বান্দরবান-থানচি সড়কের বেহল দশা

6

থানচি প্রতিনিধি:

বান্দরবান-থানচি সড়কের বেহাল দশা দেখে চিন্তার শেষ নেই থানচি এলাকবাসীর। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তার কারনে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। থানচি যাওয়ার একমাত্র সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে হতাশায় ভূগচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী মহলসহ সকল শ্রেণির পেশার মানুষ।

এলাকাবাসীরা বলছেন, পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ে রয়েছে বান্দরবান থেকে থানছি পর্যন্ত আঁকাবাঁকা সড়কটি। গত বছরে ভারী ও টানা বৃষ্টিপাতের কারনে সড়কটির শতাধিক জায়গায় ক্ষতবিক্ষত ও প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ বিশেষ করে ১০টি স্থানে সড়কটি প্রায় ৯-১০ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে।

উপজেলাবাসীর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জওয়ানরা সড়কটি নির্মাণের কাজ হাতে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করবে সেই সাথে এই বেহাল চিত্র থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মনুষ। কিন্তু গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাস্তার কাজটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাত থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সড়কের অবস্থা দেখে এলাকবাসীরা একে পিতৃমাতৃহীন সড়ক বলে মন্তব্য করছেন।

সেনাবাহিনী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে সড়কের ক্ষতবিক্ষত অংশের মেরামতে জন্য কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী মহল, সাধারণ জনগণ ও সকল শ্রেণির লোকের ধারনা করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে বান্দরবান জেলা সদর ও ৯ কিলোমিটার থেকে ১৭ মাইল পুরানবাংলা পর্যন্ত প্রায় ৮০ ঘনফুট, গ্যালেঙ্গা রাস্তা মাথা ২০০শত ঘনফুট, কাপুর পাড়ায় ৫০ ঘনফুট, নীল গিড়ি পর্যটন হইতে জীবন নগর পর্যন্ত ২ হাজার ঘনফুট, জীবন নগর হইতে বলিপাড়া যাওয়ার পথে কলাই পাড়া নামক স্থানে ৪ হাজার ঘনফুট ও বলিপাড়া হয়ে সাখয় কমন্ডার পড়ায় ৬০ ঘনফুট সড়কের পাশ দিয়ে মাটি সড়ে রির্টানিং ওয়াল ও রাস্তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও আবার দেবে যাওয়ার অংশ দেখে মনে হয় আগামী বর্ষায় মৌসুম না হওয়ার আগে রাস্তাটি মেরামত করার অত্যন্ত জরুরী।

এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা থাকা সময়ে বান্দরবান থেকে চিম্বুক পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার থাকার সময়ে চিম্বুক থেকে থানছি উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটি সেনাবাহিনীর ১৬ ও ১৭ ইসিবি নির্মাণ করেন। ২০০০ সালে দিকে থানছি সদর পর্যন্ত পৌছালে সড়কটিতে লক্করঝক্কর চাঁন্দের গাড়ি চালু হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ‘চিম্বুকের বুকে’ নামে দুইটি বাস চালু হয়।

পরবর্তীতে সাংগু নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করে গত ১৭ই নভেম্বর ২০১১ সালে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্ভোধনের মধ্য দিয়ে সড়কের উভয় দিকে ৫টি বাস চালু হয়।

২০১১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশি বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়সহ দৈনিক ৫ শতাধিক লোক যাতায়াত করেন এই সড়কে।

এ বিষয়ে উপজেলা থানছি বাজার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, দেশি বিদেশিসহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত ছাড়াও উপজেলার সকল শ্রেণির মানুষ, ব্যবসায়ী, খাদ্য সামগ্রী, এলাকায় জুমিয়াদের উৎপাদিত ফসল, কৃষিপণ্য, মালামালসহ অনেক কিছু ট্রাক যোগে আনতে হয়। সড়কটি ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারনে ট্রাক ও জিপের ভাড়া দ্ধিগুন হওয়ার ফলে ক্রেতারা নায্য মূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী বর্ষায় আগে সড়কটি মেরামত করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে।

সাবেক চেয়ারম্যান ক্যসাউ মারমা বলেন সেনাবাহিনী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্বনয়হীনতার কারনে থানছি বান্দরবান সড়কে ক্ষতবিক্ষত অংশের মেরামত বা সংস্কার হচ্ছেনা। এর ফলে প্রায়ই দেশি বিদেশি পর্যটকরা সড়ক দূর্ঘটনায় শিকার হচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, আমি জেলার মাসিক সম্বনয় সভায় জেলা প্রশাসক, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের বহুবার আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোন প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ কেন নেয়া হচ্ছেনা তা আমার বোধগম্য নয়। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে যদি পূন:রায় সেনাবাহিনী নিকট রাস্তার কাজটি হস্তান্ত করা না হয় তাহলে পিতৃমাতৃহীন সড়কটিকে বাচাঁনো সম্ভব হবে না। জেলা সদর সাথে উপজেলা সদর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন