বাঁকখালীর বিসর্জনের মহামিলন যেন সম্প্রীতির চারণভূমি

ramu-news-pic-11-oct-01-copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের রামুতে প্রতীমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার প্রধান অতিথি রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেছেন, জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব। পরমত সহিষ্ণুতা। এক ধর্মের জনগোষ্ঠীর প্রতি অন্য ধর্মের জনগোষ্ঠীর শ্রদ্ধাবোধ। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত এ রূপ বরাবরের মতো দৃশ্যমান রয়েছে সম্প্রীতির এ রামু উপজেলায়।

প্রতি বছর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় রামুতে এ উৎসব পালন হয়ে আসছে এবং বৈরী হাওয়া আর বৃষ্টির মাঝেও মঙ্গলবার রামুতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের মিলন মেলা এটা প্রমাণ করে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন। বক্তৃতাকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার মানবতা রিরোধী অপরাধীদের বিচার করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। পাশাপাশি সরকার দেশে জঙ্গি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।  তিনি উৎসব মখুর পরিবেশে শান্তি শৃংখলা বজায় রেখে পাঁচদিনব্যাপী দূর্গোৎসবের আয়োজনকারি এবং এ উৎসবে সহযোগীতা করায় প্রশাসনসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

মঙ্গলবার বিকেলে ৩ টায় বাঁকখালীর তীরে রামু উপজেলা প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা: আশুতোষ চক্রবর্তী মন্টু’র সভাপতিত্বে প্রতীমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: নিকারুজ্জামান, রামু প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক স্বদেশ শর্মা, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম। বিসর্জন উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি সুশান্ত পাল বাচ্চুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, বিসর্জন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন মল্লিক, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক প্রকাশ সিকদার, কেন্দ্রীয় কালি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ গুপ্ত, রামু উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অপূর্ব পাল, বিসর্জন পরিষদের উপদেষ্টা ননী গোলাপ দে, সাংবাদিক খালেদ হোসেন টাপু, অর্পন বড়ুয়া, কালি মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন দেওয়ানজী, সাধারণ সম্পাদক টিটু বিশ্বাস, রামু বাজার মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মাষ্টার অজিত রুদ্র, সাধারণ সম্পাদক ডা: সমর চক্রবর্তী,  তেমুহনী সর্বজনীন দূর্গা মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক গোপাল নাথ, নাথ পাড়া কৃষ্ণ মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের  সভাপতি সন্তোষ দাশ, সাধারণ সম্পাদক ছোটন নাথ, শ্রীকুল সর্বজনীন দূর্গা মন্দির পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ছোটন দে, সাধারণ সম্পাদক রাজীব ধর প্রমুখ।

সভার শুরুতে চন্ডি পাঠ করেন রামু সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সজল ব্রাহ্মন চৌধুরী সভা শেষে বিসর্জন মন্ত্র পাঠ করেন, রামু সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালি মন্দিরের পুরোহিত সুবীর ব্রাহ্মন চৌধুরী বাদল। প্রথমে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জাতীয় পতাকা ও রামু উপজেলা প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা: আশুতোষ চক্রবর্তী মন্টু ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।  হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব মহা ষষ্ঠী অধিবাস এর মধ্য দিয়ে  ১৯টি প্রতীমা ও ১০টি ঘট পূজাসহ মোট ২৯টি  পূজা মন্ডপে শুরু হয়ে, পঞ্চম দিনে এ দূর্গোৎসব মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে রামুর বাঁকখালী নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হয়।

এদিকে রামু চৌমুহনী সার্বজনীন কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ গুপ্ত ও  রামু সৎসঙ্গ আশ্রমের সভাপতি সুশান্তপাল বাচ্চু প্রতি বছর বাঁকখালী নদীতে হিন্দু ধর্মাম্বলীদের প্রতিমা বিসর্জন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জাহাজ ভাসা  অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য বাঁকখালীর তীরে স্থায়ী মুক্ত মঞ্চ ও রাস্তা সংস্কারের জোর দাবী জানান এবং পাঁচদিনব্যাপী এ ধর্মীয় উৎসব যথাযথ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হওয়ায়  প্রশাসনসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন