বাংলাদেশে গনমুখী শাসন ব্যবস্থা কায়েম না হলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ও বাঙালি কোন নারীরাই নিরাপদ নয়

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বাংলাদেশে গনমুখী শাসন ব্যবস্থা কায়েম না হলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ও বাঙালি কোন নারীরাই নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।

রবিবার বিকাল ৩টায় দি ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বাঙালি নারীদের চেয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা জাতিগতভাবে অধিক নিপীড়নের শিকার। বৈষম্যমূলক এ সমাজে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কঠিন ব্যপার।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চলনায় ফাল্গুনী ত্রিপুরা আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াক, কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর আয়োজনে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েন, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক কমিশনের সদস্য ও নিজেরা করি’র সম্বন্বয়কারী খুশি কবির এবং সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বহুত্ববাদকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা আজ একমূখী হতে চলেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্তিকরণ অনেকটাই বিন্দুর মাঝে সিন্ধু খোঁজার মত। আদিবাসীদের সঠিক উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে অদৃশ্য আদিবাসীদের দৃশ্যমান করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য তাই পৃথক আদমশুমারীর ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। আদিবাসীদের নাগরিক অধিকার তাহলেই নিশ্চিত হবে এবং সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে করা সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা যাবে।

খুশি কবির বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সারকথা, কাউকে পিছনে ফেলে নয়। বাংলাদেশের সরকার এখানে ‘কাউকে’ এ বাক্যের সুনিদিষ্ট জনগণকে এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না। সরকার আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছেন যেখানে সে জায়গায় আদিবাসী নারীরা স্বাভাবিকভাবেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসী নারীদের অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।

ব্যরিস্টার সারা হোসেন বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দূর্গম পাহাড়ী এলাকার নারীরা প্রতিকূল পরিবেশ এবং ভাষাগত কারণে ভিকটিম সার্পোট সেন্টার বা আইন সহায়তা কেন্দ্রগুলোর সাহায্য নিতে পারছে না। ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’ এ শ্লোগান তখনই সার্থক হবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষও সামনে এগিয়ে যাবে।

রানী ইয়েন ইয়েন বলেন, সরকারি পরিকল্পনা পত্রের মধ্যে আদিবাসী নারীদের অন্তর্ভুক্তি করা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনবদ্য বিষয়টি বাদ থেকে যাবে। মূলত: আদিবাসীদের গোষ্ঠীগত অধিকার নিশ্চিত করা না হলে আদিবাসীদের মানবাধিকার কখনও নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারের ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও শুধু কাগজের পাতায় পড়ে থাকলে উন্নয়ন হবে না। সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সেই সাথে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিষয়টিও সরকারের আমলে নেওয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন