পাহাড় ধসে দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়েছে উদ্ধার তৎপরতা
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে ১৪৬ জনের মৃত্যু ও এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আজ বুধবার পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তারা এসময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন।
এদিকে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি মুহূর্তে ৫০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ বান্ডিল টিন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেতুমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটি এলাকায় যান। দুপুরে তিনি বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার আগে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পুরো জেলায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আটশর বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ১৫ লাখ টাকা ও ১০০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সরকার তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধস ও ঢলে নিহতের ঘটনার পর রাঙ্গুনিয়ায় ৫৮০টি পরিবার, চন্দনাইশে ৫০ পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও এর আশপাশ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আজ বুধবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রাঙামাটি যাওয়ার পথে রাজানগর রানীরহাট এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ভারি বর্ষণের ফলে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ২৭ জন, চন্দনাইশে পাহাড় ধসে চারজন, রাউজানে পাহাড়ি ঢলে দুজন, বাঁশখালীতে টর্নেডোয় ঘরের দেয়ালধসে একজন, ফটিকছড়িতে একজন, চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর হালিশহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের দেয়ালধসে একজনসহ মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরে নিহত একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ ১৪ জনের জানাজা গতকাল মঙ্গলবার রাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, চন্দনাইশে দুজন, উত্তর হালিশহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়ালধসে পাঁচজন, বাঁশখালীতে দুজনসহ নয়জন আহত হয়েছেন এবং রাঙ্গুনিয়ায় নিখোঁজ রয়েছেন চারজন।
পাহাড় ধস শুরু হওয়ার পর মহানগর এবং উপজেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকা ও পাহাড়সংলগ্ন বসতিগুলো থেকে প্রায় ৫০০ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পাহাড়, দেয়াল ধসে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি চাল করে চাল দেওয়া হয়েছে। আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলার জন্য ১০ টন করে চাল, চন্দনাইশ উপজেলায় পাঁচ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার জন্য তিন টন করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত দুটি টিম চট্টগ্রাম মহানগরীর মতিঝর্ণা, একে খান ও বায়েজিদ এলাকাসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে দেড় শতাধিক পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘরে ছেড়ে বাইরে চলে আসে। এতে অনেকেই রমজানের সেহেরী খেতে পারেননি বলে জানা গেছে।