বরকলের কৃষক হারিছ হত্যাকাণ্ড : স্বজনদের দাবি আসামিরা নির্দোষ প্রকৃত খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

pic

স্টাফ রিপোর্টার :
রাঙ্গামাটি জেলার বরকলে স্ত্রী হেনারা বেগমের পরকীয়ার জেরে কৃষক মো. হারিছ মোল্লা খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হলেও স্থানীয়রা ও পরিবারের লোকজন বলেছেন, পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা রয়েছে ঠিক- কিন্তু সেটি আসল কারণ নয়। হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে মূলত পারিবারিক জমি বিরোধের জেরে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে স্ত্রী হেনারা বেগমসহ তিনজনকে পুলিশ আটক করলেও আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করে তাদের স্বজনরা বলেন, প্রকৃত খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। বুধবার সকালে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপায় রেইনবো নামে একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের মুখোমুখী হয়ে এসব দাবি করেন নিহত হারিছ মোল্লার শ্বাশুড়ি মৃত মফিজ জমাদ্দারের স্ত্রী সালেহা বেগম এবং ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক আসামি ছগির আহমেদের বোন তাছলিমা বেগমসহ প্রতিবেশী লোকজন।

এ সময় হারিছ মোল্লার পাঁচ বছরের শিশু সন্তান আতিককে তার বাবার হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হাজির করেন তারা। আতিক সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার বাবা হারিছ মোল্লার হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয়।

৩ মার্চ রাতে বরকল উপজেলার ভুূষণছড়া ইউনিয়নের কলাবুনিয়ার বামল্যান্ড নামক এলাকার কৃষক মো. হারিছ মোল্লাকে খুন করা হয়। সকালে তার বাড়ির পাশে একটি তামাক খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে বরকল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ৮ মার্চ হারিছ মোল্লার মেয়ে শাহনাজ বাদী হয়ে সৎ মা হেনারা বেগমসহ সাতজনকে আসামি করে বরকল থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-০১ তারিখ-০৪/০৩/২০১৬) করেন। মামলায় ৩ আসামি হেনারা বেগম, তার ভগ্নিপতি ছগির হোসেন ও ভাই মো. রবিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি চার আসামি ইসহাক, বিল্লাল, জাহাঙ্গীর ও আলমগীর এখনও অধরা।

মামলার আরজিতে বাদী শাহনাজ বলেন, আমার মা ৯ বছর আগে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেন। সাত বছর আগে আমার বাবা হারিছ মোল্লা বরকলের কলাবুনিয়ার বামল্যান্ড বাসিন্দা মৃত মফিজ জমাদ্দারের মেয়ে হেনারা বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। এরপর সৎ মা হেনারা বেগম ইসহাক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হন। এতে বাবা বাধা দেয়ায় তাদের দুইজনের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া-বিবাদ ও কথা কাটাকাটি হতো। ঘটনার রাতে আসামিরা একত্রিত হয়ে বাবাকে মেরে পাশের তামাক খেতে ফেলে রাখে।

এদিকে নিহত হারিছ মোল্লার শ্বাশুড়ি দ্বিতীয় স্ত্রী হেনারা বেগমের মা সালেহা বেগম ও স্বজনরা দাবি করে বলেছেন, হারিছ দ্বিতীয় স্ত্রী আমার মেয়ে হেনারা ও তার শিশু সন্তান আতিককে ৫০ শতক জায়গা দেয়ায় ঘটনার দিন হারিছের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে শিরিনা, জামাই মিজানুর, ছেলে রমজান ও আবুল কালাম মিলে হেনারাকে মারধর করে। এতে হারিছ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। পরে তাদের বাড়ি থেকে আমার মেয়ে হেনারাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যায়। এর পরপরই শিরিনা, তার স্বামী মিজানুর, ভাই আবুল কালাম ও রমজান মিলে লাঠিসোটার আঘাতে হারিছকে মেরে ফেলে। একদিন লুকিয়ে রাখার পর পাশের ওই তামাক ক্ষেতে লাশটি ফেলে রেখে আসে। আমার নাতি শিশু আতিক তার বাবা হারিছের সঙ্গে ছিল। সে ঘটনাটি নিজ চোখে দেখেছে। আমার মেয়ে হেনারা এবং অন্য আসামিরা নির্দোষ। তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই সময় হারিছের শিশু সন্তান আতিককে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, শিরিনা, মিজানুর, রমজান, আবুল কালাম তার বাবাকে লাঠি দিয়ে কপালে, গায়ে আঘাত করে। পরে রমজান ঘাড়ে ধরে তার বাবাকে টেনে হেঁচড়ে উঠানের বড়ই গাছের তলায় নিয়ে রাখে।

মামলার আটক আসামি ছগির হোসেনের বোন তাছলিমা বলেন, খুনিরা বাঁচার জন্য নির্দোষীদের ফাঁসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাদের ঘনিষ্টজন ইব্রাহীম প্ররোচিত করে খুনিদের সহায়তা করেছেন। সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমার ভাই ছগির ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। সে সহজ সরল মানুষ। সে নির্দোষ। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের দাবি করে বলেন, ইসহাক ও হেনারার পরকীয়ার কানাঘুষা শোনা গেছে। তবে ওই পরকীয়ার জেরে হারিছ মোল্লাকে খুন করা হয়নি। এর মূল কারণটি হল জমি নিয়ে বিরোধ।

এ ব্যাপারে বরকল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীলু কান্তি বড়ুয়া বলেন, মামলা তদন্তাধীন। তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার স্বার্থে সব কিছু প্রকাশ করা যাবে না। মামলাটির বিস্তারিত থানায় লিপিবদ্ধ আছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন