বাড়ছে অসুস্থ্য রোহিঙ্গা শিশু, ১২১ রোগীর মাঝে ১০০জনই শিশু

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ শিশু এখন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। রোদ, বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনভাবে বেঁচে থাকা এসব শিশুরা দিন দিন আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, সর্দি ও এলার্জি সহ নানা রোগে।

রোহিঙ্গাদের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিয়োজিত একটি কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এক দিনে ১২১ রোগীর মধ্যে ১০০জনই হচ্ছে শিশু।

এদিকে খাবার আর মাথার উপর একটুকু ছাউনির সন্ধানে অস্থির। অন্যদিকে প্রাণ প্রিয় সন্তানের অসুস্থ্যতা। এ এক কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের মাঝে।

রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ১৫টির মত মেডিকেল টিম খোলা হলেও তা খুবই সামান্য হয়ে পড়েছে এত অসুস্থ্য রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য।

এছাড়া অনেক রোহিঙ্গা সন্ধান পাচ্ছেনা কোথায় চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের। সবমিলে খুবই মানবেতর দিন কাটছে রোহিঙ্গা অসুস্থ্য শিশু ও মা’ দের।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার সময় দেখা যায়, উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা নারীদের কোলে রয়েছে বাচ্চা। এসব বাচ্চার বয়স ২ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত। আর বেশিরভাগই হচ্ছে অসুস্থ্য। একই চিত্র দেখা যায় রাস্তা ও পাহাড়ের পাদদেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মাঝে।

এই রোহিঙ্গা শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি ও এলার্জি’তে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নোংরা পরিবেশের কারণে ডায়রিয়ার প্রভাব বাড়ছে। সাথে নোংরা পরিবেশের মাত্রাও বাড়ছে। অন্যদিকে খোলা আকাশে নিচে বৃষ্টি-বাদলের কারণে বাড়ছে সর্দি, কাশি আর ঠাণ্ডা জনিত রোগ।

কুলসুম আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার ৭ সন্তানের মধ্যে ৩জন অসুস্থ্য। ২জনের ডায়রিয়া আর অন্যজনের অতিরিক্ত কাশি। সীমান্ত পার হওয়ার সময় বৃষ্টিতে ভিজার কারণে তার সন্তানেরা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। একদিকে খাবারের অভাব অন্যদিকে সন্তানেরা অসুস্থ্য। এ অবস্থায় তার খুবই কষ্ট হচ্ছে।

চার মাসের সন্তান নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রেহেনা বেগম জানান, তার সন্তানের জ্বর আর কাশি হচ্ছে গত ৩ দিন ধরে। মূলত খোলা আকাশের নিচে থাকার কারণে এই কাশির মাত্রা আরো বেড়েছে। কিন্তু তিনি এখনও জানেননা কোথায় তার সন্তানকে চিকিৎসা করাবেন। এই অবস্থায় তিনি মানুষের কাছে খাবারের পরিবর্তে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা চাইছে।

আরেক রোহিঙ্গা নারী রফিকা খাতুন জানান, তার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মেরে ফেলেছে। তার আর কেউ নেই। তিনি কোনভাবে ২ বাচ্চা নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু তার বাচ্চা দুইটি খুবই অসুস্থ্য। তার মধ্যে তিনি নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে চিকিৎসা সেবা।

উখিয়া কুতুপালং পেট্টোল পাম্প সংলগ্ন রোহিঙ্গাদের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক অজিত কুরাম বড়ুয়া জানান, বুধবার ১২১জন রোহিঙ্গা রোগীর মধ্যে ১০০জনই হচ্ছে। এদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া স্বেচ্চাসেবীদের দিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে ফ্রি’তে চিকিৎসা সেবা প্রদানের খবরটি পৌঁছানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, এতসব রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানে একটু সময় লাগছে। তবে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে। আর আশা করা যায় খুব শীঘ্রই সকলে চিকিৎসা সেবা পাবে।

এদিকে সচেতন মহল বলছে, প্রশাসন তাদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু তাদের অনেকে এ বিষয়টি জানেনা। তাই তাদের খবর দিতে হবে ফ্রি’তে চিকিৎসা সেবার বিষয়ে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন