বান্দরবানে হিমাগারের অভাবে পাহাড়ের ফল পাহাড়েই পচছে

Rangamati Mix frut pic01 copy
স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবানে মৌসুমী ফলের ফলন ভাল হয়েছে। হিমাগারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার ফল। সহজ পরিবহন ও সংরক্ষণের অভাবে শুধু আম, পেপে, কাঁঠাল, আনারস নয়- তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতের কোটি কোটি টাকার ফল নষ্ট হচ্ছে। কৃষির বিপুল সম্ভবনা সত্ত্বেও সরকারি বা বেসরকারি উদ্দ্যেগে গড়ে তোলা হয়নি কোন কৃষি পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার।

জেলায় রুমা, লামা, রোয়াংছড়ি, আলিকদম, থানচি, সদরসহ ৭টি উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস  কৃষিপণ্য ও মৌসুমি ফল। বান্দরবানে ধান,গম ছাড়াও উৎপাদিত হয়ে থাকে বিপুল পরিমান আম,আনারস, কাঠাল, কলা, পেপে, কমলা, তরমুজ, জাম্বুরা,শসা আদা, হলুদ, কাচামরিচ, পাহাড়ী মিষ্ঠি কুমড়াসহ হরেক রকম কৃষি পণ্য। আর এই কৃষিপণ্য ও মৌসুমি ফল বিক্রি করে জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবন চলে। কিন্তু পণ্য সংরক্ষনের কোন ব্যাস্থা না থাকায় কৃষকরা স্বপ¬দামে ব্যাপারীর হাতে তুলে দেয়। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় কোন হিমাগার ও জুস প্লান্ট না থাকায় উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এসব মৌসুমী ফল উৎপাদিত হয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। তাই অনেক কষ্টের উৎপাদিত পাকা ফলমুল সময়মত চাষীরা বাজারে নিয়ে আসতে না পারায় পাহাড়ের ফল পাহাড়েই পচে যাচ্ছে।

স্থানীয় ফল চাষীরা জানায়, এ মৌসুমে পাহাড়ে আম, লিচু, আনারস, কাঠালের ফলন ভাল হয়েছে।কিন্তু  উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উৎপাদিত আধা পাকা-পাকা ফলমূল শহরের বাজারে নিয়ে আসতে আসতে অর্ধেক পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিবারের মতো এ মৌসুমেও লিচু, আম, কাঠাঁল, কলা, আনারসসহ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মৌসুমী ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে কৃষকেরা। পরিবহন সংকট ও বাজারজাতকরণের অভাবে সঠিক সময়ে ন্যায্য মূল্য বিক্রি করতে না পেরে অনেক কৃষকই অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এর সুফল ভোগ করছে অন্য জেলা থেকে আগত ফারিয়া-দালাল ও দাদন ব্যবসায়ীরা। তারা সল্প মূল্য ক্রয় করে জেলার বাইরে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কম দরে বেপারীদের কাছে বিক্রি করতে হয় বলে লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছে কৃষকরা।

বান্দরবানে কৃষিপন্যকে ঘিরে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও উদ্যােক্তার অভাবে গড়ে না উঠায় কৃষকরা কৃষিপণ্য বিক্রি করে আশানুরুপ লাভবান হচ্ছেন না। শহরের বালাঘাটায় কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য হাতে নেওয়া বিসিক শিল্প নগরীও আলোর মুখ দেখেনি ১৫ বছরেও।

কৃষি বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় আমসহ নানা মৌসুমি ফলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু বাজারজাতে নানা সমস্যার কারণে উৎপাদিত মৌসুমি ফল বেশিরভাগ বাগানেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে পার্বত্যাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি আগ্রহ হারাছে মৌসুমী ফল চাষীরা।

অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে হিমাগার স্থাপনের দাবি তোলা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে মুখে বিভিন্ন কথা বললেও কার্যত কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, মৌসুমি ফলের ফলন ভাল হলেও স্থানীয়ভাবে কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় কৃষকদের মৌসুমী ফলের বিরাট একটি অংশ পচে যাচ্ছে।যোগযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় সঠিক সময়ে পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূল বাজারজাত করা যাচ্ছে না। জেলায় একটি হিমাগারের প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক আগেই সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন