ফের বেড়েছে রোহিঙ্গা স্রোত: আরও আসার অপেক্ষায়
টেকনাফ প্রতিনিধি:
কিছুদিন বিরতির পর আবারো বাংলাদেশে দিকে আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। ফের নতুনভাবে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের আরকানের মংডু শহরের সাতটি মুসলিম মহল্লায় অগ্নিসংযোগ করেছে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা।
এতে পুড়ে গেছে অন্তত ৪ শতাধিক ঘর-বাড়ি । এতে কোন হতাহতের ঘটনা জানা যায়নি।
শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, মংডু শহরের সিনেমা হলের পূর্ব পাশের মুসলিম মহল্লা, নয়াপাড়া, পূর্ব পাড়া, পশ্চিম পাড়া ও সুন্দরী পাড়ায় আগুন দেয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মংডু শহরের উত্তর দিকে মাঙ্গালা পাড়ায় আগুন দেয় সেনা সদস্যরা। এ সময় অগ্রবৌদ্ধরা রাখাইনরা মুসলিম বিরোধী শ্লোগান দেয়।
তারা বলছেন, মুসলিম রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন করতে মিয়ানমার বাহিনীর নৃশংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম আগেভাগে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছেন। যা
রা সাহস করে থেকে গিয়েছিল, এবার তাদের উপর শুরু হয়েছে নির্যাতন। যাতে তারাও পৈত্রিক ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হন।
নতুন আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মংডু সুধা পাড়ার দশ হাজার রোহিঙ্গাকে ঘিরে রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের গ্রামে আগুন দিয়েছে । সাথে চলছে নির্যাতন, দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটও। এজন্য তারা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার রাতে টেকনাফ পৌর এলাকা থেকে আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করেছে সীমান্তের অধিবাসিরা। এছাড়া গোদাম পাড়া নামক একটি স্থানে নদীর পাশে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে কয়েকদিন ধরে ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। সেখানে কাপড় ও পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট তাবু বানিয়ে তারা অবস্থান করছে।
সেনাবাহিনী তাদেরকে কোথাও যেতে দিচ্ছেনা। আবার তাদের কাছে থাকা মোবাইল ও দা-চুরি কেড়ে নিচ্ছে তারা। সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুক্রবার গোপনে সেখানে থাকা এক রোহিঙ্গা তার আত্মীয়দের কাছে একটি ভিডিও পাঠিয়ে এ অবস্থার বর্ণনা দেন। এখন তাদেরকে নিয়ে সেনাবাহিনী কি করবে তা নিয়ে তারা শংকিত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু অঞ্চলের ৯০ ভাগ গ্রাম রোহিঙ্গা শূন্য হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের ৭০ ভাগ বসতি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ও দেশটির সেনারা। রোহিঙ্গাদের ছেড়ে যাওয়া কিছু কিছু উন্নতমানের দ্বিতল কাঠের বাড়িঘর অক্ষত রাখা হয়েছে। সেসব দখলে নিচ্ছে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইনরা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদের উপকূলে এখনো হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রশাসন নজরদারী বৃদ্ধি ও স্থানীয় মানব পাচারকারী দালালদের উপর অভিযান পরিচালিত হওয়ায় কয়েকদিন ধরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে রোহিঙ্গা আসা কমেছিল। ফের রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা শুরু হওয়ায় অনুপ্রবেশ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) বলছে, গত কয়েকদিন গড়ে ১২’শ রোহিঙ্গা ঢুকছে। তবে গত ৭ অক্টোম্বর একদিনে ঢুকছে প্রায় ৭’শ জন রোহিঙ্গা। কর্মকর্তারা আরো দাবী করেছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশমুখী জনস্রোত এখনও থামেনি। এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে । সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রোহিঙ্গা আসার হার কমে আসছিল। মিয়ানমারের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। অক্টোবরে আবারো সীমান্তে রোহিঙ্গা স্রোত বাড়ছে। এত দিনে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, গত দুদিনে শাহপরীর দ্বীপ এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পাচারকারী দালালের নৌকা জব্দ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা আসা কিছুতা কমেছে। বাস্তবে বিজিবি কর্মকর্তা এমন কথা বললেও সীমান্ত দিয়ে দলে দলে গতকাল প্রায় ৭ শতাধিক রোহিঙ্গা এসেছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা নিধন এখনো অব্যাহত রয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে চলছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ।