প্রাণহীন খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প

10967725_767076736719949_1864740730_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি‘র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের পাশাপাশি ৭২ ঘন্টার হরতালে প্রভাব পড়েছে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতেও। লাভজনক এ খাতটি টানা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসুচীর রোষানলে পড়ে মারাত্বক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ধ্বসের আশঙ্কায় হতাশায় ভুগছে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভাসমান ব্যবসায়ীরা।

গেল বছরের এ সময়ে যখন জেলার পর্যটন কেন্দ্রগলোতে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলনা। পর্যটকদের পদচারনায় মুখর ছিল খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প। ঠিক এ বছরের একই সময়ে বিরোধী জোটের টানা অবরোধ-হরতালের কারণে প্রানহীন জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা।

গেল বছরের একই সময়ে খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেল গুলো আগত পর্যটকদের চাহিদা মতো সিট বুকিং দিতে পারছিলনা। আর এ বছর পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় তারা সকলেই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। যেসব হোটেল-মোটেলে অপর্যটকদের আগাম বুকিং দেয়া ছিল চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেসব বুকিং অনেকেই বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।

বিরোধী জোটের টানা ৭২ ঘন্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ভ্রমনপিপাসু ছাড়া কোন পর্যটককে দেখা যায়নি। আলাপকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন আগে যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটকের পদচানায় মুখর থাকতো আলুটিলা এখন অবরোধের কারনে এখানে কোন পর্যটকই আসেনা। স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্ভুনাথ ত্রিপুরা বলেন, পর্যটকরাই আমাদের ক্রেতা। তাই পর্যটক নেই বলে আমাদের বেচাকেনাও নেই। আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি। আরেক ব্যাবসায়ী অবরোধের মতো কর্মসুচী না দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পরিবার-পরিজন না খেয়ে মরবে।

10965241_767076926719930_936982856_o

একই অবস্থা খাগড়াছড়ি পার্বত্য পরিষদ নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদ পার্কেও। সেখানে বৈকালিক ভ্রমনে আসা স্থানীয়রা ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোন পর্যটকের পদচারনা নেই। ফলে প্রানহীন হয়ে পড়েছে জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্রটি। এমনটাই জানালেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তার মতে এখানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন পর্যটকের উপস্থিতি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

প্রাণহীন অবস্থা জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন ‘রিছাং ঝর্ণা’ পর্যটন কেন্দ্রেও। সবসময় পর্যটকদের পদচারনায় মুখর সেখানে ঘুরে দেখা গেছে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে, নৈস্বর্গের চারনভুমি ’সাজেক ভ্যালি’ও এখন পর্যটক শূন্য ।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সহ দেশের পর্যটন শিল্প সম্বৃদ্ধ এলাকাকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসুচীর বাইরে রাখার আহবান জানিয়ে খাগড়াছড়ির হোটেল ব্যবসায়ী এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, আমরা বিনিয়োগ করেও পুজি তুলতে পারছিনা। পর্যটন শিল্প ব্যাহত হলে শুধুমাত্র আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিনা, দেশও তো পিছিয়ে পড়ছে। বিদেশী পর্যটকদের কাছে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমন অবস্তা চলতে থাকলে দেশের পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে খাগড়াছড়িতে পর্যটন শিল্প সম্বৃদ্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, টানা অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসুচী থাকায় পর্যটন শিল্পে প্রভাব পড়েছে। খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প ইতিমধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের চলমান অস্থিরতা স্বাভাবিক হলে আবারো পর্যটকদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠবে খাগড়াছড়ি পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন