পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল ড্রাগন চাষে ঝুঁকছে চকরিয়ার চাষিরা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ড্রাগন ফলের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই ফলের চাষে অতিরিক্ত মুনাফা হওয়ায় এর পরিধিও বাড়ছে। উপজেলার খুটাখালী, ডুলাহাজারা, কাকারাসহ বিভিন্নস্থানে এই ফলের চাষ জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি বাজারেও এই ফলের চাহিদা বেড়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অসাধারণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ব্যতিক্রমী এই ফল ক্ষেত থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘেঁষা চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হায়দারনাশী গ্রামের সফল ড্রাগন চাষি আয়েশা বেগম জানান, বর্তমানে তাঁর ড্রাগন ফলের পিলার রয়েছে ১২টি। তন্মধ্যে প্রতি পিলারে তিনটি করে চারা রোপণ করা আছে। মাত্র ১০ শতাংশ জায়গায় ১২ পিলারের ৩৬টি ড্রাগন চারায় ফল দেওয়াও শুরু করেছে।

তিনি জানান, বিয়ের কয়েক বছর পর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় পাঁচ-ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ চালানোর জন্য কায়িক শ্রমও দিতে পারছিলেন না স্বামী আবুল কালাম আবেদীন।

আয়েশা বেগম বলেন, এরই মাঝে নেকম-ক্রেল প্রকল্পের এক মাঠকর্মীর নজরে আসি আমি। তাঁর কথামতো নিজের ১০ শতাংশ জায়গায় প্রথমে শুরু করি বিভিন্ন সবজির আবাদের। সবজি চাষ করে একটু একটু লাভের মুখ দেখার পর আমার মনেও যেন নতুন করে আশার সঞ্চার হচ্ছে।’

আয়েশা বলেন, ‘প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে (গরম) ড্রাগন চারায় ফল আসা শুরু করে। যা শীত মৌসুমের আগ পর্যন্ত ফল দেওয়া বিদ্যমান থাকে। এই ড্রাগন ফল বিক্রি করে প্রতি মৌসুমে বাড়তি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে আমার। প্রতিকেজি ড্রাগন ফল প্রকারভেদে বিক্রি করা হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকার মধ্যে।

তিনি বলেন, একসময় সবজি চাষকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এখন ঝুঁকে পড়েছি ড্রাগন ফল চাষে। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করা হচ্ছে মরিচ, বেগুন, টমেটো, শিমসহ রকমারী সবজির। এতে বাড়তি আয়ও হচ্ছে। আর এসব আয় দিয়ে আমার পরিবার এখন আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল। মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়া স্বামীও চিকিৎসা পেয়ে এখন ভাল হওয়ার পথে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে নেকম-ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতা পাওয়ায়।’

নেকম-ক্রেল প্রকল্পের সাইট অফিসার আব্দুল কাইয়ুম জানান, ক্রেল প্রকল্পের পক্ষ থেকে আয়েশা বেগমকে ড্রাগন ফল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি প্রতি মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন। এছাড়াও একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সবজি ফলিয়েও প্রতিমাসে অন্তত তিন হাজার টাকা আয় করছেন। আবার ড্রাগনের কাটিং বিক্রি করেও বাড়তি আয় করছেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী মহিলারাও এখন তার কাছ থেকে ড্রাগন ফলের চাষ শিখছেন ও কাটিং সংগ্রহ করছেন।

কাইয়ুম জানান, একেকটি ড্রাগন ফলের ওজন বেশি। দুটি বা তিনটিতেই এক কেজি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর গরম আসলেই ফল ধরা শুরু করে। যা শীতমৌসুম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার ফল তোলা যায়। একটি চারা থেকে একটানা ২৫ বছর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে সবজির আবাদ তো থাকেই। এভাবে নেকম-ক্রেল প্রকল্পের অধীনে ৩৪টি ড্রাগন ফলের প্রদর্শনী খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

আবদুল কাইয়ুম বলেন, ক্রেল প্রকল্প পরিবেশ, প্রতিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমন, সামাজিক বনায়নের উপর সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আয়োজন করছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও। ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটিকে শক্তিশালী করে তাদের বাৎসরিক কর্ম পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনজনিত কর্ম পরিকল্পনা সম্পৃক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে হতদরিদ্র আয়েশা বেগমের মতো হাজারো পরিবারকে স্বাবলম্বী করে ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিকে একটি শক্তিশালী ও টেকসই সংগঠন হিসেবে দাঁড় করিয়ে বন, পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্যকে রক্ষায় সু-প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে এই নেকম-ক্রেল প্রকল্প।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন