Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পাহাড়ে তুলা চাষে নতুন স্বপ্ন

Jamir Bandarban coton pic-1 3.3স্টাফ রিপোর্টার:
পাহাড়ে তুলা চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা। ইতোমধ্যে পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন। ক্ষতিকর তামাক চাষীরা সময়ের পরিবর্তনে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছেন। চাষীরা কৃষিপণ্যের পাশাপাশি তুলা চাষেও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার পাহাড়ে পাহাড়ে তুলাচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে,সআর্থিক ভাবে চাষীরাও লাভবান হচ্ছেন। ফলে তুলা চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সারাদেশে তুলা উৎপাদন হচ্ছে মাত্র দেড় লাখ বেল। চাহিদা মেটাতে অন্যদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এ কারণে তুলা উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।

পাহাড়ে পানির অভাবে শত শত হেক্টর জমি শুস্ক মৌসুমে পতিত পড়ে থাকে। তুলা চাষে পানি কম লাগায় এবং অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় সম্প্রতি বান্দরবানের পাহাড়ে তুলা চাষ বাড়ছে। এছাড়া তুলার সাথে সাথী ফসল চাষ করা যায় বলেও তুলার প্রতি চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে।

তুলা উন্নয়ন বিভাগের মতে, সরকারি মূল্যে তুলা বিভাগ চাষীদের কাছ থেকে প্রতি কেজি পাহাড়ি তুলা ৬০ টাকা এবং সমভূমি জাতের তুলা প্রতি কেজি ৬৩ টাকা হারে ক্রয় করে থাকে। সরকারি ভাবে তুলা ক্রয়ের পর অবশিষ্ট তুলা চাষীরা বাজারে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া তুলা উন্নয়ন বিভাগ এ তুলা থেকে বিজ সংগ্রহ করে পুনরায় চাষীদের মাঝে বীজ বিতরণ করে থাকে।

জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুর হোসেন চৌধুরী জানান, বান্দরবানে পাহাড়ী ও সমভূমি জাতের তুলা চাষ করা হয়। ১৫৫০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে জেলার ৭ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্য ১৯০ হেক্টর জমিতে সমভূমি বা আমেরিকান জাতের উচ্চফলনশীল এবং পাহাড়ী বা সাধারণ জাতের ৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি তুলা ১ হাজার ২০০ মেট্রিকটন এবং সমভূমি বা উচ্চফলনশীল তুলা ৩৫০ মেট্রিকটন  উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করছেন। আগামী অর্থবছর আরও ২ হাজার হেক্টর জমি তুলাচাষের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।

একাধিক তুলাচাষী জানান, তুলা চাষ অত্যন্ত লাভজনক তাই শুস্ক মৌসুমে রবিশষ্যর পাশাপাশি বাড়তি লাভের আশায় তুলার আবাদ করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক কৃষকই পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে দ্রুত ফিরে আসবে এবং তুলাচাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

চাষীরা আরও জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলাচাষে চাষীদের চাহিদা মত কারিগরি সহযোগিতা ও বিনামূল্যে উন্নত জাতের তুলা বীজ বিতরণ করে থাকে।

জেলা সদরের শ্যারণ পাড়ার লগরান ম্রো জানান, আগে তারা পাহাড়ে জুম চাষে অন্যান্য ফসলের সাথে জুমের ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ি তুলা চাষ করতেন। সম্প্রতি তারা পাহাড়ের ঢালে সমভূমি জাতের তুলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। প্রতি একরে জমিতে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৮ মণেরও বেশি ফলন পেয়েছেন, যার বাজার মূল্য ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তাছাড়া তুলা গাছ বিক্রি করে বাড়তি টাকাও আয় করা হয়।

তুলাচাষী মহন্দ্র তঞ্চগ্যা বলেন, পাহাড়ী তুলার চেয়ে সমভূমি জাতের তুলা চাষ বেশি লাভজনক। সমভূমি জাতের তুলার গাছগুলো ছোট, দেখতে সুন্দর এবং তুলার দামও ভাল পাওয়া যায়। বাজারে এই তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য বান্দরবানে সমভূমি জাতের তুলার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

রোয়াংছড়ি উপজেলার তুলাচাষী ম্যাচিংনু মারমা ও সাচিং অং মারমা বলন, তুলার বিজ অপসারণ করে চরকায় সুতা তৈরি করে পরিধানের রকমারী পোষাক বুনুন করা হয়। তৈরি করা হয় শীতবস্ত্র ও চাদর। পাহাড়ি ভূমিতে সমভূমি বা উচ্চফলনশীল তুলার আবাদ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মংসানু মার্মা জানান, পাহাড়ের পরিবেশ ও আবহাওয়া সমভূমি জাতের তুলা চাষের অনুকূলে থাকায় এর উৎপাদন অন্য জাতের থেকে অনেক বেশি। কম খরচে পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ খুবই লাভজনক। এছাড়া সমভূমি জাতের তুলায় পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলন বেশি পাওয়া যায়।

তিনি জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোনের অধীনে জেলায় উপজেলায় ৬ হেক্টর জমিতে ৪৫টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। এর মাধ্যমে অন্য চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার আটশ ২০ হেক্টর পাহাড়ী জমিতে এবং একশ ৮৫ হেক্টর সমভূমিতে।

তিনি আরও বলেন, বান্দরবান জেলায় ৪ হাজার ৩শ ৪৩ জন চাষী তুলা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তুলা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর ধারণা দেওয়া হয়। তুলা চাষ কর্মসূচির আওতায় চাষীদের বিনামূল্যে বীজ, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে জেলার পতিত এবং অনাবাদী জমিগুলো তুলা চাষের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন