভ্রমন করতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেলের সব কক্ষ আগাম বুক হয়ে গেছে।

হোটেল মালিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ পক্ষকাল পর্যটকদের আনাগোনায় বেশ জমজমাট থাকবে কক্সবাজার। ইতোমধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর, ২৪ থেকে ২২ ডিসেম্বর ও ২৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এখন বাকী দিনগুলোরও চলছে বুকিং। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে ছুটির দিনগুলোতে অবকাশ যাপনের জন্য দলে দলে হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের উপলক্ষ করে অনেকদিন পর চালু হয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ পর্যটন রিসোর্ট সেন্টমার্টিনের চলাচলকারী জাহাজগুলোও। শুক্রবার ও শনিবার দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম এই সৈকতটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। যদিও এই ভিড়ে শীতকালীন পর্যটকদের স্বাভাবিক জোয়ারের একটা প্রভাব আছে। শুক্র, শনিবার ও রবিবার সরকারি ছুটি হওয়ায় অনেকেই একদিন বাড়তি ছুটি নিয়ে টানা ৪ দিনের অবকাশে আছেন। এর প্রভাব চোখে পড়বে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে গেলে।

কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টস্থ ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. ফজল জনান, তিনি দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী। গত কয়েক বছর ধরে তার ব্যবসা ভালো হলেও গতবারের নির্বাচনে অস্থিত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা ভাল ছিল না। তিনি আশা করছেন ওই ধরনের পরিস্থিতিতে আর কখনও পড়তে হবে না।

কক্সবাজার কটেজ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহম্মদ নোবেল জানান, গত নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এইবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত। যার ফলে শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছে ব্যবসায়ীরা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর, থার্টি ফাস্ট নাইট, ২১ ফেব্রুয়ারীসহ বড় ছুটিগুলোতে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে ব্যবসার মাধ্যমে পর্যটকদের সেবা দিতে পারবে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, আগত পর্যটকরা সমুদ্রের বালিয়াড়ি সহ ভ্রমন করবে সেন্টমার্টিন, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, সোনাদিয়া, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনী স্থানে অবস্থান করছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে চার শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ পর্যটকে ভরে গেছে। আগামী তিনদিনে প্রায় দুই লাখ পর্যটক আসার সম্ভবনা রয়েছে। দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ভরপুর থাকবে পর্যটক। শীত মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বেশি ঘটে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি রেজাউল করিম জানান, এ মাসের শুরু থেকে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে কক্সবাজার। হোটেল মোটেলে ঠাঁই নেই অবস্থা। সেন্টমার্টিনগামী জাহাজসমূহের টিকেটও আগাম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা করেন, এ মাসে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসবেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সাইফুল ইসলাম জয় জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই, বখাটেদের উৎপাত ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় আছে।

ট্যুরিস্ট জোন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজার সৈকতে। বৃহস্পতিবার থেকে অনেক পর্যটক নেমেছে সৈকতে। বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর রবিবার বিকালে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লাখো পর্যটকের উপস্থিতি দেখা মিলবে আশা করি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন