বান্দরবান লামা-আলীকদমে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
তিনদিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রধান সড়ক পানিতে তালিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। অন্যদিকে বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড় ধ্বসের কারণে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবানে প্রবল বর্ষণে সাংঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা শহরের আর্মি পাড়া, ইসলামপুর, বাসস্টেশন এলাকার নিন্মাঞ্চল।
এছাড়া লামা বাজার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা অফিস, থানা ভবনসহ অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতও পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ সব এলাকার হাজরো শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে লামায় অর্ধশত বাড়িঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত খবর পাওয়া যায়নি।
বন্যায় ঘরবাড়ি ও হাটবাজার ডুবে যাওয়ায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ২০ দিনের ব্যবধানে লামা বাজারে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দূর্দশায় পড়েছে। দূর্গতরা বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকজনের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে দূর্গতরা জানান।
এদিকে আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে সহশ্রাধিক মানুষ। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ভারী বর্ষণ অব্যহত থাকায় পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কয় শর্তকতা জারী করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লামা পৌর সভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণে লামা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌর এলাকার বাজার ৫ ফুট পানির নিচে। এতে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা অফিস, থানা ভবনসহ অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতও পানিতে তালিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দূর্গতদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ত্রাণ, নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, সোমবার থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নানা স্থানে পাহাড় ধ্বস হয়েছে। তবে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে।
লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, এবারে বন্যায় বাজার ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক কোটি টাকা। লামা বাজারে একটি আশ্রয় কেন্দ্র করার দাবি জানান।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নায়িরুজ্জামান বলেন, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিস্থিতির অবনতি হলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়গুলোতে খুলে দেওয়া হবে। বন্যা পরবর্তী চেয়ারম্যানদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ত্রাণ ও পূনর্বাসনের জন্য ত্রাণ ও অর্থ চাহিদা করা হবে।
এদিকে ব্যাপক পাহাড় ধ্বসের কারণে রুমা-বান্দরবান সড়ক গত ২২ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে রুমা উপজেলার শত শত মানুষকে নদী পথে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।