বর্তমান সরকার আদিবাসীদের বিষয়ে অনেক সোচ্চার- রাশদে খান মনেন

images

স্টাফ রিপোর্টার:

বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, বর্তমান সরকার আদিবাসীদের বিষয়ে অনেক সোচ্চার। যারা পাহাড়ের স্থায়ীভাবে শান্তি চায় না, তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে আন্দোলন করছে।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উৎযাপন-২০১৬ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতথিরি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাশেদ খান বলেন, ‘আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশে। এদেশে সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল জাতের লোকেরা সমান অধিকার পাবে। এখানে কেউ তাদের অধিকার হারা হবে তা মেনে নেয়া যায় না। তবে সব কিছুই যে অতি সহজে আসবে তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু বিষয় আছে যা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করে নিতে হয়’।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কেন আমরা আদিবাসী কথাটা স্বীকার করি না, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। এই স্বীকার না করার মধ্যে দিয়ে তারা যেমন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন, প্রশাসনের কাছেও ভিন্ন বার্তা যাচ্ছে। আমি আশা করব, ভূমির প্রশ্নে যে বিরোধ, সেগুলো নিরসন হবে। আমি চাই, আদিবাসী বাঙালি এক হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়বো’।

অনুষ্ঠানে সভাপতরি বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, ‘দেশে কোন গণতন্ত্র নেই। যদি গণতন্ত্র থাকতো তা হলে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য এভাবে বছরের পর বছর আন্দোলন করতে হতো না। তাই আমি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখতে চাই’।

জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, ‘শান্তিচুক্তির ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও আমরা এর কোন সুফল পাচ্ছি না। আজ আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বান্দরবানে জনসংহতিকে বিলুপ্ত করার পাঁয়তারা চলছে। নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। তিনি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান’।

তিনি বলেন, ‘আজ আদিবাসীদের বিপর্যয়ের শেষ নেই। আমরা নির্যাতিত। আমাদের লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদেরকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকারের আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে সকল আদিবাসীদের বিশেষ করে যারা সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ি তাদের এগিয়ে আসতে হবে’।

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যারা চাকরি বা ব্যবসা করেন তারা আদিবাসীদের এই আন্দোলনে যুক্ত হতে চান না’।

সামাবেশে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তি পদ ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ছাড়া কোন সমস্যা সমাধান হবে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের উপর সহিংসতা, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ থেকে সরকারকে আহ্বান জানাবো তারা যেন আমাদের দাবিগুলোকে দ্রুত কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কোনো জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না। সে রাষ্ট্রটি মাথা উঁচু করেও বিশ্বের দরবারে দাঁড়াতে পারে না। শুধু ভূমি নিষ্পত্তি আইন করেই আদিবাসী সমস্যা সমাধান করা যাবে না। আইনটির যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি বলেন, ‘দেশে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন দিবস পালিত হয়। আদিবাসী দিবসও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি জানান তিনি। এতে করে প্রমাণ হবে আমরা সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক। আমরা সকলকেই তাদের ন্যায্য অধিকারের সুযোগ দিয়ে থাকি’।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পষ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম প্রমূখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন