বান্দরবানে বাতাসে তামাকের নিকোটিন!

নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান:

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাতাসে ভাসছে তামাকের বিষাক্ত নিকোটিন। তামাক পোড়ানোর মৌসুমে নিকোটিনের প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। পাশাপাশি শিশুরা রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। কিন্তু তামাক পোড়ানো ও শুকানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যত কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।

পার্বত্য এলাকায় শুরুতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ পাহাড়ে মশার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য বসতির পাশে তামাক চাষ করত।

বর্তমানে বান্দরবান জেলায় এ তামাক চাষ সীমাহীন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিওবা ২০১০ সালের নভেম্বরে বান্দরবান জেলা জজ আদালত তামাক চাষের জন্য জমির নির্দিষ্ট আয়তন করে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে বান্দরবানের ৭ উপজেলায় গত ৯ বছরে অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক চাষ বৃদ্ধি পেলেও তামাক পোড়ানোর জায়গা রয়েছে ঠিক আগের মতোই।

বিশেষ করে জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদরে তামাক চাষ করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ। এছাড়াও দূর্গম রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতেও নতুন নতুন কৃষি জমিতে তামাক চাষ বিস্তার ঘটেছে। আর এই তামাক বিস্তার করেছে বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আবুল খায়ের ও ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি।

সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের শেষের দিকে তামাক পুড়ানোর বিষাক্ত নিকোটিন বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তামাকের ক্ষতিকারক নিকোটিনের প্রভাবে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের মাঝে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ অধিকাংশ গ্রামেই তামাক পোড়ানোর জন্য অন্তত দুই হাজারের অধিক তামাক তন্দুল নির্মাণ করা হয়েছে। এসব তামাক তন্দুলের আগুনের তাপে তামাক শুকানোর সময় ধোঁয়া বাতাসের সাথে নিকোটিন মিশে এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিছামারা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল পড়–য়া জয়নাল আবেদীন জানান, তামাক তন্দুলের পাশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলে কারো ধুমপান করার প্রয়োজন নেই, তারা এমনিতে ধুমপানে আসক্ত হয়ে যাবে

লামা পৌর এলাকার বাসিন্দা জুহুরা বেগম, চিংহ্লাউ মার্মা জানান, পেটের দায়ে তামাক করি। কিন্তু আমাদের শিশুরা তামাক পুড়ানোর মৌসুমে তামাকের গন্ধ (নিকোটিন) নিয়েই আসক্ত হয়ে পড়ছে।

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা: অং সুই প্রু মারমা জানান, তামাকে রয়েছে নিকোটিন যা মানবদেহের অপূরণীয় ক্ষতি করে। তবে শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। তাই তামাক যেখানে সেখানে রোদে না শুকিয়ে নির্ধারীত স্থানে শুকানোর ব্যবস্থা করা দরকার।

জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি জানান, তামাক চাষীদের নিরুৎসাহিত করতে চাষের শুরুতেই চিঠি দেয়া হয়েছিলো। কৃষি অফিসকে সজাগ থাকতেও বলা হয়েছিলো।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের নিকোটিন মেশানো বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাসে ক্ষতির সম্মুখীন হন অধূমপায়ীরাও। নিকোটিনের বিষক্রিয়া প্রথমে ফুসফুস ও পরে রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে যায়।

জনবসতি গ্রামের ভিতর থেকে তামাক কোম্পানির তন্দুল সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী মহল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবানে বাতাসে তামাকের নিকোটিন!
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন