বান্দরবানে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের হাতছানি
স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানিতে কুমির চাষ প্রকল্প। এ প্রকল্প সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা গেলে কুমির রপ্তানি করে বাংলাদেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব কুমির দেখতে ভীড় করে প্রতিদিন শতশত দশনার্থী।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বালুখালী টেলিভিশন উপ-কেন্দ্রর কাছাকাছি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকায় ২৫ একর জায়গার উপর মিঠা পানিতে কুমির চাষ প্রকল্পটি ২০০৯ -২০১০ সালে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আকিজ ওয়াল লাইফ লিমিটেড। পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০টি কুমির ছাড়ে জলাশয়ে। শুরুতে পরিচর্যার অভাবে ৩টি কুমির মারা গেলেও ৪৭টি বড় কুমির সুস্থ আছে। স্বল্প সময়ে ৩১টি মাদি কুমিরের ডিম থেকে সাড়ে ৬শ’ বাচ্চা ফুঠেছে। বাচ্চাগুলো সুস্থ রয়েছে বলে জানান পরিচর্যাকারী।
কুমির চাষ প্রকল্পের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, কুমির চাষ ব্যয় বহুল। প্রতি মাসে খাবার বাবদ ব্যয় হয় দেড় লাখ টাকা। প্রতি সপ্তাহে কুমিরদের খাবার হিসাবে ২’শ কেজি মাছ-মাংস খেতে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাচ্চা কুমিরদের মাংস কেটে কেটে কিমা বানিয়ে খাওয়াতে হয়।
তিনি জানান, গত ২ বছরে ৩১টি মাদি কুমিরের ডিম থেকে সাড়ে ৬’শ বাচ্চা হয়েছে। তারমধ্যে বিভিন্ন কারনে ১১টি বাচ্চা মারা গেলেও বাকি বাচ্চাগুলো সুস্থ আছে। আগামী বছর থেকে বিভিন্ন দেশে কুমির রপ্তানি শুরু হবে। এ থেকে হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এখাতে যেমন প্রচুর বৈদেশি মুদ্রা আয় হবে তেমনি সরকারও পাবে প্রচুর রাজস্ব। কুমির গুলো প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠায় প্রকল্পের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে ময়মনসিংহের ভালূকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়ানে একটি করে কুমির চাষ প্রকল্প থাকলেও এটি দেশের সর্ববৃহৎ ও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্প বলে তিনি জানান।
কুমির চাষ প্রকল্পের পরিচর্যাকারী মো. আজিজ জানান, প্রকল্পে থাকা মিঠা পানির মাদি কুমির গুলো গড়ে ৫০-৫৫টি ডিম ছাড়ে। এসব ডিম সঠিক রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য সব সময় নজর রাখা হয়। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা সম্ভব। এখানে একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন স্পট হলে ঘুমধুম একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিণত হবে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, কুমির প্রকল্পটির সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। কুমিরের চিকিৎসা ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়।
স্থানীয় মো. আলী জানান, প্রতিদিন শত শত দর্শনাথী কুমি দেখতে ভীড় করে। তবে এখানে যাতায়ত ও খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কুমির চাষের পাশাপাশি এ এলাকায় বিভিন্ন প্রজাপতি মাছ চাষ, বার্ড পার্ক ও মিউজিয়াম গড়ে তুললে পর্যটন স্পট হিসাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আর্কশনীয় স্থান হতে পারে বলে স্থানীয়দের পর্যটন শিল্পের সংলিষ্টদের ধারণা।