বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে নিখোঁজদের উদ্ধার করা যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবন-রুমা সড়কের দৈালিয়ান পাড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সোমবার সকাল থেকে ফের অভিযান পরিচালিত হয়। উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনা সদস্য, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা। এদেরকে সহযোগিতা করছে রুমা এলাকার আরো ৬টি পাহাড়ি পাড়াবাসী। নিখোঁজদের তালিকা গতকালের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাটি চাপায় নিখোঁজরা হলেন রুমা উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী মুন্নি বড়ুয়া (৪৫), রুমা উপজেলা পোস্ট মাস্টার জাবিউল আলম (৪৫), রুমা কৃষি ব্যাংক কর্মচারী গৌতম নন্দী (৪০) গৃহবধু চিংমে মারমা (৩০) এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরো তিনজন শ্রমিক।

নিখোঁজ মুন্নি বড়ুয়ার ১০ বছরের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জেসিকা বড়ুয়া খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ঘরের দরজায় চেয়ার পেতে মায়ের অপেক্ষায় বসে। পরিচিত কাওকে দেখলে শুধু মায়ের কথা জিজ্ঞাস করে আর দেয়ালে ঝোলানো মায়ের ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে জেলার রুমা উপজেলার ২৬ কিলোমিটার দুর দৌলিয়ান পাড়া এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। রুমার বাসিন্দা চিংমেহ্লা মারমা তরুনীর লাশ উদ্ধার করে সৎকার করা হয়েছে। আর আহত চারজন রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে রুমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা জানান, গাড়ি থেকে নেমে, ওই এলাকায় হেঁটে পারাপারের সময় পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন চারজনসহ মোট সাত জন যাত্রী। অজ্ঞাতনামা তিনজন যাত্রী শ্রমিক উল্লেখ করেন তিনি।

উদ্ধার অভিযান ভারী বৃষ্টি ও আলো সল্পতার কারণে রোববার সন্ধ্যায় বন্ধ রাখা হয়। সোমবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শরু হলেও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে প্রায় ৪০০ ফুট লম্বা মোটা রশিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন।

নিখোঁজ মুন্নি বড়ূয়ার ভাই স্থানীয় সাংবাদিক ছোটন বড়ূয়া বলেন, রবিবার সকালে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থালে যায়। উদ্ধারকারীরা যখন আমার বোনের ভ্যানিটিব্যগটি পায় তখন জানতে পারি আমার বোন মাটি চাপায় আছে। সোমবার সকাল থেকে সেনা সদস্য ও দমকলকর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালালেও বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ ব্যবহত হচ্ছে। এখনো হালক হালকা পাহাড় ধ্বস হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে পুরোদমে অভিযান চালানো সম্ভব।

স্থানীয়রা জানান, রবিবার চিংমেহ্লা মারমা মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার নিচে পাহাড়ি ঝিড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড় ধ্বসে মৃতদেহ গুলো যদি ঝিড়িতে পড়ে যাই হয়ত ঝিড়ির স্রোতের টানে সাঙ্গু নদীতে যেতে পারে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিক উল্লাহ বলেন, উদ্ধার অভিযান চলছে। উদ্ধার অভিযান সম্পূর্ণ হওয়ার পর কতজন মারা গেছে তা জানাতে পারব।

এদিকে তিনদিনের টানা বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া এলাকার সড়ক বন্যার পানিতে তালিয়ে যাওয়ায় এবং বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কের পলুপাড়া এলাকার বেলী ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

অন্যদিকে লামার গজালিয়া ইউনিয়নের বমু খালে পানিতে ভেসে আসা জাবের আহমদ (৪৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ সোমবার সকালে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। সে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মালুম্যা এলাকার মোজাফফর আহমদের ছেলে।

জানা গেছে, রবিবার বিকালে স্থানীয় মো. ইব্রাহিম ও নিহত জাবের এক সাথে লুলাইং খাল পারাপারের সময় স্রোতের টানে ২জন ভেসে যায়। ইব্রাহিম কোনমতে তীরে উঠলেও জাবের আহমদকে পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে জাবেরের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন