পাহাড়ে তামাকের পরিবর্তে স্ট্রবেরি চাষ: যৌথভাবে কাজ করছে পুলিশ ও কৃষি বিভাগ

Strowbery

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
বর্তমান সময়ে তামাক কোম্পানীদের লোভনীয় অপারে আকৃষ্ট হয়ে পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি পাহাড়ের উর্বর ভূমিতে বিপুল পরিমাণে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। এমতাবস্থায় উৎকন্ঠিত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বাংলাদেশ পুলিশের উদযোগে স্ট্রবেরি চাষ পার্বত্য অর্থনীতির নতুন দ্বার উম্মোচনের লক্ষ্যে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ষ্ট্রবেরী চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কৃষকদের তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে পাহাড়ে ষ্ট্রবেরী চাষে উৎসাহিত করতে কাজ শুরু করেছে। পাহাড়ে ষ্ট্রবেরী চাষের পরিধি প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে রাঙামাটি জেলা পুলিশ বিভাগ ও কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তর একসাথে কাজও শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে রাঙ্গামাটি শহরের পুলিশ লাইন সুখী নীলগঞ্জের বিস্তির্ন এলাকায় জেলা পুলিশের তত্ত¡াবধানে সুস্বাদু ষ্ট্রবেরী ফলের পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা আসায় এবছর এর পরিধি বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ বিভাগ ও কৃষি অধিদপ্তর। এবছরও ষ্ট্রবেরী চাষের পরীক্ষামূলক চাষে  সফলতার পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের নিজস্ব জমিতে একটি ষ্ট্রবেরী চাষের প্রদর্শনী মাঠ প্রস্তুত করেছে কৃষি বিভাগ। গতবছর রাঙ্গামাটির জেলা পুলিশ বিভাগের নিজস্ব পুলিশ লাইন সুখী-নীলগঞ্জ এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ষ্ট্রবেরী চাষের উদ্যোগ নেয় রাঙ্গামাটি জেলা কৃষিস¤প্রসারন অধিদপ্তর এবং রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ বিভাগ। ষ্ট্রবেরীর পরীক্ষামূলক চাষের সফলতায় এবার তার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এখন রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইন থেকে ষ্ট্রবেরীর চারাও সরবরাহ করা হচ্ছে। ষ্ট্রবেরীর চাষে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কঠোর পরিশ্রম করছেন রাঙ্গামাটির পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জানাগেছে, ষ্ট্রবেরীর বাজার মূল্যে ভালো হওয়ায় এবং পাহাড়ে তামাক চাষ কমাতে ষ্ট্রবেরী চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলা এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানাগেছে কৃষি বিভাগ সূত্রে।
রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ হারুনুর রশীদ ভুইয়া’র সাথে আলাপকালে জানাগেছে, গোটা বাংলাদেশের মধ্যে পার্বত্য রাঙামাটি জেলার মাটি ষ্ট্রবেরি চাষের জন্য অত্যন্ত উপোযোগি। তাই আমি নিজেই আগ্রহী হয়ে পুলিশ বিভাগের অনুরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫০ গাছের চারা দিয়ে ষ্ট্রবেরীর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করলেও এবার তা বাড়ানো হয়েছে। আশার কথা হলো এবারে এখানে আশার চেয়েও ভালো ফলন হয়েছে। আর  এখানে এই বাগানা দেখে স্থানীয়ভাবে ১৫ জন বাসিন্দা এখানে ষ্ট্রবেরি চাষে এগিয়ে এসেছে। তারা এখন নিয়মিত আমার সাথে যোগাযোগ করছে পরামর্শ নিচ্ছে। এছাড়াও স্ট্রবেরী চাষে পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বেশ ক’জন রাঙ্গামাটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমন তথ্যও জানালেন তিনি।
ষ্ট্রবেরীর পাশাপাশি পুলিশের নিজস্ব প্রায় ৩৩ একর জমিতে গড়ে উঠা বিভিন্ন  বাগানগুলো মনিটরিং করছেন পুলিশ বিভাগের সিনিয়র অফিসাররা। পুলিশের আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাহাড়ে কৃষি চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাঙ্গামাটি পুলিশ বিভাগ দেখছেন সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুজ্জামান জানিয়েছেন, আমরা গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এখানে ষ্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছি। এবছর আমাদের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কতৃপক্ষ। তাই আমরা আমাদের লাগানো চারা থেকে আরো চারা তৈরি করে বাগানের পরিধি বাড়িয়েছি। ফলে এবার আমাদের এখানে যথেষ্ট ফলন হয়েছে। আর কৃষি বিভাগ আমাদের বাগানটিকে একটি প্রদর্শনী প্লট হিসেবে এখানে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। তাই বর্তমানে এই বাগানে সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আশেপাশের অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে এবং জানতে চাচ্ছে কিভাবে পাহাড়ি জমিতে এই মুল্যবান অর্থকরি ফলের চাষ করা যায়। তিনি জানান, আমরাও চাই পাহাড়ে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ পতিত জমিতে এই ষ্ট্রবেরির মতো অর্থকরি ফলের চাষ করে এখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন ধারার গতি পরিবর্তন হোক।
পার্বত্যাঞ্চলের মাটি অর্থকরি ফল ষ্ট্রবেরি চাষের জন্য যথোপুযোগি উলে­খ করে রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নরেশ চন্দ্র বারই জানিয়েছেন, পাহাড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে তামাকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য এবং হতদরিদ্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠির জীবনমানে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই এলাকায় তামাকের পরিবর্তে ষ্ট্রবেরি চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি জেলার চারটি উপজেলাকে টার্গেট করে বিশেষ করে যে উপজেলা গুলোয় তামাকের চাষ হয় সেগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে ষ্ট্রবেরি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তাই তিনি কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সকলকে পাহাড়ে অর্থকরি ফল ষ্ট্রবেরি চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে রাঙামাটি পুলিশের মালিকানাধীন সুখী নীল গঞ্জ এলাকায় কৃষি বিভাগ ও পুলিশের যৌথ অংশীদারিত্বে গড়ে তোলা ষ্ট্রবেরি বাগান পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠির হতদরিদ্র জীবন ধারার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানী গুলো পাতা ফাদেঁ পা দিয়েছে কয়েক হাজার পাহাড়ি-বাঙ্গালী দরিদ্র কৃষক-কৃষাণী। ইতিমধ্যে পার্বত্যাঞ্চলে তামাকের ভয়াবহ বিস্তারও ঘটেছে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে রাঙামাটির কৃষি বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের ষ্ট্রবেরি চাষ বৃদ্ধি ও দরিদ্র চাষীদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি করে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ পতিত জমিতে অর্থকরি ফল ষ্ট্রবেরির চাষাবাদ পার্বত্য অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছে পার্বত্যাঞ্চলের সচেতন মহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন