পেকুয়ার ৩ ইউনিয়নে ২হাজার ৫শ ঘর বিধ্বস্ত : তলিয়ে গেছে ৫০ কোটি টাকার লবণ

PIC.1-PEKUA-23-05-16

পেকুয়া প্রতিনিধি:

পেকুয়ায় ঘুর্ণিঝড় রুয়ানুর আঘাতে ৩ ইউনিয়নে ২হাজার ৫শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকার লবণ চাষিদের ৫০কোটি টাকার লবণ। এছাড়া উজানটিয়ায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাধ ভেঙ্গে মগনামায় দুটি পয়েন্টে ১৭ চেইন বেড়িবাধঁ বিলিন হয়ে গেলেছে। এখনো জোয়ার ভাটা অব্যাহত থাকায় দুর্যোগ বেড়ে গেছে।

জানা যায়, মগনামা ও উজানটিয়ায় রোববার দুপুরের জোয়ারে লোকালয়ে ৩ থেকে ৫ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ঘুর্ণিঝড়ে আমার ইউনিয়নে ৭শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সহ্রোধিক বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো জোয়ার ভাটা অব্যাহত থাকায় লবণ ও চিংড়ির ক্ষয়ক্ষতি প্রকৃত পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব না।

মগনামা ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরাফাত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, প্রায় ১২শ ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, কমবেশি সব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলবঙ্গোপসাগরের জোয়ার ভাটায় পুরো মগনামা একাকার। গত ৬মাসে সরকার ২০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ বেড়িবাধ নির্মাণে করছিল কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলীর অবহেলার কারণে যথাযথভাবে কাজ না হওয়ায় এ চরম দূর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এ ইউনিয়নকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌছালে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। এ পর্যন্ত ৬ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা অতি নগণ্য।

জোয়ারের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করে ভাটা নামলে ঘরে গিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করছে। সুপেয়পানি খাদ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেন। একইভাবে রাজাখালীতে প্রায় ৬ থেকে ৭শ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। দুটি অংশে বেড়িবাধ ভেঙ্গেগেলে জোয়ার ভাটা অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন রাজাখালী, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নে শুষ্ক মৌসুমে লবণ উৎপাদন করে থাকে। লবণের মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও চাষীদের লবণগুলি রাস্তা,লবণ মাঠে ও বেড়িবাঁধের উপরে হাজার হাজার মণ মওজুদ রাখলে ও তারা ঘুর্ণিঝড়ের আক্রমন থেকে রেহাই পাইনি। উপজেলার মগনামার কাকপাড়া, শরতঘোনা, রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়াঘোনা, উজানটিয়া ইউনিয়নের টেকপাড়া, রুপালী বাজার সহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।

উজানটিয়া ইউনিয়নের লবণ ব্যবসায়ী এম আজম উদ্দিন জানান, আমার বেড়িবাঁধের উপর মওজুদ কৃত ৩০০০ মণ লবণ পানিতে মিশে গেছে। যার মুল্য ১১ লক্ষ টাকা।

সাইফুল কাদের এমইউপি জানান, আমার ৭০০০ মণ লবণ পানির মধ্যে মিশে গেছে। যার মুল্য ২৫ লক্ষ টাকা। এ ভাবে লবণ চাষি জাগের হোসেনের ৫০০মণ, কবির হোসেনের ৪শ মণ, নাছির উদ্দিন পিন্টুর ৫শ মণ, জসিম উদ্দিন ২শ মণ, নুরুল আলমের ৪শ মণ, মফিজুর রহমানের ৪শ মণ পানির সাথে মিশে গেছে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের লবণ চাষী ও লবণ ব্যবসায়ীরা তাদের সারা বছরের পুজি হারিয়ে ভিখারিতে পরিণত হয়েছে।

এ ব্যাপারে লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, প্রাণহানির ঘটনা থেকে পেকুয়াবাসী রক্ষাপেলেও ঘরবাড়ি ও চিংড়ি ঘের লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। জোয়ার ভাটা অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, পেকুয়ার ৩ইউনিয়নকে দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণসহ সুপেয়পানি খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্যে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। জোয়ারের প্রভাব কমার সাথে সাথে বিধ্বস্ত বেড়িবাধ নির্মাণ করা না হলে ৩ ইউনিয়নের লোকজনকে অন্যত্রে সরিয়ে নিতে হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন