Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বঙ্গবন্ধু আর্মি অফিসার মেস থেকে মদের বার তুলে দেন

আ ল ম ফজলুর রহমান

(তিন)

আর্মিতে সকালের নাস্তাকে বলা হয় ব্রেকফাস্ট, মধ্যহ্ন ভোজকে বলা হয় লাঞ্চ এবং নৈশভোজকে হলো ডিনার। অতএব আমি আর্মির প্রচলিত ভাষায় সব লিখবো। এতে আমার যেমন সুবিধা হবে তেমনি আর্মির লেঙ্গুয়েজ সম্বন্ধেও আপনারা পরিচিত হবেন।

আমি উনিশ শত বাহাত্তর সালের পাঁচ আগস্ট সেকেন্ড বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে সদ্য কমিশন পেয়ে দশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈয়দপুর কেন্টোনমেন্টে ( সেনানিবাস ) পোস্টিং পেয়ে ব্যাটালিয়ানে জয়েন করেছি। তখন সৈয়দপুর কেন্টোনমেন্ট ছিলো একটা বিহারী কলোনীর মতো। তখন অফিসার মেসে ওয়েট বার বা মদের বার খোলা ছিলো । অফিসাররা ডিনারের পরে গভীর রাত পর্যন্ত মদ পান বা ড্রিঙ্ক করতো। আমি নিজে মদ পান করতাম না।


এই সিরিজের আগের লেখাগুলো পড়ুন

  1. পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার অভিজ্ঞতা – ১
  2. জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় বসেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পোস্টিং করেন

শুধু যে মদ খেয়ে টালমাটাল হয়ে নয়, অন্য সময়ে আর্মির টার্মিনোলজিগুলো পরিবর্তনের অনেক চেষ্টা হয়েছে কিন্তু সব পরিবর্তন সম্ভব হয় নাই। এটা সম্ভব হয়নি কারন আর্মি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। অতএব আন্তর্জাতিকতা বজায় রাখতে গিয়ে আর্মির টার্মিনোলজিগুলো ইংরেজিতে রাখতে হয়েছে। অন্যদিকে রণকৌশলের বিষয়গুলি ইংরেজিতে না রাখলে আমাদের আর্মি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ফলে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে না

যা হোক, সম্ভবত উনিশ শত পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু আর্মি অফিসার মেস থেকে মদের বার তুলে দেন। এবং আর্মি অফিসারদের জন্য অফিসার মেসে মদ পান নিষিদ্ধ করেন। আমি উনিশ শত আশি সালে মীর স্টাফ কলেজে স্টাফ কোর্স করি । ওটি ছিলো পঞ্চম স্টাফ কোর্স। তখন স্টাফ কলেজ আফিসার মেসে মদের বার ওপেন ছিল। ব্রিটিশ মিলিটারী টিম ( বিমেট ) আমাদের স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

সম্ভবতঃ ফরেনারদের জন্য এই মদের বার স্টাফ কলেজ অফিসার মেসে চালু ছিলো। কিন্তু আমি বাংলাদেশী অফিসারদের ঐ মদের বারে মদপান করতে দেখেছি। পরে জেনারেল জিয়া স্টাফ কলেজের মদের বার বন্ধ করে দেন।

আমি সত্য ইতিহাস তুলে ধরলাম। আমি আশাকরি এতে কেউ আঘাত পেলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সত্য ইতিহাস কাউকে না কাউকে তুলে ধরতেই হবে। আমি উনিশ শত ছিয়ানব্বই / সাতানব্বই শিক্ষাশর্ষে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স করতে পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ( বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি ) ইসলামাবাদে যাই । ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স থেকে বিদেশ ভ্রমনের সময় আমাদের দলের আমি এবং একজন পাকিস্তানী অফিসার বাদে পাকিস্তানী আর্মির সব অফিসারকে মদ পান করতে দেখেছি। এটা সত্য। তুলে ধরতে হবে। আমরা এসব বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাদেরকে আর্মির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাতে আর্মিকে বুঝতে আপনাদের সুবিধা হয়। এই জন্যই এখনও আর্মির ভাষা ইংরেজি। জেনারেল এরশাদের সময় আর্মিতে বাংলাতে চিঠিপত্র লেখার প্রচলন হয়। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তবে সামরিক কৌশলগত বিষয়ের উপরে লেখাগুলো সব ইংরেজিতে লেখা হয়ে থাকে। সম্ভবত : প্রতি মাসে একটা রিপোর্ট হায়ার হেডকোয়ার্টারে দিতে হয় যে সব কোরেস্পোন্ডেন্স বাংলাতে হচ্ছে। এই রকম একটি চিঠির নমুনা হলো এইরূপ: 90% percent correspondence of our unit is done through Bangla.

বাংলায় চিঠিপত্র লেখা হচ্ছে তার মাসিক রিপোর্ট যাচ্ছে ইংরেজিতে এই বলে যে ইউনিটের সব চিঠিপত্র বাংলায় লেখা হচ্ছে। বর্তমানে আর্মিতে যত স্টাডি পিরিয়ড এবং প্রজেন্টেশন হয় এবং হচ্ছে সব ইংরেজিতে। কারন সামরিক কৌশলের বাংলা করা এখনও সম্ভব হয় নাই এবং এর বাংলা করা সমীচীনও হবে না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী হবে।

প্রশ্ন হতে পারে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি কিভাবে চীনা ভাষায় তাদের রণকৌশল রচনা করতে পারলো? এর জবাবে বলবো, চীন কম্যুনিস্ট শাসনে একটা বিচ্ছিন্ন দেশ হিসাবে তাদের জীবন ব্যবস্থাকে গড়ে তুলেছিলো। কিন্তু বর্তমানে চীন আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের আর্মিতে ব্যাপক সংষ্কার করেছে। এখন চীনের আর্মি অফিসাররা রেঙ্ক বেজ পরিধান করে । আমি উনিশ শত সাতাশি/আটাশি সালে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে কোর্স করার সময় দেখেছিলাম চীনের অফিসার এবং সৈনিক কাঁধে একটা স্টার পরে। অফিসারদের ইউনিফর্মে চার পকেট আর সৈনিকদের দুই পকেট- এই তফাৎ।

বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে নিয়োজিত করেছে এখন বাংলাদেশ আর্মির বাংলাকরণ আত্মঘাতী হবে। যেমন আমাদের ক্রিকেট টিমকে ইংরেজিতে কথোপকথন করা এখন সময়ের দাবী।

মোটাদাগে অফিসার মেসের ম্যেনুতে লাঞ্চে মাছ এবং ফ্রুট এবং ডিনারে মাংস এবং ডেজার্ট ( সুইট ) হয়। তো ফারুয়াতে ফিল্ড অফিসার মেসে লাঞ্চ করার সময় ম্যেনুতে দেখলাম বিভিন্ন জাতের মাছের কারি। বোয়াল এবং চিতল মাছের প্রায় কেজি ওজনের পেটি দেখে আমি একটু আশ্চর্য্যই হলাম। জিজ্ঞেস করলাম এতোবড় মাছ কি কাপ্তাই লেক থেকে কিনে এনেছেন? উত্তর পেলাম সব মাছ আমাদের ব্যাটালিয়ানের সামনের রেংখিয়াং খাল থেকে জেলেদের ধরা। শুনে রেংখিয়াং খাল সম্বন্ধে আমার কৌতূহল আরো বেড়ে গেলো। সে ব্যাপারে পরে আসছি।

(চলবে)

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন