বালুখালীতে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা বস্তি অপসারণে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠেছে

Pic UKhiya 04-02-2017 copy

উখিয়া প্রতিনিধি:

উখিয়ার বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন বস্তিতে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদেরকে অপসারণ সহ দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরীত করার দাবিতে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠেছে। এমনকি রোহিঙ্গা ঠেকাতে বৃহত্তর আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

পালংখালী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বালুখালীতে নতুন ভাবে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা বস্তির কারণে এলাকার পরিবেশ দিন দিন দুষিত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি জায়গা জবরদখল সহ বনাঞ্চল ধ্বংস করছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে রোহিঙ্গারা। উপকূলীয় হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসনে সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্তটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত।

জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সে দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী নারকীয় অত্যাচার, নীপড়ন, হত্যা ও ধর্ষণ সহ ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মিয়ানমারের আইনশৃংখলা বাহিনীর হত্যাজজ্ঞ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে চলে আসে।

জানা গেছে, গত ২ মাসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) জানান, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফ কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা লক্ষাধিক ছড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করছেন সুশীল সমাজ। জাতিসংঘের মানধিকার সংস্থা’র উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানান, গত ৪ মাসে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে ৯২ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম গৃহ হারা হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বালুখালী পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠেছে। বে-সরকারী এনজিও সংস্থা মুক্তির এ জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে ওই বস্তিতে প্রায় দেড় হাজার অধিক রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গার দল এতে ঢুকে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইএমও) মাঠ কর্মীরা জানান, কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ও আশ-পাশ এলাকায় হাজার হাজার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও নতুন রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠার বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পর জোর দেন।

এদিকে বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তির কারণে এলাকার পরিবেশ দুষণ হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র চলা ফেরা ও খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করায় চারদিকে রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন বস্তি দ্রুত অপসারণ করে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে আশ্রয় দেওয়ার জন্য দাবি জানান। কারণ রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যেকোন অপরাধ মূলক ঘটনা সহ আইনশৃংখলা অবনতি ঘটাতে দ্বিধাবোধ করে না।

উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভুখন্ঠে ঢুকে কক্সবাজার পর্যটন নগরীকে বিভিন্ন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে বানিয়ে কুলষিত করছে। এদের যেকোন মূলে স্বদেশের প্রত্যাবাসন সময়ের দাবিতে পরিণত করেছে। এছাড়াও সরকার রোহিঙ্গাদের পূর্নবাসনে নোয়াখালীর হাতিয়ার চর কে বেঁচে নেওয়ায় এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন