Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বাঘাইছড়িতে চালকদের সাহসিকতায় সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যায় অর্ধশতাধিক প্রাণ

মো: জুয়েল, সাজেক:

যে সময়ে চালকদের হঠকারিতা, বেপরোয়া আচরণে সারাদেশে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি করে তাজা প্রাণ ঝড়ে পড়ছে, যে মুহুর্তে সারা দেশে চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে ব্যাপক আন্দোলন হচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দায়িত্ব ও কর্তব্য পরায়ণতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বাঘাইছড়ির তিন জিপ চালক। তাদের প্রত্যুৎপন্নমতিতা ও কর্তব্য পরায়ণতার কারণে সন্ত্রাসীদের গুলি থেকে বেঁচে যায় অর্ধশতাধিক প্রাণ।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে সাজেকের কংলাক, বাঘাইহাট ও মাচালং ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হন অনেকেই, প্রাণে বেঁচে যায় অর্ধশতাধিক লোক।

১৮মার্চ সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাঘাইছড়ি ফিরছিলেন ওই তিনটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা।

তাদের বহনকারী তিনটি গাড়ি দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কের নয় কিলোমিটার এলাকায় পৌঁছানোর পর রাস্তার পাশে ও পাহাড়ের উপরে ওঁত পেতে থাকা অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা ব্রাশফায়ার করে বহনকারী জিপগাড়ীর ওপর।

তবে তিনজন জিপগাড়ী(স্থানীয় নাম- চাঁন্দের গাড়ি) চালকের বীরত্ব ও সাহসিকতায় অনেক মানুষ প্রাণে বেঁচে যান। ওই তিনজনের নাম মো: রুবেল, আল-আমিন এবং ইসমাইল হোসেন।

পার্বত্যনিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এই নায়করা তাদের সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তারা।

সম্প্রতি চিকিৎসার খোঁজ নিতে গুলিবিদ্ধ চালকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় অপর প্রান্তে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসমাইল হোসেন। কান্না ভেজা কন্ঠে পার্বত্যনিউজকে বলেছিলেন, আমরা সর্বমোট চারটি গাড়ী একসাথে রওনা করি। ৯কিলো পৌছালে আমাদের গাড়ীতে বৃষ্টিরমতো গুলি আসতে থাকে, আমার সামনে তিনটি গাড়ী, আমার গাড়ী ছিল সর্বশেষ গাড়ী, ঐ সময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই আমার গাড়ীতে দুজন নিহত হন এবং আমিও ঐসময় গলায় গুলিবিদ্ধ হই। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়ী চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল, আমি তখন ভেবেছিলাম আমার গাড়ীত ২৪জন লোকছিল, যদি নিজের জীবনও চলে যায়, তারপরও যতগুলো প্রাণ বাঁচাতে পারি এমন প্রচেষ্টায় গাড়ী না থামিয়ে চালাতে থাকি এবং গাড়ীতে থাকা আহত-নিহত সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে যাই।

সেখানে গাড়ী থেকে যখন একের পর এক লাশ বের হচ্ছিল এবং আহতদের রক্তভেজা শরীরে আহজারি দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কি হয়েছে আমার মনে নেই। আর এখন ঐদিনের ঘটনা শুধু চোখের সামনে স্মৃতি হিসেবে বারবার ভেসে উঠছে।

সেদিন জীবন বাজি রাখা আরেক চালক মো. আল অমিন। তার সাথে কথা বললে তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, নয় কিলোতে পৌঁছানো মাত্র কিছু বুঝে উঠার আগেই পাহাড়ের পাশ থেকে অতর্কিত গুলি আসতে থাকে। এর মধ্যেই আমার পাশে থাকা পুলিশের এসআই গুলিবিদ্ধ হয় পরপর গাড়ীতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হতে থাকে। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। তার মধ্যে আমার গাড়ীর হেলপারও গুলিবিদ্ধ হয়। আমি তখন অধিক গতিতে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। আর সেদিন আল্লাহর রহমতে আমার কিছু হয়নি, এখন শুধু সেদিনের ঘটনা আমাদের সারা জীবন তারা দিয়ে থাকবে হৃদয়ে।

অপরদিকে চালক রুবেল বলেন, নির্বাচনের দিন দায়িত্বে থাকা আমাদের তিনটি গাড়ী বিজিবির প্রহরায় বাঘাইছড়ি যাচ্ছিলাম। এসময় গাড়ী বহরের মধ্যে বিজিবির গাড়ী সামনে ছিল। বিজিবির গাড়ীর পিছনের গাড়ী ছিল আমার, নয় কিলো পৌঁছামাত্র আমাদের গাড়ী বহরের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তবে গুলিবর্ষণ শুরু হওয়ার আগে ঘটনাস্থল থেকে আমার গাড়ী এবং বিজিবির গাড়ী পার হয়ে যায়। তবে তারা আমাদের লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকে। পিছনে থাকা দুটি গাড়ীতেও তাদের গুলি চলতে থাকে।

ওই ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া মাথায় গুলি লাগা আনসার-ভিডিপির কমান্ডার কবির হোসেন ও  আহত পুলিশের এসআই রজব আলী বলেন, দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে পাহাড়ের ওপর এবং দুই পাশ থেকে অতর্কিতভাবে বৃষ্টির মতো গুলি আসছিল। ঘটনাস্থলেই নিহত দুজন এবং ভেতরের সবাই গুলিবিদ্ধ হওয়ায় আমাদের হাতে অস্ত্র থাকলেও পাল্টা জবাব দেয়ার সুযোগ হয়নি।

আমার মাথায় এবং পায়ে গুলি লাগে। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছি। তবে আমাদের এই বেঁচে যাওয়া সৃষ্টিকর্তার পরে চালকদের দুঃসাহসেই ছিল প্রধান অবদান।

তিনি আরো বলেন, ঐদিন চালকদের সাহসিকতায় অর্ধশতাধিক লোক প্রাণে বেচেঁ যায়। তারা যদি ঐসময় ভয়ে গাড়ী থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করত হয়তো গাড়ীতে থাকা সকলের ই প্রাণ যেত বন্দুকধারীদের হাতে। আমাদের অবাক লাগে চালক ইসমাইল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও কিভাবে গাড়ী চালিয়ে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলো। তার এই সাহসিকতা আমাদের সকলের জীবন দানের উছিলা মাত্র। আমরা তার দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি এবং তাদের এই সাহসিকতার জন্য সরকারের নিকট পুরষ্কার ঘোষণার দাবি করছি।

এদিকে চালকদের দু:সাহসের জন্য বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাদিম সরোয়ার বলেন, চালকের বীরত্ব ও সাহসিকতায় অনেক মানুষ প্রাণে বেঁচে যান, তাদের সেই বীরত্ব সাহসিকতা এখন উপজেলার সকলের মুখে মুখে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চালকদের এই সাহসিকতার জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে আমি আমার ওপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গুলিবিদ্ধ চালক গাড়ী চালিয়ে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে! দু:সাহসে বেঁচে যায় অর্ধশতাধিক প্রাণ!
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন