বান্দরবানে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত

Bandarban porjoton pic-9.10

নিজস্ব প্রতিবেদক:
একদিকে শীতের আগমনী অন্যদিকে প্রকৃতির নির্মল ছোয়া পেতে ঈদ ও প্রবারণা পূর্নিমাকে ঘিরে দেশী বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত বান্দরবান।

প্রকৃতির নির্মল ছোয়া পেতে পাহাড়ী বান্দরবানে ছুটে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা। দেশী-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠছে পাহাড় কন্যা বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউস এবং গেস্ট হাউসগুলোতে সিট খালি নেই। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকের ভীড় জমাচ্ছে বান্দরবান জেলায়।

তবে এখানকার অপার সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন, নিরাপত্তা এবং পর্যটন স্পগুলোর আরও উন্নয়নের দাবি পর্যটকদের। সরকার এবং স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাবে পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পরিকল্পিত উন্নয়নই এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একারণে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নিরাপত্তা এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করার দাবী জানিয়েছেন পর্যটকরা। ঢাকা থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটক সফি উল্লাহ ও আবিদুর রহমান দম্পতি জানান, বান্দরবানে পাহাড় আর পাহাড় দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সব চেয়ে বেশী মুগ্ধ হয়েছি নীলাচলে গিয়ে। বান্দরবান জেলার পর্যটন স্পগুলোর প্রচারে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার।

এছাড়াও সড়ক যোগাযোগ এবং পর্যটকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে পর্যটকের ভীড় আরো বাড়বে। অপরদিকে জেলা প্রশাসন এবং হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতারা পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে ভূমি জটিলতায় পর্যটন শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারিভাবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজার চারটি জেলাকে সসম্পৃক্ত করে নেওয়া প্যাকেজ উন্নয়ন পরিকল্পনা দীর্ঘ পাঁচ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়াও ২০০৯ সালে পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পটগুলো পরিদর্শন করে বান্দরবানে নীলাচল থেকে স্বপ্নচূড়া, চিম্বুক পাহাড় থেকে জীবন নগর পর্যন্ত দুটি এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে আরও তিনটি ক্যাবল কার নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের উদ্যোগটি এখনও শুধু পরিকল্পনা এবং পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন স্পটগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন ঘটে। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। জেলা সদরের অদূরে মেঘলায় রয়েছে প্রাকৃতিক লেকের উপর দুটি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু। যা দেশের অন্য কোথাও নেই। মেঘলায় আরো রয়েছে মিনি সাফারী পার্ক, শিশুপার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকের মন ভোলানো সমস্ত আয়োজন। স্বর্ণ মন্দির, পর্বত চুড়া এবং ভিন্ন ভাষার এগারোটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি এই জেলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণে।

এছাড়াও জেলা সদরের চার কিলোমিটার দুরে আকর্ষণীয় নীলাচল পর্যটন স্পট যেখানে পাহাড়ের সাথে আকাশ মিতালী গড়েছে। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক নীলাচলে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এ জেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সাকাহাফং, তাজিংডং বিজয়, ক্যাওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। এ দুটি পর্বত শৃঙ্গই রুমা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় এবং জেলা শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পট। যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

এদিকে পর্যটক আব্দুলাহ জানান, আমি জীবনে প্রথম পাহাড় দেখেছি, পাহাড় দেখতে বান্দরবান এসে আমি অবাক হয়েছি। এখানে পাহাড়ের সাথে আকাশের মিতালী এবং মেঘের খেলা দেখে অনেক ভাল লাগছে। সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি।

এছাড়াও রয়েছে রিজুক ঝর্ণা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। শহরের অদূরে শৈল প্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়। জেলার শহরের বালাঘাটা এবং কালাঘটায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান খ্যাত বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ ও রামা জাদি নামে দুটি পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুনমাত্রা। এখানে রয়েছে মারমা, ত্রিপুরা, ¤্রাে, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক এবং লুসাইসহ ১১টি পাহাড়ী সম্প্রদায়ের বসবাস। দেশের অন্যকোথাও এতগুলো পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বসবাস নেই। পাহাড়ীদের বৈচিত্র্যময় জীবন চিত্র যে কারো মনকে উৎফুল্ল করে।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে.এম তারিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি স্থান বান্দরবান। শুধু শীত নয়, বর্ষায় পাহাড় হয় আরও সুন্দর, সবুজ এবং বৈচিত্রময়। পর্যটন শিল্পের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, আইন শৃংঙ্খলা এবং আবাসনেও নতুন নতুন বেশকিছু কটেজ, হোটেল-মোটেল এবং গেস্ট হাউস হয়েছে। নীলাচলের পর এবার শৈল প্রপাতের সৌন্দর্য্য বর্ধনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের আবাসন, যানবাহন এবং খাওয়ার রেষ্টুরেন্টগুলোতে পর্যটক হয়রানী বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কাজি মজিবর রহমান জানান, ঈদ-পুজা-প্রবারণা পূর্নিমা উপলক্ষে বান্দরবানে পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়েছে। শুক্র-শনি বন্ধ থাকায় আরো পর্যটকের ভীড় বাড়বে বলে তিনি জানান।

টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে জেলায় আসা পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে শহরের হোটেল- মোটেল, চাঁদের গাড়ি প্রায় অগ্রিম বুকিং করেছে পর্যটকরা। কিন্তু আবাসন সঙ্কটের কারণে পর্যটকরা হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউসগুলোতে সিট না পেয়ে দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়িদের মাচাং ঘরগুলোকে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জায়গা পরিমাপ করে সংরক্ষণের পাশাপাশি পর্যটকবান্ধব গড়ে তুলতে জেলার ৭টি পর্যটন কেন্দ্রকে সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হলেও পর্যটন কেন্দ্র গুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অনুপযুক্ত, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা, টয়লেট সুবিধা না থাকা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার দূরবিন না থাকায় পর্যটকরা তাদের দুর্ভোগের নিরষনের উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “বান্দরবানে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত”

  1. যাওয়ার ইচ্ছা আছে… সংবাদটা জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন