বাঘাইছড়িতে আট খুনের হামলার জন্য জেএসএস প্রার্থীকে দায়ী

প্রণব বল, চট্টগ্রাম:

ভোট বর্জনকারী দোয়াত-কলম প্রতীকের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ভোটকেন্দ্রের গাড়িতে এলোপাথাড়ি গুলি করেছিল। নির্বাচন নিয়েই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে হামলার কারণ এবং হামলাকারীদের বিষয়টি উঠে এসেছে।

গত ১৮মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শেষে সন্ধ্যায় তিনটি কেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাঘাইছড়ি সদরে ফেরার সময় ৯ কিলো নামক স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে সাতজন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা যায়। আহত হন অন্তত ২৫ জন।

এ ঘটনার পর স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তীকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান এর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এরপর তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর কথা।

বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে অনেক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সাতটি কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট। হামলার জন্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জনসংহতি সমিতির (জেএসএস)বড় ঋষি চাকমার সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের দায়ী করা হয়েছে। ১৮ মার্চ ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর পর অনিয়মের অভিযোগ এনে বড় ঋষি চাকমা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তার প্রতীক ছিলো দোয়াত কলম।

কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন গোপনীয় বিষয়। তবে নির্বাচন বর্জনকারী দোয়াত-কলম প্রতীকে দুর্বৃত্তরা এই হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে, এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে হামলার সম্ভাব্য কারণ এর মধ্যে কেন্দ্রের গাড়িতে অন্য প্রার্থী জেএসএস (এমএন লারমার)সুদর্শন চাকমার এজেন্ট ও কর্মী থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তাদের কারণে গাড়িগুলোতে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।মূলত নির্বাচনী বিরোধই এই হামলার অন্যতম কারণ বলে কমিটি মনে করছে।

বাঘাইছড়িতে সুদর্শন চাকমা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। তাকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় ঘোড়া প্রতীক এর কর্মী কেন্দ্রের গাড়িতে ছিলেন বলে অভিযোগ। মন্টু চাকমা নামের এক কর্মী গুলিতে মারা যায়। স্ট্রং চাকমা নামের অপর একজন আহত হন।

এছাড়া বাঘাইহাট থেকে তিনটি কেন্দ্রের গাড়ি রওনা দেওয়ার সময় আরেকটি চাঁদের গাড়ীতে ঘোড়া প্রতীক এর লোকজন ছিল বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন। মাঝপথে ওই গাড়ি দীঘিনালার দিকে চলে যায়।

তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, হামলার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে ভোট বর্জন ও কেন্দ্রের গাড়িতে ঘোরা প্রতীকের এজেন্ট থাকা অন্যতম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে জেএসএস প্রার্থী চাকমার বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, ৩ পাহাড়ে একসাথে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের উল্লেখযোগ্য।হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তিনটি চাঁদের গাড়ির চালকেরা গুলি করার কারণে সাহসিকতা দেখিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে আসার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে কমিটি। যদিও ওভাবে না আসত, তাহলে আরো বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।এ কারণে চালকদেরও পুরস্কৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিটির সদস্যরা জানান, হামলার এক একটি ঘটনা ঘটিয়ে সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পাড়ি দেয়। এটা যাতে করতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এছাড়া পাহাড় স্পর্শ কাতর একটি জায়গা। ওখানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় কাজ করে। এছাড়া আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা গেলে পাহাড়ে চলমান সংঘাত বন্ধ হবে বলেও কমিটি মনে করে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন