Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মের নেতাদের প্রতিক্রিয়া: রোহিঙ্গা নিপীড়ন ধর্মবিরোধী আমরা লজ্জিত, বিচলিত

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর পৈশাচিক হামলা ও নির্যাতন একটি বৌদ্ধপ্রধান দেশের পক্ষে কোনোভাবেই শোভা পায় না। এ আচরণ মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রতি অবমাননাকর। বৌদ্ধ ধর্মের বিরোধী। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের জন্য লজ্জাজনকও। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মের নেতারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রাণের তাগিদে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশমুখী ঢল দেখে তাঁরা বিচলিত হয়ে পড়েছেন। ন্যক্কারজনক ঘটনা বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাঁরা জোর দাবিও জানিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার। তাঁরা বলেছেন, আমরা লজ্জিত, আমরা বিচলিত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. অসীম রঞ্জন বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে আড়াই হাজার বছর আগের মানবতা ও শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে অহিংসবাদই মূলকথা।

কোনো হানাহানি-সংঘাতের জায়গা নেই। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে যা ঘটছে এটা বৌদ্ধ ধর্মের কারো কাছেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে এই নারকীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে কেবলই সামরিক জান্তা।

ডা. অসীম রঞ্জন বলেন, ‘মিয়ানমারের সারা দেশেই মুসলমানরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এর মধ্যে মাত্র ২ শতাংশের মতো মুসলমানের বসবাস ছিল আরাকানে। যদি এটা সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় হতো, তবে ওই দেশের অন্য এলাকার মুসলমানরাও একই পরিস্থিতির শিকার হতো। কিন্তু আসলে তেমনটা তো হচ্ছে না। তাই আমরা মনে করি, আরাকানে এমন ঘটনার পেছনে দীর্ঘদিনের অন্য কোনো ভৌগোলিক-রাজনৈতিক সমস্যা নিহিত আছে; যার সমাধান করতে না পেরে সামরিক জান্তা ওই অঞ্চলের নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করছে। ’

ডা. অসীম রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করাটা স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশ সরকারের খুবই ইতিবাচক ও বিচক্ষণ অবস্থানের কারণে আমরা অনেকটা নিশ্চিত। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব বুদ্ধমন্দিরেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এটাও স্বস্তিদায়ক একটি উদ্যোগ। ’

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি সবার প্রতি মহামতি বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির অহিংস বাণী ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।

প্রজ্ঞানন্দ মহাথের : তথাগত বুদ্ধের বাণীর প্রতি যদি কোনো মানুষের দৃষ্টি থেকে থাকে, তবে তারা কখনো কোনো সহিংসতায় জড়িত হতে পারে না—এ কথা বলেন পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সভাপতি ও ঢাকা মিরপুর ১৩ নম্বরের সাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের। তিনি বলেন, মানুষে মানুষে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শান্তি-শ্রদ্ধার বাইরে যদি কেউ কোনো ধর্মের কথা বলে মানুষের ওপর নিযার্তন চালায়, তারা প্রকৃত বুদ্ধের অনুসারী নয়, বরং ধর্মান্ধ। তাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকা প্রয়োজন।

অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ বলেন, ‘ধর্মীয় ও মানবিক অবক্ষয়ের এক চরম পরিণতি দেখছি মিয়ানমারে। এর পেছনে বহু কিছু থাকতে পারে। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের অসহায় মনে করছি। গভীর সমবেদনা জানাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি। কোনো দেশেই এমন অবস্থা কাম্য হতে পারে না। মানুষের শুদ্ধবোধ জাগ্রত হোক। ’ তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মে কোনো জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে ধর্ম প্রচারের জায়গা নেই, বরং কেবলই মানবতা, অহিংসবাদ ও শান্তি দিয়ে মানুষের জয় এবং ধর্মের জয় সম্ভব। মিয়ানমারে যা হচ্ছে সেটা মানবিক ও মানসিক অবক্ষয়। মানবতাবিরোধী, বৌদ্ধ ধর্মের বিরোধী কার্যকলাপ।

ধর্মমিত্র মহাথের : রাজধানীর মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মমিত্র মহাথের বলেন, বুদ্ধ অহিংস বাণী রেখে গেছেন মানবজাতির জন্য। মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, মিথ্যাকে সত্য দিয়ে জয় করবে, মানুষের ও সব প্রাণীর কল্যাণে কাজ করবে, খারাপ কোনো কাজ করবে না, সহিংসতায় জড়াবে না—এগুলোই বুদ্ধবাণী। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটা কারো কাম্য নয়। তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের নামে কেউ সহিংসার আশ্রয় নিলে সেটা বৌদ্ধ ধর্মের পরিপন্থী কাজ। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। শান্তিময় হয়ে উঠুক সব মানুষের অন্তর। ওই বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, ‘আমরা চাই—শান্তিপ্রিয় আন্তর্জাতিক সব রাষ্ট্র-দেশ-গোষ্ঠী মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুক। সহিংসতা, হানাহানি, নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করুক। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ উন্মুক্ত হোক। কারণ মিয়ানমারে অহিংস ঘটনায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য উদ্বেগের ও লজ্জার ব্যাপার। ’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন