পেকুয়ার ৪ ইউনিয়নের ৩০ হাজার পানিবন্দির ত্রাণের জন্য হাহাকার

সরেজমিন রিপোর্ট

পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এতে নজিরবিহীন দূর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ফলে খাদ্যর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষরা তাদের জীবন বাচাঁর তাগিদে হাহাকার করছে।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর বিরূপ প্রভাব ও পূর্ণিমার ভরা তীথিতে সাগরে আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের প্রচন্ড পানির ধাক্কায় উপজেলার উপকূলবতী তিন ইউনিয়নসহ পেকুয়া সদর ইউনিয়নে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাধের বিপুল অংশ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হওয়া অংশ দিয়ে সাগরের লোনা পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে করে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন, মগনামা ইউনিয়ন, রাজাখালী ইউনিয়ন, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান ইউনিয়নের সিরাদিয়া অংশে বেড়িবাধঁ বিলীন হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানির প্রচন্ড স্রোত লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে ইউনিয়নের সিরাদিয়া, বিলহাচুরা, গোয়াখালী, জালিয়াখালী, হরিণাফাড়ি, নন্দীর পাড়া, সহ বিপুল নিম্নঞ্চল পানিতে নির্মজ্জিত হয়ে পড়েছে।

উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম চৌং জানান ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া একাধিক স্থানে বেড়িবাধঁ বিলীন হয়েছে। গত তিন চার দিন ধরে করিয়ারদিয়ার বিপুল জনগোষ্ঠী পানিবন্দি হয়েছে।ষাড়দুনিয়া পাড়া,টেক পাড়া, ফেরাসিংগা পাড়া, পেকুয়ার চর, নতুন ঘোনাসহ উজানটিয়া ইউনিয়নের সব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ চেইন বেড়িবাধঁ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ঘাট মাঝির পাড়া, উত্তর পাড়া, পুরাতন বহদ্দার পাড়া, হারুন মাতবর পাড়া, বিন্ধার পাড়া, লাল মিয়া পাড়া, হারঘর পাড়া, শরৎত ঘোনাসহ পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর জানান ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি অংশে প্রায় এক কিলোমিটার পাউবোর বেড়িবাধঁ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় নতুন ঘোনা, বকশিয়া ঘোনা, চরিপাড়া, মৌলভী পাড়া, আমিলা পাড়া, পালা কাটা, দশের ঘোনা, নতুন পাড়া, বদিউদ্দীন পাড়া, বামলা পাড়া, সুন্দরী পাড়া, মাতবর পাড়াসহ পুরো ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এতে শত শত বাড়িঘর বিধস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামো পানির নিচে নির্মজ্জিত রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এ তিন ইউনিয়নের উৎপাদিত হাজার হাজার মণ স্তবকৃত লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধুমাত্র লবণ শিল্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পানির কারণে জনজীবন মারাত্মক দূর্বিসহ হয়েছে। স্থানীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। এতে ঘরবাড়িতে পানি উঠায় এসব এলাকার মানুষের ধান চাল, সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী ভেসে গেছে।

এছাড়া অনেক মালামাল লোনাপানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘুর্ণিঝড় হওয়ার ৫ দিন অতিবাহিত হচ্ছে তার পরও এসব এলাকায় জোয়ার ভাটা চলছে। যার ফলে মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে ঘরমুখো হতে পারেনি। ফলে খাদ্য সংকটে পড়ছে দূর্গত এলাকার মানুষ।

এদিকে উপকুলীয় এলাকার ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাধ চরম ঝুকিতে আছে। এরই মধ্যে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাধ সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। যার ফলে প্রতিদিন জোয়ার ভাটা চলছে। জোয়ার ভাটার কারণে বহু গ্রাম একাকার হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে এসব ইউনিয়নের লোকজনকে অন্যত্রে চলে যেতে হবে।

এদিকে মগনামা ইউনিয়নের মরঘোনা এলাকার বজল আহমদ জানান, ঘরে চাল নেই খাব কি? ত্রাণ ও পাচ্ছি না কোথাও যেতে পাচ্ছি না। ত্রানের জন্য হাহাকার করে বসে আছে এসব বন্যার্তরা। চেয়ে আছে কখন ত্রাণ আসছে বন্যার পানি ও কমছে না। অত্যন্ত মানবেতর ও অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে উপক’লীয় হাজার হাজার মানুষ। এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অসংখ্য পরিবার।

অন্যদিকে সরকারীভাবে বরাদ্দের ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুই অপ্রতুল বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর মরণ ছোবলে মূহুর্তের মধ্যেই লন্ডবন্ড হয়ে যায় পেকুয়ার তিন ইউনিয়ন এবং সদরের আংশিক। এ ইউনিয়নের অসংখ্য মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে স্থাণীয় মৎস্যচার্ষীদের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্লাবিত এলাকায় ছয় হাজার কেজি চিড়া, চার হাজার কেজি মুড়ি, চব্বিশ শত কেজি গুড়, তিন হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে মোমবাতি দিয়াশলাই বিতরণ করা হয়েছে। জরুরী ত্রাণ তৎপরতার অংশ হিসেবে দূর্গত এলাকায় তের মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান জানিয়েছেন সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত পুনবাসনের জন্য তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন