বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর চরে বাদাম আর বাদামের চাষ
স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর চরে বাদাম তোলার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছে চাষীরা। বেলে-দো আঁশ মাটিতে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষীরা ঝুঁকছেন বাদাম চাষে।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছর অক্টোবর শেষে অথবা নভেম্বরের শুরুতে বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই বাদাম তোলা শুরু করে। শুরুতে জমিতে হাল চাষ দিয়ে সামান্য মাটি নরম করে দিতে হয়। আগাছা পরিস্কার করে সারি সারি করে লাগানো হয় বাদামের বীজ। মাটি উর্বর তাই দিতে হয় না অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক। তিন মাসের মধ্যেই পুষ্টি বাদাম ফলে তাই অল্প খরচে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষীরা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ৬১১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হযেছিল। চলতি বছর ৫৭ হেক্টর বেড়ে ৬৬৮ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। সাঙ্গু নদীর চরে বেলে-দোঁ আশ মাটি থাকায় এই মাটিতে বাদামের বাম্পার ফলন হচ্ছে। তাই তামাকের বদলে বাদামের চাষ দিন দিন বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, বান্দরবানে পাঁচ জাতের বাদাম চাষ করা হয়ে থাকে। তিন দানা, ঝিঙ্গা, বারি-৫, ঢাকা-১, বারি-৫ ও স্থানীয় জাতের। তিন দানা ও ঢাকা-১ বীজে ফলন বেশি হওয়ায় এ জাতের চাষ করে চাষীরা।
তিনি আরো জানান, প্রতি বছর বন্যায় সাংগু নদীতে প্রচুর পলি মাটি জমে। বাদাম চাষের উপযোগী মাটি পাওয়ায় কৃষকেরা অধিক লাভের আশায় বাদাম বীজ বপণ করে। এক বিঘা জমিতে ১৮ কেজি বাদামের বীজ বপণ করলে ৭ থেকে ৮ মণ উৎপাদন হয়। বান্দরবানের আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী হওয়ায় কম খরচে অধিক লাভ তাই চাষীরা বাদাম চাষে ঝুঁকছে।
বাদাম চাষী জয়নাল জানান, বাদাম চাষে কম খরচে অধিক লাভ। বর্গা জমিতে চাষ করেও লাভবান হয়েছেন।
বাদাম চাষী ইসমাইল বলেন, বাদাম চাষে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। নদীর পাড়ে চাষ করে তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তুলে বিক্রি করতে পারি। পরিবারের সদস্যরা বীজ বপণ থেকে বাদাম তোলা পর্যন্ত কাজ করে।
বালাঘাটা বিলকিছ বেগম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ঝর্ণা বেগম জানান, পরিবারের সাথে সময় দিয়ে প্রায় সময় বাদামের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করি। পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প করতে করতে বাদাম তোলার কাজে সাহায্য করি। এছাড়া বাদাম গাছ গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি।
একাধিক বাদাম চাষী জানিয়েছেন, বাদাম চাষে সরকারিভাবে বীজ, সার সরবরাহ করা হয়না। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পাওয়া যায়। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঝণ নিয়ে বাদাম চাষ করি। বাদামে লাভ বেশি তাই লোন পরিশোধে তেমন কষ্ট হয়না। এই বাদাম চাষে কৃষকরা সরকারী সুযোগ সুবিধা পেলে এলাকায় বাদামের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত।