বান্দরবান-থানচি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধস

2

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বান্দরবান-থানচি সড়কের বেহাল দশা দেখে চিন্তার শেষ নেই থানচি এলাকবাসীর। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তার কারনে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। বিশেষ করে থানচি উপজেলার প্রধান সড়কের ১৭টি স্থানে অসংখ্য ধসের কারণে যে কোন সময় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহর থেকে থানচি সদরের দূরত্ব ৮২ কি.মি.। এই সড়ক পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। গত বছরের ২৩ জুলাই টানা বর্ষণের কারণে জেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সড়ক ধসে পড়লে ২৬ জুলাই থেকে জেলার সঙ্গে থানচির এক মাস সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পাবর্ত্যনিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তবে কতৃপক্ষের সমন্বয় হীনতার কারনে এই রাস্তাটি সংস্কার হচ্ছেনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সড়ক পথের ১০টি স্থানে খানা-খন্দক এবং ১৭টিতে ছোট বড় সড়কে ধসের ঘটনা ঘটেছে। সতের মাইল, পুড়াবাংলা, গ্যালেঙ্গা রাস্তার মাথা, কাপ্রু পাড়া, নীলগিরি, জীবন নগর থেকে বলিপাড়া যাওয়ার পথে কলাই পাড়া ও সাখয়পাড়া পর্যন্ত সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে ওয়াল ও রাস্তা ভাঙার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

সড়ক পথের ১০টি স্থানে খানা-খন্দক এবং ১৭টিতে ছোট বড় সড়কে ধসের ঘটনা ঘটেছে। আরও দেখা যায়, কিছু কিছু স্থানে ধস ঠেকানোর জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই ধসের মধ্যে দিয়েই প্রতিনিয়ত যান চলাচল করছে।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে সড়কটির বিভিন্ন জায়গা আগের তুলনায় প্রায় ১০-১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। যান চলাচলের সময় যানবাহনের যন্ত্রাংশ প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। ফলে উপজেলা থেকে কৃষি পণ্য জেলায় আনা ও নিত্য দ্রব্য জেলা সদর থেকে নিতে ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ ভাড়া। ফলে উপজেলায় বাড়ছে নিত্য পণ্যের মূল্য।

থানছি বাজার কমিটি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনতে এখন দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়, ফলে পণ্যের দামও এখন বাড়তি।

থানচির রেমাক্রি, নাফাকুম, বড়মদক, ছোটমদক, অমিয়কুম দর্শনীয় পর্যটন স্পট। প্রতিবছর পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠে স্পটগুলো। ওই স্থানগুলোতে যেতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের এই সড়ক পথ দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু, সড়কের দুরাবস্থার কারণে ও দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উপজেলাটিতে পর্যটদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ফলে বেকার হচ্ছে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Capture 6

থানচিতে কর্মরত পর্যটকদের গাইড ডাবলু বড়ুয়া বলেন, সড়ক ব্যবস্থার কারণে থানচিতে এখন দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক আসছে খুব কম।

এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ক্যসাউ মারমা বলেন সেনাবাহিনী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্বনয়হীনতার কারনে থানছি বান্দরবান সড়কে ক্ষতবিক্ষত অংশের মেরামত বা সংস্কার হচ্ছেনা। এর ফলে প্রায়ই দেশি বিদেশি পর্যটকরা সড়ক দূর্ঘটনায় শিকার হচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, আমি জেলার মাসিক সম্বনয় সভায় জেলা প্রশাসক, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের বহুবার আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোন প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ কেন নেয়া হচ্ছেনা তা আমার বোধগম্য নয়। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে যদি পূন:রায় সেনাবাহিনী নিকট রাস্তার কাজটি হস্তান্ত করা না হয় তাহলে পিতৃমাতৃহীন সড়কটিকে বাচাঁনো সম্ভব হবে না। জেলা সদর সাথে উপজেলা সদর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে সড়ক সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হন্তান্তর করা হয়। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি সংস্কারের কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী এবং সড়ক বিভাগের টানাপোড়েনের কারণে সড়কটি মেরামতের জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

থানচির বলিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যসাউ মারমা বলেন , সড়ক ও জনপথ বিভাগের কারণে সড়কটি এখনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, আমরা উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে খুব হতাশ।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, গত বছর এক মাস বান্দরবান-থানচির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি সড়কটি চালু করে, স্থায়ীভাবে সড়কটি মেরামত না করলে বন্ধ হতে পরে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন