বঙ্গভবন ও গণভবনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় উপলক্ষে মিলনমেলা

স্টাফ রিপোর্টার:

দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ও সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

মঙ্গলবার বঙ্গভবনে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এ বছর হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যা এবং দেশের কয়েকটি অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে অনেক মানুষ ভালভাবে ঈদ করতে পারছে না। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

“তাই ঈদুল আজহার পবিত্র এ দিনে আমি দেশের বিত্তবান ও সামর্থ্যবান সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- সরকারের পাশাপাশি আপনারও সাধ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবেন।”

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কোরবানীর মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে।”

মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “মানবতাই ধর্মের মূল বাণী। ধর্ম মানুষকে ন্যায়-নীতি ও কল্যাণের পথ দেখায়। মানবসেবার দিকনির্দেশনা দেয়। তাই মানবতার সেবায় আমাদের আত্মোৎসর্গ করতে হবে। আর এটাই ঈদুল আজহার শিক্ষা।”

ঈদ উপলক্ষে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তার স্ত্রী রাশিদা খানম ও পরিবারের সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বঙ্গভবনে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ উচ্চ পদস্থ বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতারাও এসেছিলেন বঙ্গভবনের এই আয়োজনে।

শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের আপ্যায়ন করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়াতে এই দেশ হবে শান্তিপূর্ণ, উন্নত এবং সমৃদ্ধ। আমাদের এই মাতৃভূমি বিশ্ব দরবারে যেন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করব।’

শনিবার ঈদের সকালে গণভবনে সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বাংলাদেশকে একটি শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, তারপর বিচারপতি, কূটনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সেমাই, সন্দেশ আর ফল দিয়ে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসেন। এ সময় মূল মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং পুতুলের ছেলে জারিফ।

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একে একে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সরকারপ্রধানকে কাছে পেয়ে অনেকেই এ সময় তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনেন এবং সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকসহ পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা এবং যারা এবার হজ করতে গেছেন, তাদের মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সকলে দোয়া করবেন, উন্নয়নের পথে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি; তা যেন অব্যাহত থাকে।’

ঈদের তাৎপর্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পবিত্র ঈদুল আজহার মাধ্যমে এটাই শিখি; কিভাবে আত্মত্যাগ করা যায়।’

সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে বন্যা হয়েছে। সে বন্যা আমরা মোকাবিলা করেছি। নদী ভাঙায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং তার ফল দেশবাসী পাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক থেকে সমাজকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সকলেই লক্ষ্য রাখবেন, যেন আমাদের এই দেশে আমাদের যুব সমাজ যেন বিপথে না যায়। মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যেন জড়িত না হয়।’

শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা গণভবনে যান।

কূটনীতিকসহ অন্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত আসনে যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং বাঁ দিকে প্রধান বিচারপতির বসার জায়গা নির্ধারিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার আসনে বসার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য সাকিব আল হাসান তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বাংলাদেশের এই তারকা ক্রিকেটার এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সোফার পাশে হাঁটু মুড়ে বসেন। সরকার প্রধান এ সময় সাকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং নিজের প্লেট থেকে কাঁটা চামচে তুলে ফল ও মিষ্টি খাইয়ে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেন এবং একসঙ্গে সবার ছবি তোলা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন