Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ফারুয়া ব্যাটালিয়ান সদরে প্রথম দিন

আ ল ম ফজলুর রহমান

(চার)

ফারুয়া ব্যাটালিয়ান সদরে প্রথম দিন। বিকালে সব অফিসারদের সাথে চা পান করলাম। রাতে ডিনারের পরে আমার কোর্সমেট টুআইসির সাথে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাটালিয়ানের খুঁটিনাটি বিষয়ে চুলচেরা আলোচনা করলাম। জানতে পারলাম ব্যটালিয়ানের শক্তির এবং দুর্বলতার জায়গাগুলো। এবং কোথায় কোথায় দৃষ্টি দিতে হবে ।

গভীর আলোচনা করলাম, পাহাড়ের অপারেশন এলাকা, এলাকার পাহাড়ী জনবিন্যাস, ক্যাম্পের কৌশলগত লোকেশন, পাহাড়ী গ্রামের লোকেশন, মৌজা এবং গ্রামের হেডম্যান, কারবারিরা কে কেমন, শান্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিশদ ফিরিস্তি নিয়ে। আরো আলোচনা করলাম, সরকারি বনায়ন কর্মসূচী এবং এর নিরাপত্তা নিয়ে।

সবশেষে আলোচনা করলাম প্যাসিফিকেশন বা শান্তকরণ কার্যক্রমের নিবিড়তা নিয়ে। যেহেতু এটা আমার প্রথম ব্যটালিয়ান কমান্ড, অতএব আমার সামরিক বাহিনীতে হায়ার কমান্ডে যাবার এটাই প্রথম সোপান। এই ব্যাটালিয়ান কমান্ডের কৃতকার্যতার উপরে আমার সামরিক বাহিনীতে ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত নির্ভরশীল। এই ব্যাটালিয়ান কমান্ড যদি সমতল ভুমিতে হতো তাহলে তত উদ্বিগ্নতার কারণ ছিলো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলেন আর সৌভাগ্যই বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা ঐ সময় জেনারেল এরশাদের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়ে একটা গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলাম।


এই সিরিজের আগের লেখাগুলো পড়ুন


এর একটা উদাহরণ সামনে আসছে, যেটা পড়লে জানতে পারবেন আমাকে এবং অমার ব্যাটালিয়ানকে কেমন বিপদের সামনা সামনি করা হয়েছিলো। সকালে ব্রেকফাস্ট শেষে বসে আছি, রানার এসে আমাকে জানালো সিও সাহেব আমাকে সালাম দিয়েছেন। এই উপমহাদেশের সামরিক বাহিনীতে যখন কোনো সিনিয়র অফিসার কোনো জুনিয়র অফিসারকে তাঁর দফতরে ডেকে পাঠান তখন এই টার্মটা ব্যবহার করা হয় । অর্থাৎ সালাম দেওয়া মানে তিনি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এটা সম্ভবত মুঘল ফৌজের একটি ঐতিহ্য যা আমরা কালক্রমে পেয়েছি।

রানার হলো একজন সৈনিক যে বার্তা আদান প্রদানের কাজ করে । আমি বিদায়ী সিও’র অফিসে গেলে কুশল বিনিময়ের পর তিনি জানতে চাইলেন কবে ব্যাটালিয়ানের কমান্ড হস্তান্তরের প্রসেস শুরু করা যায়? আমি বললাম স্যার আপনি যখন চাইবেন তখনি শুরু করতে পারেন। তবে ইতিমধ্যেই ব্যাটালিয়ান এডজ্যুটেন্ড কোন্ প্রসেসে সিও আমাকে ব্যাটালিয়ান হ্যান্ড ওভার করতে চান তার একটা রূপরেখা দিয়েছিলো। আমি আরো বললাম, স্যার এডজ্যুটেন্ড এ ব্যাপারে আমাকে অবহিত করেছে। উত্তরে সি ও সাহেব বললেন তাহলে তো তুমি জেনেই গেছো। প্রসেসটা হবে, প্রথম পর্বে আমরা ফারুয়ার পুর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পুর্বের ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনের পরে ফারুয়ার উত্তরের ক্যাম্পসমুহ পরিদর্শন করবো।

দ্বিতীয় পর্বে রাজস্হলী জোনের ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ফারুয়াতে ফিরবো। ফারুয়াতে ফেরার পরে সিও সাহেব আমাকে সব হেডম্যানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন। এর পরে ব্যটালিয়ান দরবার অনুষ্ঠিত হবে। এই ব্যটালিয়ান দরবার একটা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান। সমতল কিংবা পাহাড় যেখানেই ব্যাটালিয়ান ডিপ্লোয়েড থাকুক উচ্চ কমান্ড হেডকোয়ার্টারে নির্দেশনা অনুযায়ী এই দরবার নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। এই দরবারে ব্যটালিয়ানের প্রত্যেক জেসিও, এনসিও এবং সৈনিকদের আনুষ্ঠানিক পোশাকে অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক। অফিসাররা রেজিমেন্টাল ব্যারেট পরিধান করেন।

নিয়ম হলো, প্রথমে একটা স্টেজ সাজানো হবে। তাতে একটি বড় মাপের চেয়ার স্হাপন করা হবে এবং মাইকের হ্যান্ডসেট রাখা হবে একটি রেজিমেন্টাল কালার এবং ক্রেস্ট সজ্জিত চাদরে মুড়ানো টেবিলে। স্টেজের নীচে ডান পাশে সারিবদ্ধ চেয়ারে সিনিয়রিটির ক্রমানুযায়ী অফিসাররা বসবেন। যে চেয়ারে দরবারে অফিসার এবং জেসিওরা বসবেন তা হবে এমইএস চেয়ার ইউনিভার্সাল হাতল ছাড়া- পিছন খাড়া যাতে সবাইর্ ঋজু হয়ে বসবেন।

স্টেজের নীচে বাম পাশে সিনিয়রিটির ক্রমানুযায়ী জেসিও এবং পিছনে সারিবদ্ধ বেঞ্চে এনসিওরা। স্টেজের নীচে ডানদিকে স্টান্ডসহ মাইকের হ্যান্ডসেট স্টাফ অফিসারদের প্রতিবেদন পাঠ এবং প্রশ্নের জবাব প্রদানের জন্য। সৈনিকরা মধ্যস্হলে ত্রিপলের উপরে বসবে । রেজিমেন্টাল রিলিজয়াস টিচার ( আরটি ) তার আনুষ্ঠানিক পোশাকে তৈরী দরবারের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াতের জন্যে।

এদিকে সিও দরবার অভিমুখে যাত্রা করলে বিউগলে সিও’র আগমন বার্তা ঘোষিত হতে থাকবে। সিও’র দরবারে আগমন দৃষ্টিগোচর হলে ব্যাটালিয়ান সেকেন্ড ইন কমান্ড ( টুআইসি ) দরবার প্যারেড সাবধান করবেন । তখন বিউগলের ঘোষণা বন্ধ হবে এবং টুআইসি সিওকে ” দরবার আপনার জন্য প্রস্তুত স্যার” রিপোর্ট দিয়ে নিজ আসনে বসবেন।

নিয়ম অনুযায়ী আরটি বা মাওলানা পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে তার অর্থ করবেন এবং নিজ আসনে বসবেন। এর পরে সিও’র অনুমতিক্রমে প্রথমে এডজ্যুটেন্ড তার প্রতিবেদন প্রদান করবেন। এর পরে ব্যটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার তার প্রতিবেদন দেবেন। অতপর সিও সাহেব তাঁর বক্তব্য পেশ করার পরে প্রশ্ন উত্তর পর্ব আরম্ভ হবে। সিও প্রথমে ডানদিকে অফিসারদের কোনো প্রশ্ন আছে কিনা জানতে চাইবেন । রেজিমেন্টাল দরবারে সাধারণত অফিসারদের কোনো প্রশ্ন থাকেনা। পরে সিও বামদিকে জেসিওদের প্রশ্ন জানতে চাইবেন। জেসিওদের পর্ব শেষ হলে এনসিওরা প্রশ্ন করবেন  এবং শেষে সৈনিকদের প্রশ্ন আরম্ভ হবে।

প্রশ্নের জবাব সিও নিজে দেবেন। প্রয়োজন হলে তিনি তার দুই প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এডজ্যুটেন্ড এবং কোয়ার্টার মাস্টারের সহায়তা নেবেন। ব্যাটালিয়ান সেকেন্ড ইন কমান্ডও প্রয়োজনে প্রশ্নের উওর দেন। প্রশ্ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দরবার চলতে থাকবে। দরবারে সৈনিকরা সম্পুর্ন স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারে। প্রশ্ন করার নিয়ম হলো, প্রথমে সে উঠে দাঁড়িয়ে সিওকে স্যালুট করে তার নিজের “রেজিমেন্টাল নাম্বার, পদবী এবং নাম উচ্চস্বরে উচ্চারণ করে “আমার আরজ স্যার” বলে তার প্রশ্ন করবে। উত্তর শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে দণ্ডায়মান থাকবে। এটা সব প্রশ্নকারীর জন্য প্রযোজ্য।

দরবার শেষ হলে সিও দরবার শেষের ঘোষণা দেবেন। তখন টুআইসি দরবার প্যারেড সাবধান করে দরবার শেষ করার জন্য সিও’র অনুমতি প্রার্থনা করবেন। সিও দরবারস্হল ত্যাগ নাকরা পর্যন্ত দরবার সাবধান অবস্থায় থাকবে। সিও’র চলে যাবার পরে টু আইসি দরবারে উত্থাপিত প্রশ্নের উপরে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কার কি করণীয় সবাইকে বুঝিয়ে বলবেন এবং তাঁর কাছে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিবেন।

এই দরবারও আমরা মুঘলদের কাছ থেকে পেয়েছি। দরবারের পরে বিদায়ী সিওকে ফিল্ড মেস থেকে আনুষ্ঠানিক ডিনার আউট করা হবে এবং তাঁকে রেজিমেন্টাল ক্রেস্ট প্রদান করা হবে ব্যটালিয়ানের সবার পক্ষ থেকে। একই সাথে ব্যটালিয়নের সৈনিকদের জন্য প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে।

চলবে….

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন