কাউখালীতে আগুনে পুড়লো ৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্ষতি ১০ লক্ষাধিক টাকা

কাউখালী প্রতিনিধি:

রাঙামাটির কাউখালীতে দূর্বৃত্তদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে ছয়টি দোকান। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা। রবিবার সাড়ে চারটা নাগাদ উপজেলার বেতছড়িতে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয়দের প্রাণপন চেষ্টায় রক্ষা পেয়েছে ১০টির বেশি বসত ঘর।

প্রত্যক্ষদর্শী আমির উদ্দিন জানান, বেতছড়ি এলাকায় ব্যবসায়ীক কারণে প্রতিদিন একটি চা দোকান সারারাত খোলা থাকে। ঐ দোকানের রাতভর দোকান ভর্তি থাকে মানুষ। রাত সাড়ে চারটার সময় রইস মিয়ার মার্কেটের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে আগুনের কুন্ডলী দেখতে পায় দোকানে বসা কয়েকজন। মাত্র ৫০ গজের মধ্যে দোকান থেকে মানুষ বের হওয়ার মূহুর্তেই অস্বাভাবিক গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

মার্কেটের মালিক রইস মিয়া জানান, যে স্থান থেকে আগুন লেগেছে সেখানে কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ বা কোন চা দোকানও ছিলনা। রাতের শেষভাগে এসে ঐ স্থানে আগুন লাগার মত কোন পরিস্থিতি ছিলনা। কোন একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ধারনা দুর্বৃত্তরা পেট্রোল জাতীয় কিছু ব্যবহার করেছে, নইলে মাত্র ১০ মিনিটে আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হলেন, রহিম বাদশা, মো. রুবেল, মো. ইসমাইল, নুরু মিয়া, রইস মিয়া, জমির আলী ও সমাজের একটি অফিস কক্ষ। উল্লেখিত দোকানগুলোর মধ্যে ১টি চা দোকন ব্যতিরেকে সবগুলো মুদি দোকান।

গত এক সপ্তাহে আরো অন্তত দুটি রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি একই সময় রাত সাড়ে চারটায় আগুন দেয়া হয় উপজেলা সদরের মিনি মার্কেটে। সেখানেও পুড়ে যায় দুটি দোকান। স্থানীয়দের প্রাণপন চেষ্টায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় ফ্রেন্ডস মটরসসহ কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৭ তারিখ  রাতে বেতছড়ি জামে মসজিদ মার্কেটের পেছনে শুকনো কাঠ দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পার্শ্বেই ছিদ্দিক আকবর এতিমখানার ছাত্ররা আগুন দেখতে পাওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে যায়।

এছাড়াও একই পদ্ধতিতে ১৭ জানুয়ারি বেতছড়ি গ্রামের নার্সারী ব্যবসায়ী মো. তোহার মার্কেটের ৬টি দোকান রহস্যজনক আগুনে পড়ে যায়। তখন ঐ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্বাভাবিক মনে হলেও পরবর্তীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখে বিষয়টি মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। স্থানীয়রা ধারনা করছেন সব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো শেষ রাতে হওয়ায় তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কে বা কারা এ অগ্নিকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত তা বের করতে পারছেনা প্রশাসন কিংবা এলাকাবাসী। ফলে কাউখালী জুড়ে আগুন আতঙ্কে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কাউখালী থানার ওসি মো. কবির হোসেন জানান, এ বিষয়টি আমাদের জন্য বাড়তি টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শেষ রাতে হওয়ায় তা নিয়ে কিছুটা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত বললেও এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। ওসি জানান, এ ঘটনা বড়সড় হওয়ার আগেই কিছু একটা করা প্রয়োজন। তাছাড়া যে সময় ও যেসব স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে সেসব স্থানে সার্বক্ষনিক পুলিশও থাকেনা।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌচামং চৌধুরী ও কাউখালী স্থায়ী ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধিরা। এসময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাথাপিছু ২৫০০ টাকা করে প্রদান করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাপিছু ১০০০ টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি টুন্টু লাল দে, সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মো. আব্দুল গফুর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন