বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজ পুণ্যাহ শুরু

Bandarban pic-5 19.12

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানে ঐতিয্যবাহী রাজ পুণ্যাহ শুরু হয়েছে। শহরের পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে ১৭তম বোমাং রাজা প্রকৌশলী উচ প্রু চৌধুরী শুক্রবার সকলে অস্থায়ী রাজমঞ্চে হেডম্যান, কারবারী ও প্রজাদের কাছ থেকে রাজকীয় কায়দায় খাজনা আদায়ের মধ্য দিয়ে রাজ পুণ্যাহর সুচনা করা হয়। মার্মা সম্প্রদায়ের কাছে রাজপুণ্যাহ উৎসব ‘পইংজারা পোওয়ে’ নামে পরিচিত।

এর আগে হাতে স্বর্ণখচিত তলোয়ার, রাজকীয় পোশাক পরে, সৈন্য সামন্ত বেষ্টিত হয়ে বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী রাজ প্রাসাদ থেকে অতিথিদের নিয়ে পায়ে হেঁটে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠের মঞ্চে আসেন।

এসময় পাহাড়ী বাদ্যযন্ত্রের সুর, অন্যদিকে পাহাড়ী তরুণীরা রাস্তার দু পাশে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে রাজাকে বরণ করে নেয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপূর্তমন্ত্রী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, তিন পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, নিখিল কুমার চাকমা, চাইশৈ অং, জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার দেবদাশ ভট্টাচার্য্য, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট ফারুক আহম্মেদ, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি নিক চেস্ট ফোর্ড প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Bandarban pic-1 19.12

বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী জেলার প্রত্যেক পাড়ায় স্কুল, উপজেলায় হাইস্কুল-কলেজ এবং বান্দরবানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান। তিনি দুর্গম পাহাড়ে বাঁধ দিয়ে বসবাসকারীদের বিশুদ্ধ পানি সমস্যা সমাধানে ও মাছ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে পাড়ায় পাড়ায় পুকুর স্থাপনের দাবী জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, সমতলের মানুষ ট্যাক্স ফাঁকি দিলেও তিন পার্বত্য জেলার মানুষ (১৮৭৫ সাল) থেকে ১৩৭ বছর ধরে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ক্রমান্নয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। তখন পাহাড় সরকারের বোঝা হবে না পর্যটন খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

১৩৭তম রাজ পুণ্যাহ উপলক্ষে জেলার ১১টি পাহাড়ী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় অনুষ্ঠানস্থল। এ ছাড়া দেশি- বিদেশী পর্যটকরাও সেখানে ভিড় জমান। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, নগরদোলাসহ কয়েকশ স্টল বসানো হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে তহশিলদার প্রথা নেই। সরকারের পক্ষে রাজারাই বার্ষিক খাজনা আদায় করেন। আদায়কৃত খাজনার ৩৭ শতাংশ রাজা, ৩৭ শতাংশ মৌজা হেডম্যান এবং অবশিষ্ট অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষে ভূমিকর আদায় উপলক্ষে বোমাং সার্কেলে প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। রাঙামাটি জেলার ১৪টি মৌজাসহ বোমাং সার্কেলভুক্ত ১০৯টি মৌজার হেডম্যান-কার্বারিরা রাজপ্রথা অনুসরণ করে এদিনে সার্কেল চিফ বা রাজাকে আনুষ্ঠানিক প্রণাম জানিয়ে কর পরিশোধ করেন।

এদিকে দুরদুরান্ত থেকে আগত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের হেডম্যান, কার্বারিসহ সাধারণ লোকজন রাজার মাঠে রাজাকে শুভেচ্ছা জানাতে মুরগি, মদের হাঁড়ি, চাল, ধান, বাগানের ফলমুল ইত্যাদি উপঢৌকন নিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন।

স্থানীয় রাজার মাঠে তিনদিনব্যাপী রাজপুণ্যাহ বা মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন