Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত আইনে নারীর অধিকার বিশ্লেষণ

পারভেজ হায়দার

বাংলাদেশের সমতল এবং তিন পার্বত্য জেলায় ৫৪টি উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসরত ১৫,৮৭,০০০ জন উপজাতি জনগণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১.০৮%। উপজাতি এই জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হলেন নারী। উপজাতি জনগোষ্ঠীসমূহের অধিকাংশই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত। সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারীরা পিতা বা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য সামাজিক অধিকার যথাযথভাবে পেলেও উপজাতি নারীরা তাদের এ জাতীয় অধিকার হতে বঞ্চিত রয়েছে। এ সকল জনগোষ্ঠীর বসবাস বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে হলেও তারা নারীদের অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের শাসন ইত্যাদি অনুসরণ না করে নিজেদের প্রথাগত রীতিনীতি এবং পদ্ধতিগত ঐতিহ্য অনুসরণ করেন।

গারো সম্প্রদায় ব্যতীত অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় পিতৃতান্ত্রিক বিধায় তাদের রীতিনীতি অনুযায়ী পিতার সম্পত্তির উপর নারীদের অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুরক্ষিত নয়। অধিকাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোন পদ্ধতি নেই বিধায় উপজাতি নারীরা সম্পত্তির অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাশ হওয়ায় উপজাতি নারীরা আদৌ তার সুফল ভোগ করতে পারবে কিনা সে বিষযে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহে উপজাতি নারীরা কায়িক পরিশ্রম ছাড়াও গৃহস্থলী কাজের পাশাপাশি জঙ্গল/বনে কাঠ আহরণ, খাদ্য অন্বেষণ ও জুম চাষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভূমি কমিশন আইন পাশ হওয়ার পর পার্বত্য জেলাসমূহে উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার ভূমি কমিশন আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিষয়টি উপজাতিদের ভূমি অধিকার আদায়ের পথকে আরও সু-প্রসারিত করলেও, উপজাতিদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ভূমির অধিকারের বিষয়ে নারীদের একেবারেই প্রাধান্য না থাকায় তারা ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

প্রায় সকল উপজাতি সম্প্রদায়ের বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধুমাত্র অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে পাত্রস্থ করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের অভিভাবকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য সম্প্রদায়ের যুবকের সাথে কোন মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে পরিবার ও সমাজচ্যুত করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রেম বা অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি ধরা পড়লে সমাজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি শুকর/বন্য অথবা এর মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করে, ছেলে এবং মেয়েকে জুতার মালা পরিয়ে জনসম্মুখে ঘোরানো হয় যা বর্তমানে প্রেক্ষাপটে সচেতন সমাজে কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কোনো কোনো সমাজে ধর্ষণের অপরাধে প্রথাগত আইনে পুরুষকে একটি শুকর জরিমানা করা হয়। পরে সেই শুকর জবাই করে সমাজপতিরা উৎসব করে খায় এবং শুকরের রক্ত ছড়িয়ে দিয়ে পাড়া পবিত্র করা হয়। এতে যেসব যুবকের অধিক সম্পদ আছে তারা এই অপরাধের জন্য শুকর দিয়ে পার পেয়ে গেলেও মেয়েটি কিছুই পায় না।

বিবাহের নিবন্ধন না থাকায় বর্তমান শিক্ষিত উপজাতি যুব সমাজের মধ্যে একাধিক বিবাহ করার প্রবণতার পাশাপাশি পূর্বের স্ত্রীকে অস্বীকার ও ভরণ পোষণ সঠিকভাবে প্রদান না করার ঘটনা ঘটছে। উপজাতি নারীরা চরমভাবে অবমূল্যায়িত হলেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহস পান না। সমাজ তাদের একেবারেই সহযোগিতা তো করেই না বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে সাম্প্রদায়িক প্রথা এবং সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী স্থানীয় হেডম্যান ও কারবারীর করা বিচারের রায় অমানবিক হলেও মাথা পেতে মেনে নিতে হয়।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আঞ্চলিক উপজাতি সংগঠন এর চাপে উপজাতি মেয়েরা সঠিক বিচার পাওয়া তো দূরের কথা বরং তাকে অপমানজনক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়, এমনকি বিষয়টি যাতে চাপা থাকে সেজন্য মেয়ে এবং মেয়ের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি প্রদর্শনও করা হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমতা, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের সম অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও নারীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডো) স্বাক্ষর করেছে।

ইতিমধ্যে সরকার নারী-পুরুষের সম অধিকার, নারীর সুরক্ষা ও নারীর উন্নয়নে বেশ কিছু নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারীর সুরক্ষায় প্রচলিত আইনের পাশাপাশি যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ মত বিশেষ আইন প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে অন্যান্য এলাকার স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারী সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও উপজাতি জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থা এবং তাদের রীতিনীতি অনুযায়ী পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি ভূমির অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রয়েছেন।

২০১১ সালের ডিসেম্বর হতে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত রাংগামাটি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মোট ২২০ জন নারী ও শিশু ভিকটিম সেবা গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪৪ জনের যৌন নিপীড়নজনিত অভিযোগের পাশাপাশি পারিবারিক সহিংসতার শিকার। সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭১ জন, যারা উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত রীতিনীতির শিকার।

পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক জরিপ না হলেও নির্যাতনের মাত্রা মোটেও কম নয়, কোন কোন উপজাতি পরিবারের পুরুষগণের মদ খেয়ে তাদের স্ত্রীদের উপর নির্যাতন যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার, তা যেন তাদের সমাজ ব্যবস্থার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনীতে নারীদের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ না থাকায়, পার্বত্য এলাকার ভূমি উপজাতি জনগোষ্ঠীর সামাজিক ব্যবস্থায় ভোগ ও দখলের অধিকারের ক্ষেত্রে উপজাতি নারীগণ পুনরায় বঞ্চিত ও অবহেলিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান – সার্কেল চীফ, হেডম্যান, কারবারী যাদের উপর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতিদের সামাজিক বিচার, মৌজা সার্কেলের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ খাজনা আদায়ের দায়িত্ব অর্পিত, এ প্রতিষ্ঠানগুলো পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত। আমাদের একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে যে, বর্তমান বিশ্বে নারীদের অধিকারের বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে আলোচিত বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের নারীরাও জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্তমানে শিক্ষা এবং আধুনিকতার প্রভাব বিস্তার করায় যুব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি উপজাতি যুবতীরাও তাদের প্রথাগত রীতিনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার অনেক কিছুই পরিহার করে আধুনিকতার মানসিকতা নিয়ে জীবনযাপন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। উপজাতি নারীরাও বর্হিবিশ্ব এবং বাংলাদেশের সমতলের নারীদের ন্যায় তাদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে সচেষ্ট রয়েছেন।

উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত রীতি এবং সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অধিকার যথাযথভাবে না থাকায় সার্কেল চিফগণ বিষয়টি উপলব্ধি করে সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের অধিকার সু-রক্ষায় কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যার অংশ হিসাবে বিগত কয়েক বছরে চাকমা সার্কেল চীফ কর্তৃক ১২০ জনের অধিক নারীকে কারবারী পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা কর্মসূচী গ্রহন করছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক, কাপেং ফাউন্ডেশন, মালেয়া ফাউন্ডেশন, হিল উইমেন ফেডারেশন, কেএমকেএস, অন্যান্য নারী কল্যাণ সংস্থা, বলিপাড়া নারী কল্যাণ সংস্থা, জাবারাং কল্যাণ সমিতি, প্রগেসিভ, বাংলাদেশ উপজাতি (আদিবাসী) নারী নেটওয়ার্ক, খাগড়াপুর মাহিলা সমিতি, গর্জনতলী নারী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং অধিকার আদায়ে নানা কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে সমতলে এনজিওগুলো নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্যাতিত কোনো নারী যখন উপজাতীয় রীতি বা প্রথার নামে বঞ্চিত ও নিপীড়িত হয় তখন এসকল এনজিওগুলো চুপ করে থাকে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণ-পোষণ প্রভৃতির ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য উপজাতি ভিত্তিক নারী সংগঠনগুলো ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

উপজাতি জনগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম পালন করে থাকেন। যেমন, চাকমা-বৌদ্ধ ধর্ম, মারমা-বৌদ্ধ ধর্ম, ত্রিপুরা-সনাতন হিন্দু ধর্ম, বম-খ্রীষ্টান ধর্ম, সাওতাল-সনাতন ধর্ম, ম্রো-বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি ধর্ম পালন করেন। উপজাতি সম্প্রদায়গুলো তাদের নিজ নিজ ধর্মের নিয়ম কানুন অনুসরণ করলেও তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী নারীদের অধিকার এবং নারীদের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে তা অনুসরন করেন না, বরং তারা তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রথা অনুসরণ করে থাকেন। ফলে ধর্মীয় ভাবে উপজাতি নারীরা ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন, বৈবাহিক জীবন এবং পিতা বা স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব পাবার কথা থাকলেও সাম্প্রদায়িক প্রথার কারণে তারা ব্যাপক ভাবে অবমূল্যয়িত হন।

উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথাগত উত্তরাধিকার আইন এবং বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য এখানে আলোচনা করা যেতে পারে।

 চাকমা 
চাকমা প্রথা মতে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর শুধুমাত্র তার পুত্র বা পুত্র সন্তানরাই একমাত্র উত্তরাধিকারী হন। কন্যা সন্তান কোন প্রকার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কন্যা সন্তান পরিবারের অমতে বিয়ে করলে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিচারে সাধারণত ১ অথবা ২ মুষ্ঠিতে ধরা যায় এমন শুকর সমাজের সকলকে খাওয়ানোর আদেশ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপমানজনকভাবে সকলের সামনে তাদের জুতার মালা পরানো হয়। তারপর তাদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়। চাকমা নারীরা তাদের স্বামীর সম্পদেরও কোন অংশ পান না।

 মারমা
মারমা সম্প্রদায়ের প্রচলিত প্রথা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। মারমা সম্প্রদায়ের বার্মিজ প্রথা অনুসরণকারী উপজাতিগণ বিশেষ করে বান্দরবানে বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা পিতা-মাতার সম্পত্তি ছেলেদের ন্যায় সমানভাবে উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন। তবে যে সন্তান পিতা-মাতার ভরণ পোষণ বহন করবে তাকে একভাগ বেশি সম্পত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। পরিবারের অমতে নারীগণ বিবাহ করলে সমাজ তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন।

তবে খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের নারীগণ পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন না। মারমা সমাজে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে ঐ ব্যক্তির সকল অস্থাবর সম্পত্তিসহ ঘরবাড়ী প্রথম স্ত্রীকে দিতে হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ত্রী কোন সম্পত্তি পান না, তবে তার (দ্বিতীয় স্ত্রীর) সন্তানেরা পিতার স্থাবর সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন।

মারমা সমাজে আরও একটি অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত আছে, যা নারীদের জন্য চরমভাবে অপমানজনক। কোন মারমা ছেলে কোন মারমা মেয়েকে পছন্দ হবার পর যদি জোর করে ধরে নিয়ে আসে এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিয়ে বাড়ীর মত আপ্যায়ন করে, তবে সমাজ বিষয়টি মেনে নেয়। এ ক্ষেত্রে উক্ত নারীর ব্যক্তিগত পছন্দের অথবা মতামতের কোন মূল্য দেওয়া হয় না।

 ত্রিপুরা 
ত্রিপুরা মাহিলারা অন্যান্য উপজাতিদের ন্যায় পিতার এবং স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হন না। কোন বিবাহিত ত্রিপুরা মাহিলার অনৈতিক কার্মকাণ্ডের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামাজিক আদালতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে স্ত্রীর চরিত্রের সংশোধনের জন্যে ১৫ দিন অন্তর অন্তর তিনবার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। তিনবার সুযোগ দেবার পরও স্ত্রী চরিত্র সংশোধনে ব্যর্থ হলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেওয়া হয়।

অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের ন্যায় ত্রিপুরা নারীদের অভিভাবকের মতামতের ভিত্তিতে মেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া হয়, বিবাহের সময়ে বর পক্ষকে কণের মায়ের দুধের ঋণ শোধ বাবদ রূপার পাঁচ টাকা, দুই জোড়া নারিকেল এবং এক বোতল মদ প্রদান করতে হয়। ত্রিপুরাদের মধ্যে ‘‘নাইত”, ‘‘দেনদা” সহ বিভিন্ন গোষ্ঠী থাকায় এক গোষ্ঠীর ছেলের সাথে অন্য গোষ্ঠীর মেয়ের বিবাহ বা প্রণয় ঘটিত বিষয়গুলো সহজে মেনে নেওয়া হয় না।

তঞ্চঙ্গ্যা
তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতিটি চাকমাদের একটি উপদল। তাদের প্রথাও অনেকটা চাকমাদের মতই, যেখানে নারীর অধিকারকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তঞ্চঙ্গ্যা প্রথা মতে, কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর শুধুমাত্র তার পুত্র বা পুত্র সন্তানরাই মৃত ব্যক্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হন। কন্যা সন্তান কোন প্রকার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কন্যা সন্তান পরিবারের অমতে বিয়ে করলে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিচার এর ব্যবস্থা করা হয়। বিচারে সাধারণত ১ অথবা ২ মুষ্ঠিতে ধরা যায় এমন শুকর সমাজের সকলকে খাওয়ানোর আদেশ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপমানজনকভাবে সকলের সামনে তাদের জুতার মালা পরানো হয়। তারপর তাদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়। তঞ্চঙ্গ্যা নারীরাও তাদের স্বামীর সম্পদের কোন অংশ পান না।

চাক 
চাক সম্প্রদায়ে পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হিসাবে শুধুমাত্র পুত্র সন্তানগণই সম্পদ পেয়ে থাকেন। মেয়ে বা স্ত্রী কেউ কোন সম্পত্তি পান না। সন্তান শুধুমাত্র মেয়ে হলে ঐ ব্যক্তি সম্পত্তি তার ভাই অথবা ভাই এর ছেলেরা পেয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ের নারীরা পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন না, এক্ষেত্রে এই সম্প্রদায়ের মহিলারা দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলেও সমাজ তা গ্রহণ করে না। বৈধ বিবাহ ব্যতিরেকে কোন নারী গর্ভবতী হলে সামাজিক আদালতে গর্ভবতী মহিলার প্রমাণ সাপেক্ষ্যে ভূমিষ্ঠ সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকৃত হলেও ঐ সন্তান পিতার সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী হয় না। পরিবারের অমতে নারীরা বিবাহ করলে তাকে পরিবার ও সমাজচ্যূত করা প্রচলন রয়েছে।

খিয়াং 
এ সম্প্রদায়ে বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে পণ দিয়ে নারীদের বিবাহ করতে হয়। সাধারনত রুপার দশ টাকা প্রদান করার প্রচলন রয়েছে। খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যা সন্তানগণ সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে থাকেন। মৃত পিতার নামীয় সম্পত্তি থেকে পুত্রগণ তিনভাগের দুই ভাগ এবং কন্যাগণ একভাগ সম্পদের উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়ে থাকেন। দত্তক সন্তান চারভাগের একভাগ সম্পদ পেয়ে থাকেন। পুত্রের অবর্তমানে কন্যা সন্তানগণ পিতার সম্পূর্ণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন।

 ম্রো/মুরং
এ সম্প্রদায়ে বিবাহের সময়ে মাহিলাদেরকে পণ দিয়ে ঘরে তুলতে হয় বিধায়, বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোন অধিকার থাকে না, বরং পণের টাকা সমুদয় ফেরত দিতে হয়। এক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের নারীরা পিতার পরিবারে ফেরত যেতে চাইলেও তাদের পক্ষে পণের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হয় না বিধায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতন ও কষ্টের স্বীকার হয়ে থাকেন। এই জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক বিধায় এখানে শুধুমাত্র পুরুষদের কর্তৃত্ব বজায় থাকে যেমন, যেকোন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব, পূজা পার্বণ ইত্যাদি পারিবারিক যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পুরুষদের একক ভূমিকা থাকে।

 লুসাই

লুসাই নরীরা স্বামী কিংবা বাবার সম্পত্তি থেকে কোন অংশ গ্রহণ করতে পারেন না।

পাংখোয়া 
পাংখোয়া নারীরা পিতা বা স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হন না। এই সম্প্রদায়ের নারীগণ বিবাহের পূর্বে যে পারিবারিক পদবী বা সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হন না কেন, বিবাহের পর তিনি স্বামীর পরিবারের পদবী ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। তবে ‘‘লাল” উপাধী বা কারবারী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারেন না।

 বম 
বম সম্প্রদায়ে নারীদের বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে মেয়ের পরিবারকে পণ দিতে হয়। সমাজের রীতি অনুযায়ী স্বামীর কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্ত্রীকে অর্থ দিতে হয় যা, স্বামীর উত্তরাধিকারের ৫০ শতাংশ। আর যদি স্ত্রীর কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে বিবাহের সময় স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত পণ এর সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হয়। এ সম্প্রদায়ের নারীরা পিতার অস্থাবর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন, কোন মেয়ে পালিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে সমাজ চ্যূত করা হয়।

খুমী 
স্বামীর মৃত্যুর পর খুমী নারীরা মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হতে পারেন না । স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর ভরণ পোষণের সকল দায়িত্ব তার ভাইদের বহন করতে হয়। খুমী নারীরা তার পিতা অথবা স্বামীর কোন প্রকার সম্পদের অংশ বিশেষও পান না।

উপজাতি নারীদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে যে অনবদ্য অবদান রয়েছে তা সাধারণত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্য সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী পুরুষের সম অধিকারে বিশ্বাসী ও বাস্তব জীবনে বিশ্বাসী সম্মান ও মর্যাদা প্রদানকারী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ে পুরুষদের একাধিক বিবাহ করার প্রচলন থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের সম্পত্তির অধিকার আদায়ে সামাজিক সংগঠনগুলো নারীদের মামলা করা বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। খাগড়াছড়ি জেলার একটি নারী সংগঠনের উদ্যোগে ‘‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি” পদ্ধতি হিসাবে নারীদের আদালতে মামলার জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়ার স্বার্থে জেলা যুগ্ন জজ এর উপস্থিতিতে উভয় পরিবারের অভিভাবক, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, আইনজীবী এবং বাদী-বিবাদী এর সমন্বয়ে সমঝোতা মূলকভাবে মীমাংসা করে দেবার প্রচলন শুরু হয়েছে।

উপজাতি নারীগণ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও পুরুষতান্ত্রিক ও প্রথাগত ব্যবস্থার কারণে তাদের সে অবদান সেইভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। উদাহরণ স্বরূপ, হাজংদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, টংক আন্দোলন, তেভাগা আনোদালন, হাতিখেদা আন্দোলন, চাকমা বিদ্রোহ, খাসী বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, মণিপুরীদের ভানুবিল আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, নানকার বিদ্রোহ, চা শ্রমিক আন্দোলন, ইকো পার্ক বিরোধী আন্দোলন এবং ফুলবাড়ি কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে উপজাতি নারীদের ভূমিকার বিষয়ে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৮৮৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহে ফুলমণি মুর্মু এবং জান মুর্মুরা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, কিন্তু উক্ত বিদ্রোহে নারীদের অবদানের কথা এড়িয়ে গিয়ে ‘‘সিধু-কানু” দিবস হিসাবে ইতিহাসে প্রচারণা রয়েছে। ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত নেত্রকোনার দূর্গাপুর এলাকায় হাজং কৃষকদের অধিকার রক্ষায় জমিদার এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে রাশিমণি হাজং, দিস্তামণি হাজং, বাসন্তি হাজংসহ অনেক নারী মৃত্যু জীবন দিয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও তাদের সে আত্নত্যাগের বিষয়টি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশসহ বর্হিবিশ্বের সাথে উপজাতি নারীদের মধ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব এবং নারী অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থায় জীবন যাপন করতে অধিকাংশ নারীই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। তদুপরি বিবাহ সংক্রান্ত কোন দলিল না থাকায় পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শ্বশুরালয়ে এবং পিতার পরিবারে নানা নির্যাতন ও হয়রানির স্বীকার হওয়ায় উপজাতি নারীদের মধ্যে তাদের অধিকারের বিষয়ে বোধদয় সৃষ্টি হচ্ছে।

বিষয়টি সমাধানে বিভিন্ন নারী সংগঠন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি নারী অধিকার রক্ষা ও আদায়ে সচেতন নারী মহল পাড়া, মহল্লা, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে নানা সচেতনতা মূলক কর্মসূচী পরিচালনাসহ এনজিও সংগঠনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে। কিছুদিন আগে রাঙামাটি জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইন সংস্কার ও উপজাতি নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার দাবীতে সংবাদ সম্মেলনে উপজাতি ভিত্তিক নারী সংগঠন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, প্রোগ্রেসিভ এনজিও এবং আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র এর প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

উক্ত সম্মেলনে বিবাহের সনদ না থাকায় স্ত্রীকে অস্বীকার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও স্বামীর ঔরসজাত সন্তানের ভরণ পোষণ না করা, সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে নারী হেডম্যান কারবারী নিয়োগে সার্কেল চীফদের আরও মনোযোগী হওয়া, নারী বিষয়ে উপজাতিদের প্রথাগত বৈষম্য ও অনৈতিক শাস্তির বিধান রহিত করাসহ লিখিতরূপে প্রথাগত বিধান সংরক্ষণের পরামর্শ প্রদান ও দাবী জানানো হয়।

তবু সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আঞ্চলিক উপজাতি দলগুলোর আহবানে সরকার পার্বত্য এলাকার ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি কমিশন আইন পাশ করেছে। এই আইন অনুযায়ী পার্বত্য এলাকার ভূমির বন্টন উপজাতিদের রীতি,, নীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে উপজাতিদের রীতি, নীতি এবং প্রথা নারীদের অধিকার কতটুকু নিশ্চিত করেছে।

পৃথিবীতে প্রচলিত বিভিন্ন বৃহৎ ধর্ম এবং বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের যতটুকু সংরক্ষিত করেছে, উপজাতিদের প্রথা নারীদের আরো পিছিয়ে দিয়েছে। সকল ক্ষেত্রে নারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। নারীদের ব্যক্তিগত জীবন, বৈবাহিক জীবন, সম্পত্তির উত্তরাধিকার কোন ক্ষেত্রেই সার্বিকভাবে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

কোন কোন উপজাতিদের প্রথা নারীদের অনেকটা পণ্য হিসাবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক নারী রয়েছে। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কোন প্রথাই কার্যকর হতে পারে না।

পৃথিবীতে যুগে যুগে মানুষ সামনে এগিয়ে যাবার সংগ্রাম করছে। কোন গোত্র বা জনগোষ্ঠীর সকল নিয়ম কানুন বা প্রথা সর্বগ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে, তাই যুগে যুগে মানুষ ভাল ব্যবস্থাপনাকেই গ্রহণ করেছে, অপছন্দনীয় বিষয়গুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, নারী কিংবা পুরুষ সকলকে মানুষ হিসাবে সমভাবে মূল্যায়ন করে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। উপজাতি নেতৃবৃন্দ এবং আঞ্চলিক দলসমূহ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনবে, তা’ সকলের প্রত্যাশা।

পারভেজ হায়দার- পার্বত্য গবেষক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন