ফাইতং সড়কের বেহাল দশা: ২০ হাজার জনগোষ্ঠীর যাতায়াতে দুর্ভোগ
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ার সীমান্তবর্তী পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের একমাত্র যাতায়াতের প্রধান সড়ক বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এলাকার যাতায়াতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে কোথাও খানা খন্দকে আবার কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। চকরিয়াস্থ বানিয়ারছড়া স্টেশন থেকে শিবাতলী পর্যন্ত এ সড়কের দুরত্ব ৩ কিলোমিটার।
নিত্যদিন মরণ ঝুঁকি নিয়েই সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় সহস্রাধিক নানা যানবাহন ও ২০ হাজার জনগোষ্ঠী। সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্ত সৃষ্টির কারণে ভেঙ্গে নাজুক হয়ে পড়ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইউনিয়নের ভেতরে পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে অবৈধ ভাবে ২৪টি ব্রিক ফিল্ড। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে নিয়মিত ২৪টি ব্রিক ফিল্ডের ইট বোঝাই করে বড় বড় ট্রাক ও ডাম্পার দিয়ে ইট টানার কারণে সড়কের এ বেহালদশায় পরিণত হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, চকরিয়া উপজেলার সীমান্ত ফাইতং ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক হচ্ছে ফাইতং সড়ক। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ৮-১০ হাজার লোক যাতায়াত করে। চকরিয়াস্থ বানিয়ারছড়া স্টেশন থেকে শিবাতলী পর্যন্ত সড়কের দুরত্ব হচ্ছে প্রায় ৩ কিলোমিটার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় (এলজিইডি)বিভাগের নিয়োগকৃত ঠিকাদার ৪ বছর পূর্বে তিন কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করেন।
রাস্তার বাকী অংশটুকু কাজ না করার ফলে যাতায়াতের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন কম করে হলেও প্রায় ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে। কিন্তু সড়কটি দ্রুত মেরামতের ব্যাপারে কোন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মাঝে এক ধরণের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখাগেছে। দীর্ঘ ২ বছর ধরে সড়কের বড় ধরণের কোন সংস্কার কাজ না করায় দিন দিন সড়কটি চলাচল অযোগ্য হয়ে বেহালদশায় পরিণত হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দ্রুত সময়ে সংস্কার করতে সচেতনমহল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফাইতং ইউনিয়নের জনপদের ভেতরে অনুমোদন বিহীন অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ২৪টি মতো ব্রিক ফিল্ড। নিয়মিত এ সড়ক দিয়ে ইট বোঝাইকৃত ট্রাক-পিকআপ ও ডাম্পার নিয়ে ইট যাচ্ছে চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালী উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে। শুস্ক ও বর্ষা মৌসুমের রাত-দিন সমান তালে চলে ইট বোঝাইকৃত যান চলাচল।
এ ইট বোঝাইকৃত ট্রাকের কারণে সৃষ্টি হয়েছে সড়কে বড় বড় গর্ত। কোথাও পাহাড়ের মাটি পড়ে রাস্তায় কাদা সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ঢালু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলের কারণে গর্ত ও পুকুর সৃষ্টি হয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যে সব ব্রিক ফিল্ডের ইট যাচ্ছে সে সব ব্রিক ফিল্ড গুলো হল, ফখরুদ্দীনের মালিকানাধীন SBM, নাজেম উদ্দিনের FBM, মহিউদ্দিনেরMBM, নাজু(চুনতি) AMB, দুবাই প্রবাসী রফিক আহমদের ABM, মো. বেলাল উদ্দিনের ABC, মাহমুদুল হকের MBI, ফেরদৌস আহমদের BBC, হুমায়ুন কবির HBM, আরিফুর রহমান মানিক PBC,আমির হামজা TSB, পেকুয়া ভাইস চেয়ারম্যান মন্জু PBM, মোজাম্মেল হকের EBM, মোক্তার আহমদের BBM, কবির আহমদের UBM, বশির আহমদের ACB, মোক্তার আহমদ 3BM, গিয়াস উদ্দিনের MMB, জসিম উদ্দিনের SBW, ফরিদুল আলমের FAC ও HMB ব্রিক ফিল্ডসহ ২৪টির মতো ফিল্ডের কারণে রাস্তার এ ভয়াবহতম রূপ ধারণ করেছে বলে অভিযোগে স্থানীয়রা জানায়।
সড়কে সিএনজি চালক মতিন বলেন, বানিয়ারছড়া স্টেশন থেকে ফাইতং ইউনিয়ন স্টেশন পর্যন্ত কোন রখম যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এর পরের অংশে গাড়ি চালানো সম্ভব হয়না। সড়কে বড় বড় গর্তের জন্য ভাড়া নিয়ে যাওয়া যায়না। বর্তমানে লোকজন পায়ে হেঁটেই চলাচল করছে।
এ বিষয়ে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার জনগোষ্ঠীর যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফাইতং সড়ক। সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কটি নানা স্থানে ভেঙ্গে খানা খন্দক ও গর্ত হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গর্ত হওয়ায় চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। সড়ক মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তার সাথে বেশ কয়েকদফা যোগাযোগ করা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কটি সংস্কারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।