পুরো মিয়ানমারে শুদ্ধি অভিযান ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে!

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ বৌদ্ধ অধ্যুষিত মধ্যাঞ্চলেও জাতিগত শুদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে। রাখাইনের গোলযোগপূর্ণ প্রত্যন্ত উত্তর পশ্চিমাঞ্চল থেকে সহিংসতা ওই নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ মুসলিম বাস করেন। মুসলিমদের একঘরে করে রাখা ও তাদের সাথে লেনদেন করলে শাস্তির প্রচলনের কারণে এই আশঙ্কা বাড়ছে।

আদিবাসী রাখাইন ও বৌদ্ধরা মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছে এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের সাথে যারা লেনদেন করছেন তাদের জরিমানা থেকে শুরু করে মারধর এমনকি এলাকা থেকে বিতাড়িতও করছে। রোহিঙ্গা মুসলিম বিদ্রোহীদের কবল থেকে রাখাইন সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে জোর দাবি ওই কমিটিগুলোর নেতাদের। ওই অঞ্চলের মুসলিমেরা বলেন, তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে এবং জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় রসদও তারা পাপ্রেণ না। যে কারণে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

গত কয়েকদিনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা নিয়ে নতুন এসব আশ্রয়প্রার্থী জানিয়েছেন, বৌদ্ধরা দল বেঁধে তাদের ওপর হামলা করছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বলছে, সেনাসদস্য ও স্থানীয় বৌদ্ধরা রীতিমতো প্রচারণা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যাতে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। স্থানীয় প্রশাসন একচোখা আচরণ করছে বলেও জানিয়েছেন নতুন আসা এসব মানুষ।

গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসাথে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে কথিত বিদ্রোহীদের হামলা চালানোর পর রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়। প্রাণ বাঁচাতে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছে।

রাখাইনের মধ্যাঞ্চলের শহর মাইবনের একজন বৌদ্ধভিক্ষু বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের একত্রে বসবাস সম্ভব নয়। সরকার তাদের সাথে সমঝোতায় আসতে পারছে না। যে কারণে আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি, যাতে সঙ্ঘাত এড়ানো যায়। গত আগস্টে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীগোষ্ঠী এআরএসএর হামলার পর থেকেই মাইবন শহরজুড়ে মাইকিং করা হয় এবং স্থানীয় ভিক্ষু ও রাখাইন সম্প্রদায়কে মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই নির্দেশ অমান্যকারী রাখাইন নারী সোয়ে চাই (৩৫) বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের স্থানীয় একটি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর একদল লোক তাকে ঘিরে ধরে মারধর করে, চুল কেটে দেয় এবং গলায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে পুরো শহর ঘোরায়। একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে বর্ণনা করেন রাখাইনের জেনারেল অ্যাডমিনিসট্রেশন ডিপার্টমেন্টের উপ পরিচালক কিয়াউ সওয়ার তুন। ঘটনাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং দুই নারী ও এক পুরুষের বিরুদ্ধে সোয়ে চাইকে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অভিযুক্ত দুই নারী আরাকান উইমেন্স নেটওয়ার্ক ইন মাইবনের সদস্য।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের মুখপাত্র মিন আউং বলেন, মুসলিমদের সাথে লেনদেন করলে বৌদ্ধদের শাস্তি দেয়ার কোনো খবর তার কাছে নেই। তিনি বলেন, আমার মনে হয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্কের মাধ্যমে এই উত্তেজনা কমানো সম্ভব। অন্য রাজ্য ও অঞ্চলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় থেকে গঠন করা বিভিন্ন দল পারস্পরিক আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করে। রাখাইনে এ ধরনের কোনো দল নেই।

২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গার পর প্রায় তিন হাজার মুসলিম মাইবনে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বৌদ্ধ নেতারা ওই ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, সেখানে শুধু সরকার ত্রাণ বিতরণ করবে এবং তাও বৌদ্ধরা খতিয়ে দেখবে। অশিন সারমানি নামের এক নেতা বলেন, আমাদের ভয়, যদি আমরা বাঙালিদের জন্য এনজিওর ত্রাণের নৌকাগুলো পরীক্ষা না করি তবে সেগুলোতে ত্রাণের নামে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ হতে পারে। বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী বলে মনে করে এবং সে কারণে তাদের বাঙালি বলেই অভিহিত করে।

সূত্র: নয়া দিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন