পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চাই নতুন প্রজন্মের সুশিক্ষা ও সুপ্রচার
আল আমিন ইমরান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশের একদশমাংশ আমাদের প্রিয় পার্বত্য চট্টগ্রাম । রূপে-বৈচিত্রে এই অঞ্চল সমগ্র বাংলাদেশকে করেছে গর্বিত । তাই এই অঞ্চলকে উপমা দিয়ে বলতে গেলে বলা চলে স্বাধীন বাংলার “সুন্দরী বধু” । এ অঞ্চলে বৃহত্তর বাঙ্গালি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি এই অঞ্চলে ১৩ টি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জনগোষ্ঠীর বসবাস । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার সংমিশ্রণ এই অঞ্চলকে করেছে অধিক বৈচিত্রময় । প্রাকৃতিক পরিবেশে শীতল ছোঁয়ায় এখানে প্রত্যেকটি শিশু বেড়ে ওঠে তার পূর্ণ মেধা-শক্তিকে বিকশিত করে । অর্থাৎ এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি শিশুই জাতির ভবিষ্যতে উজ্জল সম্ভাবনাময় নক্ষত্র হতে সক্ষম ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এত সুন্দর মনোরম পরিবেশ অথচ পুরো অঞ্চলটাই আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতায় ভরপুর । যেখানে প্রতিটি শিশু জন্মলগ্ন হতে প্রকৃতির কাছে মানবতার শিক্ষা গ্রহণ করবে, সেখানে শিশুকে শেখানো হচ্ছে জাতিগত বৈষম্য ও মানবতাবিরোধী কু-শিক্ষা । বিশেষ করে পার্বত্য উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রবণতা বিদ্যমান । যার কারণে দিন দিন এই অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মাঝে পারস্পরিক বন্ধুত্বভাব হ্রাস পাচ্ছে ।
একটি উপজাতি শিশুটি যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার চোঁখের সামনে ভাসে অস্ত্র । শিশুটিকে তার বাবা-মা রূপকথার গল্প না শুনিয়ে গল্প শোনান জাতিগত বৈষম্য, বাঙ্গালী বিদ্বেষী ও দেশদ্রোহীমূলক রটনার । যার দরুণ অনেক উপজাতি শিশু দেশপ্রেমিক চেতনা ভুলে হয়ে ওঠে বাঙ্গালীর প্রতি হিংস্র ও দেশদ্রোহী । স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত জীবনে এসে স্বভাবতই উপজাতীয়দের বাল্য শিক্ষা অনুযায়ী জাতীয় রাজনীতির চেয়ে আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতি ঝোঁক বেশি হয় । ছাত্র জীবনেই উপজাতি সন্তানটি আঞ্চলিক ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতারপূর্ণ শিক্ষা লাভ করে । অথচ সেখানে অধিকাংশ বাঙ্গালীরা নীরব ভূমিকা পালন করে ।
বিষয়টি রাঙ্গামাটি সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের নিত্য বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষন করলেই প্রমান মিলে । রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে বাঙ্গালি ও উপজাতি উভয়ের আঞ্চলিক সংগঠন কমিটি বিদ্যমান । প্রতি শনিবার কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কলেজে ক্যাম্পাসে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো সাপ্তাহিক মিছিল ও মিছিল পরবর্তী সমাবেশ করেন । ঐদিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদও জোরালোভাবে প্রত্যেক উপজাতি ছাত্রদের দিয়ে মিছিল করে । সেখানে বাঙ্গালী সংগঠন থাকলেও সাম্প্রদায়িক চেতনা রক্ষায় মিছিল বর্জন করছে উপজাতীয়রা । সাপ্তাহিক মিছিলের চিত্র এমন যে, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলের মিছিলে শতভাগ বাঙ্গালী ছাত্র । অপরদিকে পিসিপি’র মিছিলে শতভাগ উপজাতি ছাত্র । অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতে উপজাতীয় সন্তানদের উপস্থিতি শূন্য । এতে স্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে উপজাতিরা বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিকে সমর্থন করেনা । এটাই তাদের সাম্প্রদায়িক শিক্ষার আসল রূপ ।
কোন উপজাতি ছাত্রকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কেন জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন না? তখন কেমন যেন ছেলেটি নিঃশ্চুপ হয়ে যায় । এতেও বুঝতে বাকী থাকেনা যে, তাদের কোথায় একটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতা ও বাধা আছ । .সুতরাং উপজাতীয় ছেলেদের জোরপূর্বক সাম্প্রদায়িকতার পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ।
১৯৭৯ সালে সমতল হতে পার্বত্য এলাকায় কিছু বাঙ্গালীদের পূনর্বাসন করা হয় । সেই থেকে ১৯৯৭ এবং আজ অবধি সশস্ত্র হামলায় এই অঞ্চলে কয়েক হাজার প্রাণহানী ঘটেছে । নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে বলা যায়, বাঙ্গালী ও উপজাতি উভয় পক্ষই এই সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । আর স্বার্থ হাসিল করেছে সুবিধাভোগীরা । সুতরাং পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিা করতে হলে উভয় পক্ষকে সংঘাত ভুলে শান্তির পথে বাঁচতে হবে। জাতীয় চেতনায় উজ্জীবীত হতে হবে।
কেননা, বাংলাদেশ নামক মানচিত্রে বর্তমান পার্বত্য এলাকায় যার বয়স ১-৪০ বছর সবাই কিন্তু জন্মসূত্রে এই এলাকার সন্ত্রান । অথচ উপজাতিয় ভিক্তিক সংগঠন ও তাদের মদদদাতারা কী করছেন? উপজাতীয় নেতারা তাদের নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে পার্বত্য বাঙ্গালিরা সেটেলার, বহিরাগত, খুনী, লুটপাটকারী, ধর্ষক ইত্যাদি । যা নিতান্তই ভিত্তিহীন অপপ্রচার । যখন বাবার মুখে, নেতার মুখে উপজাতীয় নতুন প্রজন্ম এইসব মিথ্যাচার শুনছে তখন সেই ছেলে তখন সাম্প্রদায়িক হতে বাধ্য হচ্ছে ।
সুতরাং নব সভ্যতার এই যূগে আমরা চাইবো পাহাড়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শিক্ষা ও চেতনার । কখনোই কামনা করবো বিভেদ আঁকড়ে ধরে অন্তহীন সংঘাত ।
ধন্যবাদ পার্বত্য নিউজকে….
মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়ায় পার্বত্য নিউজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি….
Thanks for nice article….
সুন্দর লেখা।পার্বত্য বিষয়ক ভাল গবেষণা।
পার্বত্য বিষয়ক এই ধরণের লেখা নতুন প্রজন্মের কাছে থেকে নিয়মিত প্রত্যাশা করি। তাদের এ ধরণের সচেতনতা আমাকে বিস্মিত করেছে। আশা করি ইমরানের মতো আরো যারা লিখতে পারে তারাও এভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কলম ধরবে। ইমরান সাহেবকে ধন্যবাদ।