পেকুয়ায় ‘গায়েবী মামলা’য় উপজেলা বিএনপির সভাপতি সহ ১৬ নেতাকর্মী আসামি

পেকুয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়ায় কবির আহমদ চৌধুরী বাজারস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয় দুইদিন ধরে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পুলিশের ভয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া তো দূরের কথা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরেও থাকতে পারছেনা। তবুও তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে নাশকতার অভিযোগে।

ঘটনার তারিখ শনিবার(১৪ অক্টোবর) রাত ৯ টায়। আসামি করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে।

মামলার এজাহারে জামায়াত বিএনপির নোতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নাশকতা ও গাড়ী ভাংচুরের অভিযোগ আনা হলেও জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়নি। ১৬ জন আসামির সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তা। পেকুয়া থানার এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম ভূইয়া বাদী হয়ে মামলাটি থানায় রুজু করেন গতকাল ১৫ অক্টোবর।

এদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাৎক্ষনিক এ ধরনের ‘গায়েবী মামলা’র তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।

মামলার এজহার সূত্রে জানাযায়, ঘটনার সময় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে থানার এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম জামায়াত বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার রায়ের প্রতিবাদ ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে দায়ের করা মামলায় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ ও গাড়ী ভাংচুর করছে এমন খবর পেয়ে পেকুয়া থানার ওসির নির্দেশে পেকুয়া বাজারে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। এসময় মামলার বাদী ৫ টি লাঠি, টমটমের ভাঙ্গা কাঁচ ও গ্লাস ভাঙ্গা একটি কাঁচ জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন।

গতকাল এসআই ইয়াকুবুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৯ তারিখ- ১৫-১০-২০১৮ ইং। মামলায় পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ, উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ রুবেল, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরান জাদীদ মুকুট, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল আজিম, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোছাইন, স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক আহাছান উল্লাহসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অপরাপর আসামিরা হল, বিএনপি নেতা শাহনেওয়াজ আজাদ এমইউপি, সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মাহবুবুল করিম এমইউপি, সাজ্জাদ হোসেন এমইউপি, যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম বিটু, মাস্টার ছৈয়দ নুরের ছেলে সাজ্জাদ, আসাদ রুবেল, ছাত্রদল নেতা শওকত হোসেন বিজয়, রাশেদুল ইসলাম প্রমূখ।

এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী এসআই ইয়াকুবুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এজহারে উল্লেখিত বিবরণটি হুবহু তুলে ধরেন।

গত ২ দিন ধরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে অথচ দলীয় কার্যালয়ের সামনেই ঘটনা দেখিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা দায়েরের বিষয়টি ‘গায়েবি মামলা’ কিনা জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “ঘটনা ঘটেছে বিধায় মামলা হয়েছে। ঘটনা না ঘটলে তো আর মামলা হতো না।” মামলার জব্দ তালিকায় কি কি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান “এই মূহুর্তে আমি মনে করতে পারছি না”। এজাহারের উল্লেখিত জব্দ তালিকা তাকে জানালে তিনি বলেন “এজহারে থাকলে সেগুলোই জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে”।

আশে পাশের ব্যবসায়ীরা কেউ উল্লেখিত সময়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা বলতে পারেনি তাহলে কিভাবে আপনারা মামলা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের স্বাক্ষী প্রমাণ রয়েছে।”

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পূর্ব পাশের দেয়ালের সাথে লাগানো নবীল ট্রেডার্সের মালিক গিয়াস উদ্দিনের কাছে গাড়ী ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, “গত দুইদিন ধরে তো আমার দোকানেই পুলিশ অবস্থান নিয়ে রাত অবদি ডিউটি করে বিএনপি অফিস পাহারা দিয়েছে। গাড়ী ভাংচুর বা মিছিল মিটিং কিছুই আমার চোখে পড়েনি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় কার্যালয়ের পশ্চীম পাশের কাদের কুলিং কর্ণারের মালিক মোহাম্মদ কাদের জানান, “আমি রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম কিন্তু ভাংচুরের কোনো ঘটনা তো এখানে ঘটেনি। পুলিশ গত ২ দিন ধরে দলীয় কার্যালয় পাহারা দিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি।”

এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “গত ২ দিন ধরে পেকুয়া বাজারস্থ বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। কার্যালয়ে যাওয়া তো দূরের কথা আমাদের নেতা-কর্মীরা এক সপ্তাহ ধরে ঘর বাড়ীতেই থাকতে পারছেন না। বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গতকাল গভীর রাতে বাড়ী থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আজ শুনলাম পার্টি অফিসের সামনে নাশকতার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।” তিনি জানান, সারা দেশের ন্যায় সরকারের নির্দেশে পেকুয়ায়ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হল। মামলা হামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ভীতু নয় বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন